শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিবাহিত বন্দির সঙ্গে স্ত্রী-স্বামীর সময় কাটানোর সুযোগ থাকা উচিত

ফেসবুক পোস্টে শায়খ আহমাদুল্লাহ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

সম্প্রতি (হলমার্ক ক্যালেঙ্কারির অন্যতম হোতা তুষারের) ঘুষের বিনিময়ে কারাগারে নারীসঙ্গ নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। ইতোমধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া শুরু হয়েছে। অনৈতিক লেনদেনের বিনিময়ে প্রচলিত আইন অমান্য করে নারীসঙ্গ নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে তা যথার্থ। একজন বন্দির এ সংশ্লিষ্ট অধিকার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও দুটি প্রস্তাবনা ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। ইনকিলাব পাঠকদের উদ্দেশে সেই পোস্ট তুলে ধরা হ’লঃ

‘বন্দি অভিযুক্ত কিংবা দোষী সাব্যস্ত যা-ই হন না কেন, মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে থেকে তাকে বঞ্চিত করা যাবে না। এ নিয়ে কারো দ্বিমত নাই। বিবাহিত বন্দির নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতন রোধ এবং মানসিক বিকাশের প্রয়োজনে, স্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে, সংশ্লিষ্ট জেলকোড ও শর্তাবলী অনুসরণ করে, নির্ধারিত বিরতিতে স্ত্রীর সাথে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করেন বেশিরভাগ ইসলামিক স্কলার। এর অন্যতম একটি কারণ হলো, স্বামীর অপরাধের কারণে স্ত্রীকে জৈবিক প্রয়োজন মেটানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ন্যয়সঙ্গত হতে পারে না।

ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা, মানব ইতিহাসের অন্যতম ন্যয়বিচারক ও আদর্শ শাসক উমর (রা.) বন্দিদেরকে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সাক্ষাতের সুযোগ দিতেন। ইসলামের ইতিহাসের বেশিরভাগ ইমাম ও স্কলার, যেমন ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম শাফেয়ী (রাহিমাহুমুল্লাহ) এর বর্ণনা অনুযায়ী বন্দিকে নির্দিষ্ট শর্ত ও জেলকোড এবং স্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া উচিত। বন্দি যদি নারী হন তবে সেক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

সউদী আরবসহ পৃথিবীর বহু দেশে এ নিয়ম পুরোপুরী প্রচলিত আছে। কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, স্পেনসহ অনেক দেশে এ নিয়ম আছে। ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানার হাইকোর্টের ২০১৫ সালের একটি রায়ের পর থেকে এ নিয়ম চালু আছে। তুরস্কে কোনো কয়েদীর সুন্দর আচরণ, শৃংখলা ও সার্বিকভাবে ভালো পারফরমেন্স হলে তাদেরকে এ সুযোগ দেয়া হয়। এতে বন্দির মানসিক বিকাশ ও চিন্তাগত সুস্থতার পথ সুগম হয় এবং চারিত্রিক স্খলনের পথ রুদ্ধ হয়। শিকাগোর নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ক্রিমিনাল ল এন্ড ক্রিমিনলজি বিষয়ক জার্নালে ১৯৫৮ সালে রুথ শনলে ক্যাভেন এবং ইউজেন এস জেমান-এর যৌথ আর্টিক্যাল Marital Relationship of Prisoner of 28 Countries--এ কয়েদিদের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার গুরুত্ব উপস্থাপন করে এ বিষয়ে উপরোক্ত তথ্য দিয়েছেন।

কেউ বলতে পারেন, জেলে এ সুবিধা থাকলে আর বন্দিত্বের মানে কী থাকে? এর উত্তর হলো, বন্দিত্ব একটি সাজা। একজন বন্দির সাজাভোগের পাশাপাশি মৌলিক মানবিক প্রয়োজনগুলো পূরণের সুযোগ যেমন দোষনীয় নয় এটিও দোষের নয়। বিশেষ করে এর সঙ্গে যেহেতু অন্যের অধিকার সংশ্লিষ্ট। জেলে সন্তানাদি ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ যেমন ন্যায্য এটিও তেমন ন্যায্য।

সেই সাথে বন্দিদের মানসিক ও আদর্শিক পরিচর্যার প্রয়োজনে প্রতিটি জেলে ধর্মীয় আলোচনা ও মোটিভেশনার স্পীচের ব্যবস্থা থাকা উচিত। কারণ বন্দি জীবনের অবসরে মানুষ সবচেয়ে বেশি চিন্তা-ভাবনা ও আত্মশুদ্ধির সুযোগ পায়। সউদী আরবের প্রতিটি জেলে ‘শুঊনুদ্দীনিয়্যাহ’ বা ধর্মীয় অ্যাফেয়ার্স বিভাগ আছে। এ বিভাগ কয়েদিদেরকে প্রাত্যহিক, সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বাৎসরিক আলোচনা ও ধর্মীয় বই পুস্তক বিতরণসহ নানা ধরনের আয়োজন করে থাকে।

আমি যখন সউদী আরবে ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রীচার ও ট্রান্সলেটর হিসেবে কর্মরত ছিলাম তখন সেখানকার বিভিন্ন জেলে বাংলাদেশি কয়েদীদেরকে সপ্তাহে নূ্যূনতম একবার ধর্মীয় আলোচনা ও কাউন্সেলিং করা আমার দায়িত্বের মধ্যে ছিল। এর বিস্ময়কর প্রভাব আমি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি। ইংল্যান্ডসহ অনেক অমুসলিম প্রধান দেশেও এ নিয়ম আছে। বাংলাদেশে এ নিয়ম যথাযথভাবে করা হলে বন্দিদের মানসিক বিকাশ ও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পথ সুগম হবে এবং দেশে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে ইন শা আল্লাহ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
লেহাজ উদ্দিন ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৫১ এএম says : 0
জি, হা, এই ধরনের আইন করা হোক ইসলামের আইন অনুযায়ী চল্লে অবশ্যই, অবশ্যই, উপকার আছে, জাজাকাল্লাহ
Total Reply(1)
asad ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:৪৭ এএম says : 0
বাংলাদেশ আসামিরা জেল খেটে বাড়িতে এলে বলে আগে চুরির দায়ে জেলে গিয়েছিলাম এখন ডাকাতি করবো জেলে বন্দির অবসরে ধর্মীয় বয়ান নৈতিকতা শিকালে সবচাইতে বেশি কাজে আসবে আমার মনে হয় ইনশাআল্লাহ বিষয়গুলি উর্ধতন কর্মকর্তাকে একটু বিবেক খাটিয়ে সুবেবচনা করা উচিত
Moshiur Moshi ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৬ এএম says : 0
পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন সুবিধা আছে। এই বিষয় নিয়ে অনেক তথ্য চিত্রও আছে।
Total Reply(0)
Mustafa Kamal ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৬ এএম says : 0
যৌক্তিক, একজন অপরাধী তার সাজা খাটছে জেলে, তার স্ত্রী থাকলে সে(স্ত্রী) কেন অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে?
Total Reply(0)
JD Khan ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৮ এএম says : 5
তাহলে এটাকে জেলখানা না বলে আবাসিক হোটেল বলা উচিত
Total Reply(0)
Muktar Hossain ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৯ এএম says : 0
অবশ্যই সুযোগ দেয়া উচিত
Total Reply(0)
Salim Sarour ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৪০ এএম says : 0
১০০০% সহমত, মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে
Total Reply(0)
Leo Prodip Majhi ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০০ এএম says : 0
আমার মনে হয় আইন বিভাগ ও সংসদ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন।
Total Reply(0)
HM Nizam ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:৫৫ এএম says : 0
সহমত
Total Reply(0)
Nannu chowhan ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:২২ এএম says : 0
This respacted alem has given very good & appropriate suggestion,I think authority should connsider this matter as soon ss possible...
Total Reply(0)
Rashed ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২৯ পিএম says : 0
সম্পুর্ন একমত।
Total Reply(0)
ABDUR RAHMAN ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৫ এএম says : 0
আগে জানতাম না।কিন্তু শায়েখের কাছ থেকে জানলাম এবং চিন্তা করলাম ।আসলে বিষয়টা মানবিক ও বটে।
Total Reply(0)
ABDUR RAHMAN ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৫ এএম says : 0
আগে জানতাম না।কিন্তু শায়েখের কাছ থেকে জানলাম এবং চিন্তা করলাম ।আসলে বিষয়টা মানবিক ও বটে।
Total Reply(0)
ABDUR RAHMAN ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৫ এএম says : 0
আগে জানতাম না।কিন্তু শায়েখের কাছ থেকে জানলাম এবং চিন্তা করলাম ।আসলে বিষয়টা মানবিক ও বটে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন