শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশে বাম্পার ফলন কোটিপতির

করোনার টিকা নিয়ে ব্যবসা করছে সরকার সংসদে রুমিন ফারহানা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, লুটপাটের এক উর্ব্বর ভূমি এখন বাংলাদেশ। গত এক যুগে জানা অজানা লুটের ফলে বাংলাদেশে কোটি পতির বাম্পার ফলন হয়েছে। লুটের এক টেক্সবুক উদাহরণ হলো বাংলাদেশ। লুটের টাকার একটা বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে তৈরি হয় বেগমপাড়া কিংবা সেকেন্ড হোম।
গতকাল জাতীয় সংসদে প্রেসিডেন্ট ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

রুমিন ফারহানা বলেন, একটি বালিশ ৬ হাজার টাকা, একটি বঁটি ১০ হাজার টাকা, কাঁটাচামচ ১ হাজার টাকা, দুধে পানি মাপার যন্ত্র ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা, বর্জ্য রাখার পাত্রের দাম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তালা ৫ হাজার ৫৫০ টাকা, বালতি ১ হাজার ৮৯০ টাকা, একটি মেডিকেল বই ৮৫ হাজার টাকা, পর্দা ৩৭ লাখ টাকা, টেলিফোন ১৫ লাখ টাকা, লিফট ২ কোটি টাকা, রক্তচাপ মাপার মেশিন ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা, চেয়ার ৬ লাখ টাকা এখন অতি স্বাভাবিক বিষয়। প্রকল্পের কেনাকাটায় লুটপাটের সঙ্গে আছে পুকুর খনন, লিফট কিনতে, গরুর কৃত্রিম প্রজনন, ট্যাংরা-পাবদা মাছ চাষ, তেলজাতীয় ফসল এবং মৌ চাষ, নলক‚প খনন শেখার মতো উদ্ভট যুক্তিতে বিদেশ সফর।

বিএনপির এই এমপি বলেন, গত এক যুগের জানা-অজানা লুটের ফল হয়েছে বাংলাদেশে কোটিপতির বাম্পার ফলন। ২০০৯ সালের ২১ হাজার ৪৯২ জন কোটিপতি ২০২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৪৮৮ জনে। ব্যাংকের এই হিসাবের বাইরে আছে আরও বহু কোটিপতি। বিশ্বে ২৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক হিসেবে অতি ধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ প্রথম আর ধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ তৃতীয়, কিন্তু বিশ্বে দরিদ্র মানুষের সংখ্যায় বাংলাদেশ পঞ্চম।

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, সরকারের এ যাবৎকালের সকল ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে গেছে করোনাকালীন ব্যর্থতা। শুরু থেকে করোনা পরীক্ষা, মাস্ক, পিপিই, হাসপাতালের সিট, অক্সিজেন সরবারহ, আইসিইউ, প্রণোদনাসহ সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় কঠিন সময়কে কঠিনতর করেছে। পৃথিবীতে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যেখানে করোনার নকল সার্টিফিকেটও বিক্রি হয়েছে। এ সব কিছুর পর এখন শুরু হয়েছে টিকা নিয়ে ব্যবসা। সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে সরাসরি চুক্তি না করে বেক্সিমকোর সাথে চুক্তি করার কারণে বাংলাদেশকে ভারতের তুলনায় ৪৭ শতাংশ বেশি দামে করোনার টিকা কিনতে হচ্ছে। তাতে ৩২৫ কোটি টাকা যাবে কোম্পানির পকেটে।

রুমিন ফারহানা বলেন, প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে অবকাঠামোগত উন্নয়নকে যত গুরুত্ব দিয়ে তুলে এনেছেন, ততটাই অবহেলিত থেকেছে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বধীনতা, সর্বজনীন মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সাধারণ মানুষের জীবনমান, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, লুটপাট, সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেঙে পড়া ইত্যাদি

তিনি বলেন, পুরো ভাষণ মূলত কিছু ডেটার সমাহার। যেখানে জিডিপি থেকে গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় থেকে মাতৃমৃত্যু কিছুই বাদ যায়নি। অথচ বাংলাদেশের ডেটার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই কঠিন প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বব্যাংক।

রুমিন ফারহানা বলেন, দেশের বর্তমানে ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর করোনার আগে করা জরিপে দেখা যায় শহরের ৮ শতাংশ দরিদ্র পরিবার না খেয়ে ঘুমাতে যায়, ১২ শতাংশ দরিদ্র পরিবারের খাবার নাই সারাদিনে একবেলাও খেতে পারে না ৩ শতাংশ দরিদ্র পরিবার। ঢাকাতে জনসংখ্যা ২ কোটি হলে শুধু এই শহরের অন্তত ৬ লাখ মানুষ দিনে একবেলাও খেতে পারে না।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করে রুমিন ফারহানা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তথাকথিত অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা কেন মিয়ানমারের পক্ষে। দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দর কষাকষির ক্ষমতা কেন একেবারে শূন্য।

তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশন তথ্য কমিশনকে সরকার জনগণের করের টাকায় দিয়ে পোষা হচ্ছে কি এসএমএস দিয়ে মানুষকে সচেতন করা আর দুর্নীতি দমন কমিশনকে কি পোষা হচ্ছে বিরোধী দলকে হয়রানি আর সরকারি দলের অপরাধীদের সততার সার্টিফিকেট দিতে? ঢাকার দুই মেয়র পরস্পরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার পরেও কেন ফৌজদারি ব্যবস্থা না নিয়ে মত পার্থক্য বলে চাপা দেওয়া হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন