খুলনা ব্যুরো : খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল ও কেসিসি উইমেন্স কলেজের প্রতি সেমিস্টারেই অযৌক্তিকভাবে চার্জ বৃদ্ধি করার অভিযোগ উঠেছে। সেমিস্টার যেতে না যেতেই নানা অজুহাতে বাড়ানো অর্থ পরিশোধের সামর্থ্যহীনতায় বিপাকে পড়ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এসবের প্রতিবাদ করলে ছাত্রীদের সেমিস্টার পরীক্ষায় অকৃতকার্য করিয়ে দেয়াসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের। অধ্যক্ষ বলছেন, এ ধরনের অভিযোগ জানা নেই তার।
উল্লেখ্য, খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী রোডে কেসিসি পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটির অনার্স পর্যায়ের ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন ডিপার্টমেন্ট, চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি রিলেশন ডিপার্টমেন্ট এবং ডিপার্টমেন্ট অব ফ্যাশন ডিজাইনের এই চারটি অনার্সের বিষয়ে ১৮০টি আসন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিইচ্ছুকদের আগামী ৩, ৪ ও ৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনার্স কোর্সের ১ম সেমিস্টার ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন একজন ছাত্রী। পরের বছর তার চাচাতো বোনকে ভর্তি করাতে লাগে ১৬ হাজার ৫০ টাকা। সরকারি বেতন ও স্কেলের অজুহাতে খরচ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ১৮ হাজার ২৫০ টাকা সেশন ও বকেয়া বেতনের অজুহাতে বাড়াচ্ছে। খুলনার কোনো প্রতিষ্ঠানেই প্রতি সেমিস্টারে এই হারে চার্জ বৃদ্ধি করা হয় না বলে দাবি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের।
কলেজ কর্তৃপক্ষ সেমিস্টারে এক বছরের বা মাসের বকেয়া টাকা নেন। যাতে আরো হয়রানির শিকার হন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৬ ব্যাচে বকেয়া রেজিস্ট্রেশন ফি নেয়া হয় ১৬ সালের, ১৫ ব্যাচে ১৫ সালের, ১৪ ব্যাচে ১৪ ও ১৫ সালের ১৩ ব্যাচে ১৪ ও ১৫ সালের ও ১২ ব্যাচে ১৩, ১৪ ও ১৫ সালের ৪ মাসের বকেয়া দাবি করছে। যেটা পুরোটাই ভিত্তিহীন। কারণ এক বছরে দু’টি সেমিস্টার; প্রতি সেমিস্টারে ৬ মাসের বেতন অগ্রিম দিয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
একাধিক ছাত্রীর অভিযোগ, বছরের পর বছর চলে যায় কিন্তু কোনো সেমিস্টারের গ্রেড শিট তারা হাতে পান না। এমনকি প্রাপ্ত নম্বরও জানতে পারেন না। যাতে পড়াশোনার অগ্রগতি হচ্ছে না তাদের। ফলে শেষ সেমিস্টার হতে গেলেও কোনো ফলাফল বা অগ্রগতিপত্র হাতে পান না শিক্ষার্থীরা। কোনো বছরের একটি সেমিস্টারের কোন সাবজেক্টে রিটেক আছে সেটাও জানা যায় পরের বছরের সেমিস্টার। আর বছরখানেক পর জানা যায় কোনো সেমিস্টারের গড় পয়েন্ট।
ছাত্রীদের অভিযোগ, এগুলোর বিরুদ্ধে বলতে গেলেই রোল নম্বর চেয়ে পরোক্ষভাবে অশালীন আচরণ করা হয়। রিটেকের ভয় দেখানো হয়। ভর্তির প্রতিশ্রæতি দেয়া সুবিধাগুলো ছাত্রীদের ভর্তির পর আর দেয়া হয় না বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। শুধু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্রী ভর্তির আগ্রহ বেশি।
একাধিক অভিভাবকের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ে ফেলা হচ্ছে। মেয়েদের ভবিষ্যতের চিন্তায় মুখ বুজে সব সহ্য করতে হচ্ছে। কোনোভাবে যদি জানতে পারে আমার মেয়ে ওসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, তবে তো তাকে ফেল করিয়েও দিতে পারেন। শুধু তাই নয়; শিক্ষক-শিক্ষিকারা কথায় কথায় ছাত্রীদের সাথে অশালীন ব্যবহার করে থাকেন। ঝাড়–দার, ক্লার্ক, পিয়ন সবার ব্যবহার একই রকম বলে মেয়েরা প্রায়ই নালিশ করছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: তৌহিদুজ্জামান বলেন, আমি নতুন এসেছি। সব বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানতেও পারিনি। খোঁজখবর নিয়ে দেখিÑ ছাত্রীদের অভিযোগ সত্য হলে অবশ্যই সৃষ্ট সমস্যার সমাধান এবং অসদাচরণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল ও কেসিসি উইমেন্স কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং খুলনা সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিছুর রহমান বিশ্বাস বলেন, পূর্বে কখনোই এ ধরনের অভিযোগ শুনিনি। অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কলেজটি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অত্যন্ত সুনামের সাথে পরিচালনা করছে কেসিসি। ভবিষ্যতেও সুনাম অক্ষুণœ রাখতে কাজ করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন