শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আমেরিকান গণতন্ত্রের ভবিষ্যত রিপাবলিকানদের হাতে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

কিউঅ্যানন ষড়যন্ত্রকারীরা ক্যাপিটল হিলে হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার পর, তাদের টুইটার এবং ফেসবুক থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কয়েক হাজার কিউঅ্যানন অনুসারীর অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এফবিআই কিউঅ্যাননের অন্যতম গুরু জ্যাকব চ্যান্সলেসহ কিছু অভিযুক্ত হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছে। তবে সহসাই আমেরিকার মাটি থেকে মুছে যাবে না কিউঅ্যাননের অস্তিত্ব।

কিউঅ্যাননের আধুনিক সংস্করণগুলো টিকটকসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সংগঠনটির ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ আরো স্থায়ী রূপ পেতে যাচ্ছে। এ ষড়যন্ত্রের অন্যতম স্থপতি জাপানের ষড়যন্ত্র তত্ত্ববীদ এবং ৮চ্যান ওয়েবসাইটের পরিচালক রোন ওয়াটকিনস তার ওয়েবসাইটে একটি গোপন পোস্টে লিখেছেন, ‘খেলা শুরু হয়ে গেছে’ এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা আমাদের সবটুকু উৎসর্গ করেছি।’

কিউঅ্যানন বা ক্যানন বা কানন বা কানুন হ’ল এক অস্বীকৃত ও কুখ্যাত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, যাতে প্রচার করা হয়েছে যে, শয়তান উপাসক, শিশুদের প্রতি কামাতুর নরখাদকদের গুপ্ত সংগঠন ‘কেবাল’ বিশ্বব্যাপী একটি শিশু পাচার চক্র পরিচালনা করছে এবং প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

কিউঅ্যানন দাবি করেছে যে, ট্রাম্প কান্ডারী হয়ে সেই গুপ্ত সংগঠনটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন এবং ‘ঝড়’ নামে অভিহিত একটি দিনের পরিকল্পনা করছেন, যেদিন কেবালের কয়েক হাজার সদস্যকে গ্রেফতার করা হবে। কিউঅ্যানন অনুসরারীরা অনেক উদার হলিউড অভিনেতা, ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদ এবং উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের কেবালের সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।

তারা আরও দাবি করেছেন যে, ট্রাম্প চক্রটির ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দেয়া এবং তার বিরুদ্ধে বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন এবং জর্জ সোরোসের অভ্যুত্থান ঠেকানোর জন্য তার এবং রাশিয়ানদের সাথে রবার্ট মুয়েলারকে যোগ দেয়ার জন্য তালিকাভুক্ত করেছেন। কিউঅ্যানন ষড়যন্ত্র তত্ত¡গুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে রাশিয়া সমর্থিত ট্রল অ্যাকাউন্টগুলোর পাশাপাশি রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী সরকারি গণমাধ্যমের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

আমেরিকাতে সরকারবিরোধীদের, ঐতিহ্যবাহী ধর্মান্ধ শিল্পোদ্যোক্তাদের এবং অনুসারীদের ষড়যন্ত্রের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৫০ এবং ৬০ এর দশকের রেড স্কেয়ার্সের নেতৃত্ব দেয়া চরমপন্থী শ্বেতাঙ্গবাদী এবং ধর্মান্ধ সংগঠন জোসেফ ম্যাকার্থি এবং জন বার্চ সোসাইটি পুরো আমেরিকাকে প্রায় গ্রাস করে নিয়েছিল এবং গত দুই দশকে রিপাবলিকান অভিজাতদের তথাকথিত সাম্রাজ্যবিরোধী রাজনীতি এবং আবহাওয়া-পরিবর্তন অস্বীকার নীতি, বেনগাজির সত্য গোপন এবং পৃথিবী ধ্বংসের নতুন রটনাগুলো রাজনীতিতে চরমপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি গেড়ে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

আমেরিকার শেতাঙ্গবাদী ওয়েবসাইট ইনফোওয়ার্স, যেখানে জোন্স শ্রোতা টানার জন্য তিন-চতুর্থাংশ সরকার বিরোধী এবং আসন্ন গৃহযুদ্ধের নামে অপপ্রচার চালান, সেখানে ১২ মিলিয়নেরও বেশি ভিউয়ার রয়েছে এবং ফক্স নিউজ, যেখানে এ সপ্তাহে উপস্থাপক কার্লসন কিউঅ্যাননের বিরুদ্ধে সরকারের ক্র্যাকডাউনের ঘোর সমালোচনা করেছেন, সেখানে আরো কয়েক মিলিয়ন বেশি ভিউয়ারের সমাগম ঘটেছে। এ জাতীয় ঘটনা ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেছে। ট্রাম্প কেবল অকৃত্রিম ষড়যন্ত্রকারীর মতো চরমপন্থীদের প্রশ্রয়ই দেননি, তিনি এটিকে নতুন জীবন দান করেছেন।

রাজনীতি বিজ্ঞানী রাসেল মুইরহেড এবং ন্যান্সি রোজেনবুম ট্রাম্পের ষড়যন্ত্র তত্ত¡কে রাজনৈতিক পদক্ষেপ পরিবর্তন হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ট্রাম্প গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল উৎপাটনের জন্য এবং তার বিরোধীদের নেতিবাচক এবং অকার্যকর করার জন্য ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ থেকে ওভাল অফিস পর্যন্ত তার ষড়যন্ত্রের প্রচারণা চালিয়েছেন এবং ক্ষমতাহীন বর্ণবাদীদের মাঝেও ছাড়িয়ে দিয়েছেন।

মিরহেড এবং রোজেনবুমের কাছে, ট্রাম্পের রাজনৈতিক সাফল্যের নীলনকশা হিসেবে তার ষড়যন্ত্র তত্ত¡ তার অনুকরণকারীরা অনুসরণ করবে। তার দলকে পরাজিত করার পরেও, রিপাবলিকান নেতারা এ পরাজয়কে উল্টে দেয়ার উদ্দেশ্যে একটি বিদ্রোহ পরিচালনা করতে পারে। কারণ দলের বেশিরভাগ ভোটার এখনও বিশ্বাস করেন না যে, তিনি পরাজিত হয়েছেন।

আমেরিকান গণতন্ত্র, ধর্ম ও বর্ণ নিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের এ নীল নকশাটি কয়েক দশক ধরে তৈরি করা হলেও ট্রাম্পের কল্যাণে বর্তমানে এটির একটি চমকপ্রদ অর্জন রয়েছে এবং দেশটির দীর্ঘদিনের গঠনগত দুর্বলতাগুলো ট্রাম্প রাজনীতিতে ব্যবহার করেছেন। এর ফলে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমগুলোর অবক্ষয়, ইন্টারনেটে নৈরাজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে। কিউঅ্যাননের টুইটার একাউন্ট বন্ধ করে দেয়াতে তেমন কোনও সাফল্য আসেনি।

মনে হচ্ছে, আমেরিকান গণতন্ত্রের জন্য লড়াইটি একা সরকারি প্রতিষ্ঠান বা নির্বাচন কর্মকর্তা বা বিচারকরা জিততে পারবেন না। এর জন্য রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদেরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাদের এখন গণতন্ত্রের পক্ষে যুদ্ধের শর্তগুলো পুনরায় নির্ধারণ করার সুযোগ রয়েছে। গণতন্ত্র জনমতের প্রতিযোগিতায় সমৃদ্ধ হয়; এটি ট্রাম্পের স্বার্থ যুদ্ধে বিভ্রান্ত ও বিপর্যস্ত হয়। এ বাস্তবতা ব্যতীত, গণতন্ত্র কার্যকর করতে পারে না। সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট, উইকিপিডিয়া।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
কিরন ৩১ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:১৩ এএম says : 0
আমেরিকার গণতন্ত্রের ভবিষ্যত তো জানি না, তবে তাদের পতন আসন্ন ; সেটা বলতে পারছি
Total Reply(0)
জাহিদ ৩১ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:১৪ এএম says : 0
আমি একমত পোষণ করছি
Total Reply(0)
পারভেজ ৩১ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:১৪ এএম says : 0
ট্রাম্প সব কিছুকে কলঙ্কিত করে দিয়েছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন