বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিচারক নিয়োগে দলীয়করণ হচ্ছে : ড. কামাল

প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল বলেছেন, আজ সংবিধানের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিচারক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে দলীয়করণের মাধ্যমে। বাংলাদেশে কোনো দিন রাজতন্ত্র কায়েম হতে পারে না। এ দেশের সংবিধানের জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাইঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কাযর্কারিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে করণীয় শীষর্ক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, দেশ দলীয়করণের ক্যান্সারে ভুগছে। একটা পুরাতন রোগ। যে ক্যান্সারে আমরা ভুগছি তার নাম দলীয়করণ। বিচারপতি নিয়োগে দলের কোনো ভূমিকা থাকা উচিত নয়।
জজ নিয়োগ হয় দলীয়করণের ভিত্তিতে এমন অভিযোগ এনে তিনি বলেন, কথা হল যোগ্যতা, মেধা, সততা, কোনো কিছু হিসাবের মধ্যে আসবে না। বিচার বিভাগ না থাকলে আমরা কেউ নিরাপদ থাকব না, আমাদের ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনিরাও নিরাপদ থাকবে না। তারা কিসের মধ্যে বাস করব! বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা গেলে দেশের সংবিধান অনুযায়ী চলছে কিনা তা বিচারকরাই দেখতে পারবেন।
ড. কামাল বলেন, নির্বাচন কমিশন হলো অ্যাম্পায়ার, তারা যদি নিরপেক্ষ না থাকে তাহলে বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকবে কীভাবে। বিচারকদের নৈতিকতা, সত্যবাদিতা ও ন্যায়বোধ না থাকলে যত আইনই থাকুক না কেন তাতে কোনো কাজ হবে না।
বিচরকরা কোন যোগ্যতায় নিয়োগ হলো- তা জনগণের জানার অধিকার আছে বলে মন্তব্য করে ড. কামাল বলেন, আমরা সেই যোগ্যতা দেখতে চাই। যোগ্য লোক নিজের দলের হলেও আপত্তি নেই, তবে অযোগ্য লোক কীভাবে নিয়োগ পায়- এটা জানার অধিকার জনগণের আছে। সংবিধান জনগণকে সে অধিকার দিয়েছে।
বিচার বিভাগের বর্তমান অবস্থার সমালোচনা করে ড. কামাল বলেন, বিচার বিভাগ একটি স্তম্ভ, এই স্তম্ভকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা থাকে না।
বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেছেন, আর চা’র দাওয়াত না, আর ডিনার পার্টি না। বিচারপতিরা যদি চায়ের দাওয়াতে যান তাহলে স্বাধীনতা পুরো কাটেল (বাতিল) হয়ে যায়, স্বাধীনতা থাকে না।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, বিচারপতিদের নিয়োগ সংক্রান্ত আইন যে আইনের কথা ১৯৭২ সালের সংবিধানে বলা ছিল, তা আজও হয়নি। সংসদ বিচারপতিদের যোগ্যতা নির্ধারণ করে আইন পাস করেনি। এ সংক্রান্ত আইনের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলেও শোনা যায় না।
তিনি বলেন, সরকারের ব্যাপক জনসমর্থন নেই, সংসদে সত্যিকারের বিরোধীদল নেই। নির্বাচন কমিশন যেখানে সরকারি দলকে জেতাতে ব্যস্ত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের অন্যতম প্রধান কাজ ভিন্ন দলের রাজনীতিবিদদের শায়েস্তা করা সেখানে সরকার আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী হবে বলে প্রত্যাশা করা যায় না।
শাহদিন বলেন, গত অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটে আইন বিচার মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছিল ৩২৯ কোটি টাকা। অপরদিকে মৎস্য ও পশু মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৭৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ আইন ও বিচারের উন্নয়নের চেয়ে দেশে মৎস্য ও পশুর উন্নয়নের জন্য প্রায় আড়াই গুন বেশি খরচ হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজধানীর মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের কিছু বাড়তি কাজ করার জন্য অতিরিক্ত ৪৩০ কোটি টাকার বর্ধিত ব্যয় অনুমোদিত হয়েছে। অর্থাৎ এক কিলোমিটার বর্ধিত ফ্লাইওভারের খরচ সারা বছরের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের সব উন্নয়ন কাজের বরাদ্দের চেয়ে ঢের বেশি।
শাহদীন মালিক বলেন, বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে ব্যর্থ। দুদক সরকারি দলের দুর্নীতি দেখতে পায় না। সংসদ আছে তবে তার কার্যকর পদক্ষেপ নেই। আর আইনের শাসন না থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জনগণের কল্যাণ আনতে পারে না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন, আদালত-বিচার বিভাগ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনগণের মাঝে নেতিবাচক হতাশা আছে। প্রধান বিচারপতি নিয়ে বিতর্কের কোনো কারণ নেই। সাধারণ মানুষকে বিচার বঞ্চিত করার অধিকার আছে কিনা- এতে বোঝা যায় আমরা গণতান্ত্রিক দেশে আছি কিনা? আমাদের বলা হয় স্বৈরতান্ত্রিক প্রোডাক্ট।
তিনি বলেন, যে সংগঠনগুলো নাগরিকের নিরাপত্তা দেবে, আজ তারাই জনগণকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারছে। এর প্রোটেস্ট করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। তা না হলে গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে আছে এবং পড়বে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে বিচার মানা হয় না, বিচারহীনতা, বিচার বঞ্চনা, আইনের শাসন পাওয়ার অধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, থানায় রাতের বেলা একজন উপপরিদর্শকের নেতৃত্বে আদালত বসছে, সেখানে ঘুষের ছড়াছড়ি। এখন জমি সংক্রান্ত মামলা কোর্টে না গিয়ে থানায় চলে যায়। তৃণমূল পর্যায়ে বিচার মানা হয় না। গ্রাম্য আদালতের প্রধান এখন ইউপি চেয়ারম্যান। দলীয় লোক হয়ে তিনি কিভাবে নিরপেক্ষ বিচার করবেন? বিচারহীনতা, বিচার বঞ্চনা, আইনের শাসন পাওয়ার অধিকার পদে পদে ‘লঙ্ঘিত’ হচ্ছে। গ্রাম্য আদালত টিকিয়ে রাখা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমরা আদালতের সমালোচনা করলে আদালত অবমাননা হয়ে যায়, কিন্তু সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী একবার আদালতের আদেশ অমান্য করলেন, এবং বললেন আমি আমার কাজ করবো, দেখি আদালত কী করতে পারে। তারপরও তার প্রতি আদালত অবমাননা হলো না! আমরা গঠনমূলক সমালোচনা করলেই অবমাননা হয়ে যায়, তাহলে কী আমরা কথা বলবো না?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এখন কোর্ট দুই ভাগে বিভক্ত। একটি আওয়ামী লীগ, আরেকটি বিএনপি। যদি আইনমন্ত্রী, এমপি বা বিচারপতির সন্তান হওয়া যায়, তাহলে তাদের কাছে ক্লায়েন্টরা যায়। তাহলে আমরা কীভাবে প্র্যাকটিস করবো?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে এবং সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন