জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থার হিসাবে চরমপন্থী শ্রেণীবদ্ধ কমপ্যাক্ট ম্যাগাজিনের সম্পাদক জার্জেন এলসাসের ক্যাপিটলের দাঙ্গাকে ‘একটি সম্মানজনক প্রচেষ্টা’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন যা অসম্পূর্ণ পরিকল্পনার কারণে ব্যর্থ হয়েছে। দাঙ্গার পরদিন তিনি লিখেছিলেন, ‘বিপ্লবের সূচনা হিসেবে বিক্ষোভকারীদের মাধ্যমে সংসদে ঝড় তোলা যেতে পারে।
তবে বিপ্লব কেবল তখনই সফল হতে পারে যদি তা সংগঠিত হয়।’ এলসাসের লিখেছিলেন, ‘এটি জটিল সময়, যখন আপনি সরকার উৎখাত করতে চান, তখন আপনার একটি পরিকল্পনা এবং এক ধরনের সাধারণ কর্মী দরকার হয়।’ ৬ জানুয়ারীর চরমপন্থী আন্দোলনকারীদের সংহতি ইউরোপের জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘জেনারেশন আইডেন্টিটি’ আন্দোলনের অস্ট্রিয়ান প্রধান মার্টিন সেলনারকেও উজ্জীবিত করেছে, যিনি অহিংসার প্রচার করেন। তবে ‘মহাপ্রতিস্থাপন’ এর মতো ধারণাগুলি জনপ্রিয় করে তুলেছেন। ক্যাপিটল ঝড়ের পর সেলনার লিখেছিলেন, ‘দেশপ্রেমিকদের শিবিরে ক্রোধ, চাপ এবং বিপ্লবী মেজাজ নীতিগতভাবে একটি ইতিবাচক সম্ভাবনা। যদিও এটি ক্যাপিটলে ঝড়ের আদলে লক্ষ্যহীনভাবে ফুঁসে উঠেছে, কিছু মেমেস এবং ভাইরাল ভিডিও ছাড়া আর কিছু নেই, আরো কার্যকর আন্দোলনের জন্য এই মেজাজ কাজে লাগিয়ে কেউ একটি সংগঠিত এবং পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে পারে।’
সেলনার, যিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, ট্রাম্প বিরোধী পক্ষে আরো বেশি শাণিত হয়ে উঠবেন, যা ইউরোপ এবং আমেরিকা জুড়ে কর্মীদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সংযোগের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বর্ণবাদী ও জাতীয়তাবাদী বৈশ্বিক আন্দোলনের অস্তিত্বকে নতুন মাত্রা দেবে। সেলনার প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী টমি রবিনসনের মতো বিশিষ্ট ইউরোপীয় চরমপন্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়া ব্রিটিশ ইউটিউব তারকা শেতাঙ্গবাদী ব্রিটানি পেটিবোনকে বিয়ে করেছেন। রবিনসন গত ১৯ নভেম্বর আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনার জন্য চরমপন্থী সংগঠন প্রাউড বয়েজের আমেরিকান নেতা এনরিক তারিওর সাথে ঐক্য শীর্ষ সম্মেলনে সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করেছিলেন। তারা তাদের লক্ষ্যের অন্তরায় বাধা-বিপত্তি, উদারপন্থী বিরোধী, অ্যান্টিফা (ফ্যাসিবাদ বিরোধী কর্মীদের একটি বামপন্থী গোষ্ঠী) এবং তাদেরকে অনলাইন প্লাটফর্মে নিষিদ্ধ করা বড় বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আলোচনা করে।
তারা আমেরিকান নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে, প্রেসিডেন্ট পদ রক্ষা করতে যদি ট্রাম্প সমর্থকরা ব্যর্থ হয়, তাহলে তা ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। রবিনসন এক পর্যায়ে বলেছিল যে, ডেমোক্র্যাটরা আপনাদের প্রতিস্থাপন করতে যাচ্ছে, যেভাবে আমাদের প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সীমানা খুলে যাবে এবং তারা আপনাদেরকে বিদেশী লোক দিয়ে প্রতিস্থাপন করবে।’ প্রাউড বয়েজের বেশ কয়েকজন সদস্য, যাদের ট্রাম্প ‘সরে থাকো এবং প্রস্তুত থাকো’ বলেছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন ক্যাপিটল হামলায় জড়িত ছিল। গত ১৯ অক্টোবর প্রাউড বয়েজ তাদের গ্রুপের সাথে টেলিগ্রাম নামক সংগঠনের একটি পোস্ট শেয়ার করে, যা তারা ‘গত কয়েক মাস ধরে জার্মানি থেকে সমর্থনের একটি বিশাল উৎসাহ’ হিসেবে অভিহিত করেছিল।
‘আমাদের ভিডিওগুলোর একটি উচ্চ শতাংশ জার্মানি জুড়ে শেয়ার করা হচ্ছে।’ টেলিগ্রাম গ্রুপের বার্তাটি জার্মান ভাষায় অনুবাদও হয়েছিল, ‘আমরা সহযোহিতার জন্য প্রশংসা করি এবং আমরা আপনাদের দেশের জন্য প্রার্থনা করছি। আমরা জার্মান জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়িয়েছি যারা চায় না অভিবাসীদেরকে তাদের দেশকে ধ্বংস করতে দিতে।’ গত তিন মাস ধরে প্রাউড বয়েজ বার্লিনে বামপন্থী আন্দোলনকারীদের মোকাবেলা করা জার্মান পুলিশ অফিসারদের বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওগুলোর মধ্যে দু’টিতে পুলিশকে এক প্রতিবাদকারীর ওপর সহিংসভাবে নির্যাতন চালাতে দেখা যায়, যা নিয়ে প্রাউড বয়েজ উল্লাস প্রকাশ করে।
যদিও তারা ট্রাম্পকে ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’ অভিহিত করে বলেছিল যে, তিনি ক্যাপিটল হামলাকে অস্বীকার করেছেন এবং হোয়াইট হাউস ছেড়ে চলে গেছেন। তারপরেও তারা ফ্রান্স, পোল্যান্ড এবং তুরস্কসহ অন্যান্য দেশে জাতীয়তাবাদীদের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। আমেরিকা যেমন আটলান্টিক জুড়ে কিএ্যানন ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো রফতানি করেছে, ইউরোপীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং বিশৃঙ্খলাও দেশটিতে তাদের পথ তৈরি করে নিচ্ছে। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন