শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য তরুণদের ধূমপানের প্রভাবিত করছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০৩ পিএম

জনস্বার্থে দেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনের ধারা-৫ (ঙ) অনুসারে- সিনেমা, নাটক, প্রামান্যচিত্রে ধূমপান/তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রদর্শন না করানোর নির্দেশনা প্রদান হয়েছে। কাহিনীর প্রয়োজনে অত্যাবশ্যক হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এ আইনটি না মেনেই নাটক, সিনেমায় ধূমপানের চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। যা আইন লঙ্ঘণের পাশাপাশি মানুষকে ধূমপানে উৎসাহিত করছে।

বুধবার (২৮ জানুয়ারি) চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের সভা কক্ষে (তথ্য ভবন, ২য় তলা) ‘চলচ্চিত্রে তামাক নিয়ন্ত্রন আইন বাস্তবায়ন ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট যৌথভাবে উক্ত সভা আয়োজন করে।

চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স. ম. গোলাম কিবরিয়ার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড এর ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট’র সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড এর সচিব মো. মমিনুল হক জীবন, চলচ্চিত্র পরিচালক সাফি উদ্দিন সাফি, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও প্রকাশনা) মোহাম্মদ আলী সরকার, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস-বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ম্যানেজার নাসির উদ্দিন শেখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দি ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম সভায়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান।

স. ম. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আর্ন্তজাতিকভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ অনেক এগিয়েছে। আমাদের নির্মাতারা চলচ্চিত্র নির্মাণে তামাকের ব্যবহারের বিষয়টি ভবিষ্যতে লক্ষ্য রাখবেন। কারণ চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। আমরা চাই চলচ্চিত্র তামাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক মাধ্যম হবে।

সাফি উদ্দিন সাফি বলেন, শুধু সিনেমা নয় নাটক, ওয়েব সিরিজসহ অন্য মাধ্যমগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বাস্তবায়ন জরুরি। গল্পের প্রয়োজনে সিনেমাতে ধ‚মপানের দৃশ্য দেখানোর প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে আইনের অনুসরণ করা আমাদের দায়িত্ব।

মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, সেন্সর বোর্ড প্রাপ্ত সিনেমার কপিগুলো দেখে যথাযথভাবে অনুমোদন দেয়। অনেক সময় অনুমোদন ছাড়াও কিছু কিছু পোস্টার তৈরি করা হয়। সেখানে নানা ধরনের সমস্যা থাকে। তবে অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আমাদের মাঝে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নিয়ে একসাথে কাজ করা জরুরী।

জসিম উদ্দিন বলেন, চলচিত্রে তামাক ব্যবহারের দৃশ্য কমিয়ে আনা সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এক্ষেত্রে চলচিত্র নির্মাতা, শিল্পী- কলাকুশলী, প্রযোজক, পরিচালক সকলের সম্মিলিত প্রয়াস জরুরী। সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে সফল করতে হলে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যতে সেন্সর বোর্ড এ বিষয়ে আরো জোরালোভাবে কাজ করবে।

হেলাল আহমেদ বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য ছাড়াও অনেক ব্যবসা সফল ছবি আমাদের দেশে রয়েছে। ধূমপানের দৃশ্য না থাকলে ছবি সফল হবে না এ ভ্রান্ত ধারনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেদের সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটাতে হবে। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর এবং সেন্সরবোর্ডসহ সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম যেন তামাকজাতদ্রব্য গ্রহণে আসক্ত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরী। নায়ক নায়িকা ধূমপােেনর দৃশ্য তরুণদের প্রভাবিত করে। ৫০ টি সিনেমা গবেষণা করে দেখা গেছে চলচ্চিত্রে ধ‚মপানের দৃশ্য ব্যবহারের হার উদ্বেগজনক। অনেক সময় তামাক কোম্পানির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় চলচ্চিত্রে অপ্রয়োজনে মাত্রারিক্ত ধূমপানের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। কিছু কিছুক্ষেত্রে ব্রান্ডের নামও দেখানো হচ্ছে। চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে যদি ধূমপানের দৃশ্য দেখানো হয় তবে তা অবশ্যই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে মেনে দেখানো প্রয়োজন।

সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর প্রযোজক, পরিচালক, কলাকৌশলীদের সকলের সহযোগিতায় তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।

সভায় ডিরেক্টর গিল্ড এর প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য পরিচালকের প্রতিনিধি, চলচিত্র পরিচালকরা অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। এছাড়াও সভায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, এইড ফাউন্ডেশন, অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো-ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, প্রত্যাশা সামাজিক উন্নযন সংস্থা এবং ডাস এর প্রতিনিধি সভায় অংশগ্রহণ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন