মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

জননিরাপত্তা ছাড়া উন্নয়ন অর্থহীন

| প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা জিডিপি প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুখে খই ফুটলেও মানুষের জানমালের নিরাপত্তার বিষয়গুলো ক্রমেই উপেক্ষিত হয়ে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সদস্য সংখ্যা বাড়ছে, তাদের সুযোগ সুবিধা, ক্ষমতা ও কর্মপরিধি বাড়ার সাথে সাথে বাজেটের আকার বাড়লেও তাদের মূল কাজ জনগণের নিরাপত্তা বিধানের দায়বদ্ধতা যেন ক্রমে শিথিল হয়ে পড়ছে। খোদ রাজধানী শহরেই মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারছেনা। প্রায় প্রতিদিন, প্রতিরাতে ছিনতাইকারী, অপহরণকারী, মলমপার্টি-অজ্ঞান পার্টির শিকার হয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে মানুষ। শুধু টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়েই এরা ক্ষান্ত হচ্ছে না, চাকু চালিয়ে হত্যা করতেও পিছপা হচ্ছে না। এভাবে ঢাকার রাস্তায় ছিনতাই-রাহাজানিতে সর্বস্ব হারানোর সাথে সাথে প্রাণও হারাচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষ। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ সপ্তাহে হাইকোর্ট মাজারের সামনের রাস্তায় ছিনতাইকারির ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে রিকশারোহী ডিস ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলামের। গতমাসে বিমানবন্দর সড়কে ছিনতাইকারিদের ছুরিকাঘাতে একজন সব্জি ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। ডিস ব্যবসায়ী হামিদুলের মৃত্যুর পর ঢাকার ছিনতাইকারী চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। হামিদুল হত্যার সাথে এদের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার তথ্য দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

রাস্তায় যানজট, পানিবদ্ধতা, ময়লাজটসহ নানাবিধ নাগরিক সংকট নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-এমপিদের নানা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের হার খুবই হতাশাজনক। ইতিমধ্যে ঢাকার উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চললেও নাগরিক দুর্ভোগ লাঘব, বিশৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা এবং জননিরাপত্তার ইস্যুগুলোতে তেমন কোনো উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে না। দিনে দুপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় ছিনতাই-ডাকাতির খবর মাঝে মধ্যেই প্রকাশিত হচ্ছে। তবে রাতের ঢাকার ভয়ঙ্কর নিরাপত্তাহীনতার চিত্র এখন আতঙ্কজনক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। প্রায় প্রতিরাতেই শহরের বিভিন্ন স্থানে পথচারি ও যানবাহনে যাতায়াতকারী ব্যক্তিরা ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা যেন এখন অতি স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুক্তভোগী অনেকে পুলিশকে রিপোর্ট করতে বা অভিযোগ করতেও উৎসাহী নয়। কেউ কেউ ছিনতাইকারিদের হাতে ছুরিকাঘাতে নিহত হলেই তা কেবল সংবাদ হয়। এ কারণে রাতের ঢাকায় সংঘটিত সব অপরাধের চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে একই স্থানে ছিনতাই-ডাকাতির কবলে পড়ছে মানুষ। সে তুলনায় তাদের গ্রেফতার হওয়ার সংখ্যা খুবই নগণ্য।

ঢাকা শহরে অর্ধশতাধিক থানা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন শাখা ও গোয়েন্দা বিভাগের নানা ইনস্টলমেন্ট সক্রিয় আছে। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধানের জন্য বর্তমানে পুলিশ বাহিনীতে দুই লক্ষাধিক সদস্য সারাদেশে সক্রিয় আছে। রাজধানী শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডেপ্লয়মেন্ট দেশের যে কোনো স্থান থেকে অনেক বেশি। কিন্তু রাজধানী শহরে মানুষের নিরাপত্তাহীনতার বাস্তব চিত্র দেখলে পুলিশের ব্যর্থতার চিত্রই বেরিয়ে আসে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পুরো শহরকে সিসি ক্যামেরাসহ ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি ও নিরাপত্তা জালে ঘিরে ফেলা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শহরের অপরাধপ্রবণ স্পটগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর নেটওয়ার্ক সক্রিয় রাখা খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। তাহলে বিমানবন্দর সড়ক বা হাইকোর্ট মাজার এলাকার মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় তৎপরতা দীর্ঘদিন ধরে কিভাবে চলে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার অর্থনৈতিকভাবে এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষকে ন্যুনতম নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকারের সে সব উন্নয়নের অর্জনগুলো ম্লান, অপাঙতেয়- অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, নির্বিঘ্ন চলাচল এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা ছাড়া শুধু অবকাঠামো ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির উন্নয়ন মূল্যহীন। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সততা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা প্রশ্নাতীত। একইভাবে পুলিশ প্রধান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মধ্যেও অনেক দক্ষ, অভিজ্ঞ ও পেশাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। এক শ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের অপরাধপ্রবণতা, পেশাগত অসাধুতা ও শৈথিল্যের কারণে সমগ্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেই শুধু নয়, সরকারকেও জননিরাপত্তায় ব্যর্থতার দায় বহন করতে হচ্ছে। নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মেগা প্রকল্পগুলো যেমন মানুষের মনে আশার সঞ্চার করছে, একইভাবে ক্রমবর্ধমান ছিনতাই-ডাকাতি, নিরাপত্তাহীনতার কারণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বাড়ছে। ছিনতাই-ডাকাতি, চাঁদাবাজ-মাস্তান চক্র পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এদের ধরে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশে অপরাধীচক্রের হাত থেকে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack+Ali ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১১:৫২ এএম says : 0
Only Qur'an is the answer for all the problem we are facing on a daily basis. Qur'aan teaches us absolute morality.. without morality a human become Dumb, Deft and Blind as such he become worse than lowly animal pig, pig also worship Allah 100%.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন