শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

অসাধারণ পররাষ্ট্রনীতি

| প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রামে পরিণত হয়েছে। এখানে যেমন পারস্পরিক স্বার্থে প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্ক রাখা দরকার, তেমনি দূর রাষ্ট্রের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখা অপরিহার্য। কাউকে বাদ দিয়ে বা কারো সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক বা আচরণ বজায় রেখে অগ্রসর হওয়া অচিন্তনীয়। সাংবিধানিকভাবেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হলো, সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়। সূচনালগ্ন থেকেই এ নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির এই মৌলিক বিষয়টি আবারও স্মরণ করিয়ে দিলেন। গত বৃহস্পতিবার সামরিক বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজের ডিএসসিএসসি ২০২০-২০২১ কোর্সের স্নাতক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হচ্ছে, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরীতা নয়। কেউ বলতে পারবে না, বাংলাদেশের সঙ্গে কারও বৈরী সম্পর্ক রয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য দেয়ার অর্থ হচ্ছে, তাঁর সরকার দেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এই মৌলিক নীতিটি অবলম্বন করে চলেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবেশী এবং দূরের প্রভাবশালী দেশের নানা উস্কানি সত্তে¡ও প্রধানমন্ত্রী আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ধারণ করে অত্যন্ত দূরদর্শী চিন্তা ও বিচক্ষণতার সাথে সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো অত্যন্ত মানবিক ও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রচ্ছন্ন উস্কানি এমনকি মিয়ানমারের বৈরী আচরণ সত্ত্বেও তিনি বিচক্ষণতার সাথে অত্যন্ত ধৈর্য্য ও সহনশীলতার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে চলেছেন। এটা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এক অপূর্ব ও মননশীল চিন্তারই স্মারক।

আমরা দেখেছি, বৃহৎ প্রতিবেশী বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের প্রতি নানা বিষয়ে অন্যায্য আচরণ করে চলেছে। বাংলাদেশ সরকার তা অত্যন্ত সহনশীলতা ও বিচক্ষণতার মধ্য দিয়ে এড়িয়ে সুসম্পর্ক ধরে রেখেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো নানাভাবে মিয়ানমারের সাথে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টিতে কৌশলে ভূমিকা পালন করেছে। মিয়ানমারকে তারা তিরস্কার এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে বাংলাদেশকেও এ ব্যাপারে সক্রিয় হওয়া উচিৎ। তবে বাংলাদেশ সরকার পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্রের বাইরে গিয়ে এমন কোনো অনভিপ্রেত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি, যাতে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দশ লাখের অধিক রোহিঙ্গার দুঃসহ বোঝা বহন করতে গিয়ে দিকভ্রান্ত না হয়ে বরং মায়ানমারের সাথে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সুসম্পর্কের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাবাসনের পন্থা অবলম্বন করে চলেছে। মিয়ানমার বহুবার যুদ্ধে জড়ানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেও বাংলাদেশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তা এড়িয়ে গেছে। যদি তা না করতো, তাহলে বাংলাদেশের জন্য সেটা অত্যন্ত ক্ষতি বয়ে আনত। এতে প্রতিবেশী অন্য দেশসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মওকা পেয়ে যেত। বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশকে তার দিকে টেনে মুখাপেক্ষী করে ফেলত। এর সাথে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হয়ে উপমহাদেশে বাংলাদেশকে দাবার গুটিতে পরিণত করত। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের সাথে যুক্ত হয়ে ভিন্ন এক বলয় গড়ে তুলত। এতে অপরিমেয় ক্ষতির শিকার হতো বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অসাধারণ প্রজ্ঞা ও তী² পর্যবেক্ষণ শক্তির মাধ্যমে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ এসব উস্কানির ফাঁদে পা না দিয়ে সংঘাত এড়িয়ে একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থান গ্রহণ করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিবেশীর সাথে বৈরী ও উত্তেজনাকর সম্পর্ক রেখে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা যায় না। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়তে হয়। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার বাংলাদেশের দিকে ঠেলে সংকট সৃষ্টি করলেও তাদের প্রত্যাবাসন এবং উপমহাদেশ ও আন্তর্জাতিক বৃহত্তর স্বার্থে মিয়ানমারের সাথে সুসর্ম্পক বজায় রাখার বিকল্প নেই। বিশেষ করে ভারত নির্ভরতা কমাতে মিয়ানমার, চীনসহ উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের সাথে বহুমুখী ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বাস্তবতা উপলব্ধি করেই প্রতিবেশী অন্য দেশগুলোর সাথে পারস্পরিক সুসম্পর্ককে আরো গভীর করার দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়েছে। ভারতের বর্তমান মোদি সরকার অত্যন্ত মুসলিম বিদ্বেষী। সেখানে মুসলমানরা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। পাশাপাশি মুসলমানদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া ও বাণিজ্যসহ নানা অন্যায্য আচরণ বলবৎ রেখেছে। এমন অন্যায্য ও ভারসাম্যহীন আচরণ সত্তে¡ও বাংলাদেশ তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে একমুখী নীতি কোনো নীতি নয়। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আমরা যদি গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করি, দেখব উপমহাদেশ তো বটেই বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সাথেই আমাদের বৈরী সম্পর্ক নেই।

আমরা মনে করি, পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে। সংঘাত, সংঘর্ষ বা শীতল সম্পর্কের পরিবর্তে প্রতিবেশীসহ অন্যান্য দেশের সাথে যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও হার্দিক সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে, তা অসাধারণ কূটনীতিরই নিদর্শন। এতে গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের একটি স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। একটি শান্তি ও সৌহার্দ্যরে দেশের প্রতীক হয়ে উঠেছে। কারো পক্ষেই বাংলাদেশকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভাবমর্যাদা সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনাকে ধারণ করেই আমাদের পররাষ্ট্রনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। তার এই প্রয়াস অসাধারণ কূটনৈতিক দূরদর্শীতারই স্বাক্ষর। আমরা আশা করি, মিয়ানমার ও অন্যান্য দেশের সাথে পারস্পরিক সুসম্পর্কের মধ্যেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিহিত। বলা বাহুল্য, একটি সমস্যার সমাধানে বৈরী পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে বৃহৎ সম্ভাবনার পথ বন্ধ করা কোনোভাবেই সমীচীন হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অং সান সুকির মধ্যে বৈঠক হলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে গতি লাভ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
MD.BORATUZZAMAN ৩১ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৪৬ পিএম says : 0
shomot
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন