বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় ইসলাম অনুসরণ ব্যতীত জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১০ পিএম

ইসলামী বিধান অনুসরণ ব্যতীত পারিবারিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। শরীয়তের বিধানগুলো যে পরিবারে বেশি অনুসরণ করবে সেসব পরিবারে সবচেয়ে বেশি সুখ-শান্তি বিরাজ করবে। রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। জুমার নামাজে নগরীর মসজিদগুলোতে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষের পরষ্পরের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করেছেন। ফলে পরিবার গঠনের পরে তাদের পরষ্পরের মধ্যে এক অপার্থিব প্রেম-ভালবাসার সৃষ্টি হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন , “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য জোড়া (স্বামী বা স্ত্রী) সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পার এবং তোমাদের মধ্যে ভালবাসা মমতা সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা রোমÑআয়াত নং-২১)।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি রয়েছে অধিকার। আল্লাহ তায়ালা বলেন,“নারীদের ওপর (পুরষের) যেমন অধিকার রয়েছে তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে (পুরুষদের) ওপর নারীদের এবং পুরুষদের রয়েছে তাদের ওপর একটি মর্যাদা।”(সূরা বাকারা-আয়াত নং-২২৮)। পেশ ইমাম বলেন, ইসলামী বিধান অনুসরণ ব্যতীত পারিবারিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তিনি বলেন,আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে কোমল করে দিয়েছেন মাতৃত্ব, আবেগ আর মমতা। আবেগের ফলে তারা সহজেই মমতা, রাগ জিদ এগুলো দ¦ারা আক্রান্ত হয়। স্বামীর দায়িত্ব এগুলো বিশেষ খেয়াল রাখা এবং মেনে নেয়া।স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীর আবেগ, মমতা, জিদ সবকিছুকেই মেনে নিয়ে দায়িত্ব পালনে ব্রতী হওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণের জন্য তোমদের নির্দেশ দিচ্ছি কেননা নারীদের বক্রতা বা আবেগ ও জিদ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। ( বুখারী-১২১২)। আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেছেন, “পুরুষগণ স্ত্রীগণের সংরক্ষক কেননা আল্লাহ তাদের এককে অপরের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবং পুরুষগণ ধন-সম্পদ ব্যয় করে । সুতরাং পূণ্যবতী নারীরা অনুগত। লোকচক্ষুর অন্তরালে তারা সংরক্ষণ করে ঐ সমস্ত বিষয় যা আল্লাহ সংরক্ষণ করেছেন । ” সূরা রুম : ১২১ নং আয়াত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ তোমদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর সাথে আচরণের দিক হতে সর্বোত্তম ” তেমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই ভাল যে তার স্ত্রীর কাছে ভাল আর আমি আমার স্ত্রীর কাছে ভাল। ” (তিরমিযী : ১৬৬) আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘তাদের সাথে তোমরা সদ্ভাবে আচরণ কর।’ (সূরা নিসা), আয়াত : ১৮।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতী আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, মহান আল্লাহর ইচ্ছায় নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ঋতুর পালাবদল ঘটে।বিরূপ আবহাওয়ায় মানুষের অসহায়ত্ব ও দুর্বলতা প্রকট আকার ধারণ করে। হাড়কাঁপানো শীতে অনেককে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে দেখা যায়। বাস্তুহারা মানুষগুলো খড়কুটা জ্বালিয়ে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করে। এ সকল অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো নববী আদর্শ। কারণ, খেদমাতে খালক্ব বা মানবসেবা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান ও ইবাদত। এ ব্যাপারে ত্রæটি হলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। প্রশ্ন করা হবে বস্ত্রহীনদের বস্ত্রদান ও ক্ষুধার্তদের খাদ্যদান সম্পর্কে। ইসলাম মানবীয় গুণাবলীর ক্ষেত্রে পরোপকার ও জনকল্যাণমূলক কাজকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ আখ্যা দিয়ে এর প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের "সূরা কসাস" এর ৭৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,তোমরা মানুষের প্রতি তেমন অনুগ্রহ কর (সাদক্বাহ বা যে কোন উপায়ে) যেমন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।

খতিব বলেন, বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার মুসিবতসমূহ দূর করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দিবে, রব্বে কারীম তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দিবেন এবং আল্লাহ বান্দার সাহায্য করবেন যদি বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে"। (সহীহ মুসলিম)। বস্ত্রদানের প্রয়োজনীয়তা ও ফযীলত সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো তৃষ্ণার্ত মুসলমানকে পানি পান করালে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানীয় পান করাবেন।” (সুনানে আবু দাউদ)। এমতাবস্থায় দলমত নির্বিশেষে সবার অসহায় শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষের পাশে অবশ্যই দাঁড়ানো উচিত। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে তৌফিক দান করেন। আমীন!

ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার খুৎবাপূর্ব বক্তব্যে বলেছেন, আল্লাহ চাইলে জীবন বদলে দিতে হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দুটি বাণীই যথেষ্ট। একটি হল "মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যু বরণ কর" দ্বিতীয়টি হল "হিসাব দেয়ার পূর্বে নিজের হিসাব নিজে নিয়ে নাও" মৃত্যু সৃষ্টার এক অমোঘ বিধান। যা প্রতিহত করার সাধ্য কারো নেই। যার অদৃষ্টে যখন মৃত্যু লেখা আছে তার মৃত্যু তখনই হবে। কার মৃত্যু কখন হবে-কোথায় হবে তা কেউই বলতে পারেনা। বিদগ্ধ আলেমগণ বলেছেন, মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যু বরণ করার দুটি অর্থ হতে পারে। এক, আল্লাহর মর্জিবিরোধী কাজ-কর্ম তথা গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং স্বীয় কু-প্রবৃত্তিকে নির্মূল করার সাধনা করা। দুই, মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুকে কল্পনা বা স্মরণ করা এবং মনোজগতে এই চিন্তা জাগ্রত করা যে, বিদায় যখন নিতেই হবে তাহলে কি নিয়ে বিদায় নিব? মাওলানা আফেন্দী বলেন, মানবজীবন বদলে দেয়ার এমন কার্যকর ফর্মুলাগুলো যদি আজ আমরা অনুসরণ করতাম তাহলে দৃশ্যমান বিপর্যয় থেকে মুক্তি লাভ করা সহজ হতো।
গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন,আমাদের সবাইকে তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে হবে। তথা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আল্লাহর হুকুম মত চলতে হবে। আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালিত করতে হবে। যারা তাকওয়া ও আল্লাহভীতির গুণ অর্জন করতে পারবে, তারা দুনিয়া ও আখেরাতের পূর্ণ সফলতা অর্জন করতে পারবে। ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নেয়ামত স্বরূপ প্রদান করেছেন। এই নেয়ামতগুলো হচ্ছে আমানত। তাই এই আমানত সঠিকভাবে আদায় করতে পারলেই আমরা তাকওয়ার গুণ সহজে অর্জন করতে পারবো। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেন, চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম শরীফ)। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে এই জটিল ও জঘন্য গুনাহ পরিহার করার তৌফিক দান করেন এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা দান করেন। আমিন!

মিরপুর ই-ব্লক বাইতুল মা’মুর জামে মসজিদ-এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, সৎ কাজে সহযোগীতা করা মানব জীবনে বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এটা মুমিনের জন্য বড় সওয়াবের কাজ । আর এ কাজে বাধা সৃষ্টি করা ঈমানের পরিচয় বহির্ভূত নিন্দনীয় অপকর্ম। কাজেই ঈমানের পরিচয় প্রদানকারী কোন ঈমানদার ব্যক্তি সৎ কাজ তথা দ্বীনি কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনা । কারণ ঈমানের প্রেরণাই হল সৎ কাজে যথাসম্ভব সহযোগীতা করা এবং অসৎ, অকল্যাণ মূলক পাপের কাজ থেকে মানুষকে বাধা প্রদান করা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা সৎকাজ ও আল্লাহভীতিতে পরস্পরের সহযোগিতা কর। পাপকাজ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা কঠিন শাস্তি দানকারী। (সূরা মায়েদা : আয়াত নং-২)। খতীব তার বয়ানে সৎ কাজের অংশ হিসাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ইসলামের সার্বিক কাজে যথাসম্ভব সহযোগীতাসহ এই তীব্র শীতে দেশের বস্ত্রহীন গরীব, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মুসল্লিদের প্রতি অনুরোধ জানান।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Mufti Abdullah Firoji ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৩ পিএম says : 0
জুমার বয়ান প্রচার করায় দৈনিক ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানাচ্ছি। ইসলাম, দেশ ও জনগণের পক্ষে ইনকিলাবের আপোসহীন অগ্রযাত্রা আরও সুদৃঢ় হোক সেই কামনা করি।
Total Reply(0)
Mufti Abdullah Firoji ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৩ পিএম says : 0
জুমার বয়ান প্রচার করায় দৈনিক ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানাচ্ছি। ইসলাম, দেশ ও জনগণের পক্ষে ইনকিলাবের আপোসহীন অগ্রযাত্রা আরও সুদৃঢ় হোক সেই কামনা করি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন