মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অনুমোদনের অপেক্ষায় তিন টিকার ট্রায়াল

বাংলাদেশ-চীন-ভারতীয় তিন প্রতিষ্ঠানের আবেদন

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশে করোনা টিকার পরীক্ষমূলক প্রয়োগ করতে তিনটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। এরমধ্যে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান, অন্য দুটি বিদেশি। একটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে প্রথম ফেজ থেকে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করতে। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান দেশে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করবে। আবেদনগুলো বিএমআরসি (বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল) গ্রহণ করেছে। তবে সেগুলো কোন অবস্থায় আছে বা অনুমোদন পাবে কিনা সে বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিএমআরসি সূত্রে জানা গেছে, এর আগে বাংলাদেশে বা বিএমআরসিতে এ ধরনের আবেদন হয়নি। এবারই প্রথম কোন ওষুধের ফার্স্ট ফেজ ট্রায়াল পরিচালনার জন্য আবেদন এসেছে। এছাড়া আরও দুটি কোম্পানি থার্ড ফেজ ট্রায়াল বা মানবদেহে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য আবেদন করেছে। বৈশ্বিক মহামারিতে জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনা করে এগুলো দ্রুততার সঙ্গে রিভিউ করা যেতে পারে। যেভাবে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এফডিএ প্রতিদিন ৩ শিফটে ২৪ ঘণ্টা রিভিউয়ার দিয়ে রিভিউ করিয়ে ফাইজার ও মর্ডানার টিকার ট্রায়াল পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সেটি সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএমআরসির ‘ন্যাশনাল রিসার্চ এথিক্স কমিটি’র চেয়ারম্যান ন্যাশনাল প্রফেসর ডা. শাহলা খাতুন। এ তালিকায় সংসদ সদস্য, চিকিৎসক, গবেষকসহ ২১ জনের নাম রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির দুই সদস্য বলেন, ট্রায়ালের জন্য যেসব আবেদন এসেছে তার প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ৫শ’ থেকে ২ হাজার পাতার থাকে। অন্তত দু’জন রিভিউয়ার সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে তবেই সিদ্ধান্ত দেবেন, এগুলো অনুমোদন পাবে কি পাবে না। এক্ষেত্রে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। যেহেতু বিএমআরসিতে যারা রিভিউয়ার হিসাবে কাজ করেন তারা সবাই অন্য কাজের ফাঁকে এগুলো করেন, তাই তাদের পক্ষে রিভিউ করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ।

এ বিষয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তো জটিল নয়। টিকার মতো জীবনরক্ষাকারী ওষুধের ক্ষেত্রে যত বেশি ট্রায়াল পরিচালনা করা হবে ততোই ভাল। বিষয়টা জটিল কিছু নয়, ট্রায়ালে যদি অবস্থা ভালো হয়, তাহলে আমরা ওই টিকা নেব। ভালো না হলে নেব না। একই সঙ্গে যদি সেটা ভালো হয়, তাহলে আমাদের দেশের কোনো কোম্পানিকেও লাইসেন্স দিতে বলা যেতে পারে উৎপাদন করার জন্য। কারণ, দেশে উৎপাদিত হলে দাম কম হওয়ার সুবিধাটাও আমরা পাব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল পরিচালনা করতে চায় ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্স (আইএমবিসিএএমএস)। চায়নার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠান ১৯৫৮ সালে সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পরেই ১৯৬০ সালে ওরাল পলিওমাইেলেস্টি ভ্যকাসিন (ওপিভি) এবং ১৯৯২ সালে হেপাটাইটিস এ ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু করে। এ পর্যন্ত দুই বিলিয়ন ওপিবি এবং ৫২ বিলিয়ন ডোজ উৎপাদন ও বাজারজাত করেছে। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মনোনীত একটি বৃহৎ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে করোনা মহামারি শুরু হলে প্রতিষ্ঠানটি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে একটি ‘ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন’ উদ্ভাবনে কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে সার্সকোভ-২ নামের একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছে। যা আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসারে ভ্যাকসিনটির প্রাণীদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ এবং মানবদেহে পরীক্ষামূলক ফেজ-১ ও ফেজ-২ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

এ প্রতিষ্ঠানের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার জন্য ওয়ান ফার্মার পক্ষ থেকে ২৩ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর একটি আবেদন করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমানে ৩৪ হাজার ২০টি প্রাথমিক ডোজের কার্যকারিতা নিরুপণে প্রতিষ্ঠানটি চারটি দেশের মধ্যে ফেজ-৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। যেখানে ৮ হাজার জনগোষ্ঠীর ওপর এ ট্রায়াল পরিচালত হবে। এটি পরিচালনায় ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র- আইসিডিডিআরবি’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এছাড়া দেশীয় বেসরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ান ফার্মাকে স্থানীয় প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত করেছে। আইসিডিআরবি ইতিমধ্যে ট্রায়াল পরিচালার জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল-বিএমআরসিতে আবেদন করেছেন। এটির তৃতীয় ধাপের হিউম্যান ট্রায়াল বর্তমানে ব্রাজিল, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় চলমান রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ট্রায়ালের আবেদন করা হয়েছে। এখানে প্রায় ৮ হাজার মানুষের ওপর ট্রায়াল পরিচালিত হবে।

পূর্ববর্তী ট্রায়ালে ভ্যাকসিনটি শতাভাগ কার্যকর বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এরপর এ ভ্যকাসিন চীনের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তায় এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। ফেজ-১ ও ফেজ-২ ট্রায়ালে তীব্র কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি- এমনটি জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর ওয়ান ফার্মাকে এক বছরের জন্য অনুমোদন করে আইএমবিসিএএমএস। এছাড়া ২০ ডিসেম্বর তারিখে আইসিডিডিআরবি’র সঙ্গে তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার চুক্তি হয়।

আইএমবিসিএএমএস প্রসঙ্গে ওয়ান ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা নিয়মানুযায়ী বিএমআরসিতে আবেদন করেছি। তাদের পক্ষ থেকে অনুমোদন করলে দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের করোনা টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করা হবে। এতে বোঝা যাবে এ টিকা আমাদের দেশে কতটা উপযোগী। তাছাড়া ট্রায়ালে আশানরূপ ফল পাওয়া গেলে আইএমবিসিএএমএস আমাদের দেশে তাদের প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে। এতে দেশেই এ টিকা স্বল্পমূল্যে উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তাছাড়া বিনামূল্যে বিপুল পরিমাণ টিকা পাওয়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু আইএমবিসিএএমএস একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্বব্যাপী পরিচিত পুরাতন প্রতিষ্ঠান তাই যত দ্রæত ট্রায়ালের অনুমোদন পাওয়া যাবে ততো ভাল হবে।

এদিকে, ভারত বায়োটেক নামে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত¡ গবেষণা প্রতিষ্ঠান একটি করোনা টিকা উদ্ভাবন করেছে। এটিও একটি ‘ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন’। ইতোমধ্যে এ ভ্যকাসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল পরিচালনার জন্য বিএমআরসিতে আবেদন করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ করার জন্য আইসিডিডিআর,বি’র সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আইসিডিডিআরবি’র সংশ্লিষ্টরা কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা জানান, একটি ভারতীয় এবং একটি চায়না ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল পরিচালনায় তারা চুক্তি করেছে। চুক্তির শর্ত অনুসারে তারা কোন ধরনের মন্তব্য করতে পারবেন না। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক তাদের উৎপাদিত করোনাভাইরাস টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অনুমতির জন্য আবেদন করেছে। বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ-বিএমআরসিতে এই আবেদন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অনুমোদন পাওয়ার পরের সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবকের ওপর টিকার পরীক্ষামূলক প্রথম প্রয়োগ বা ফার্স্ট ট্রায়াল পরিচালনা করা হবে।

গেøাব বায়োটেকের গবেষণা কর্মকর্তা ড. আসিফ মাহমুদ বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর আবেদনটি তাদের পক্ষ থেকে করেছে ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। মানবদেহে প্রথম ট্রায়াল পরিচালনার জন্য আবেদন করা হলেও এখনো বিএমআরসি থেকে আনুষ্ঠঅনিকভাবে কোন কিছু জানানো হয়নি। তবে এ মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুতে কোন ইতিবাচক সংবাদ পাবেন বলে মনে করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
জুয়েল ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
বাংলাদেশিটাকে অনুমোদন দেয়া যেতে পারে
Total Reply(0)
পারভেজ ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১৩ এএম says : 0
ভারত ও চীনের ২টা অনুমোদন না দেয়াই ভালো হবে
Total Reply(0)
রোমান ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪০ এএম says : 0
গ্লোব বায়োটেক উৎপাদিত করোনাভাইরাস টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
প্রিয়সী ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
ভারতেরটাকে অনুমোদন দেয়ার কোন মানে হয় না
Total Reply(0)
ডালিম ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
যত দ্রুত ট্রায়ালের অনুমোদন পাওয়া যাবে ততো ভাল হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন