মিয়ানমারে সোমবারের সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দায় সরব হয়েছে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ এরইমধ্যে এ ব্যাপারে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এ ঘটনাকে গণতন্ত্রের ওপর মারাত্মক আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছে তারা। পাশাপাশি গ্রেফতার সকল বন্দীকে মুক্তি দিয়ে দেশটির সংকট আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহবান জানানো হয়েছে। নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বেসামরিক প্রশাসনের সাথে সামরিক বাহিনীর কয়েক দিনের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনী সোমবার এই অভ্যুত্থান করে। মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর হাতে আইনসভা, নির্বাহী ও বিচারিক ক্ষমতা স্থানান্তরের ঘোষণার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেনা অভ্যুত্থানে উদ্বেগের কথা জানিয়ে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন ‘সব নেতাকে অবশ্যই মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সংস্কারের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে হবে, অর্থবহ সংলাপে চালাতে হবে, সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাকে পুরোপুরি সম্মান করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র, শান্তি, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের জনগণের প্রতি জাতিসঙ্ঘের সমর্থনকে পুনর্ব্যক্ত করেছেন মহাসচিব।’ মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘অবশ্যই জনগণের ভোটকে সম্মান জানাতে ও বেসামরিক নেতাদের মুক্তি দিতে হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের দেশটির রাজনৈতিক নেতা অং সান সুচিসহ বন্দী সব নেতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের ছেড়ে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা বার্মিজ সামরিক নেতাদের আহবান জানাচ্ছি সকল সরকারি কর্মকর্তা ও বেসামরিক নেতাদের মুক্তি দেয়ার এবং বার্মার জনসাধারণের ইচ্ছাকে সম্মান করার যা ৮ নভেম্বরের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে প্রকাশ পেয়েছে।’ ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট শার্লস মিশেল মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা করে করে এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ‘নির্বাচনের ফলাফলে শ্রদ্ধা জানানো প্রয়োজন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধার করা উচিত।’ সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় চীন মিয়ানমারের সকল পক্ষের কাছে মতবিরোধ দ‚র করে একসাথে কাজ করার প্রত্যাশা করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াঙ ওয়েনবিন সংবাদ সম্মেলনে এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ‘চীন ও মিয়ানমার উত্তম প্রতিবেশী। আমরা আশা করবো মিয়ানমারের সকল পক্ষ দেশটির সংবিধান ও আইনের অধীনে তাদের মতবিরোধ দূর করতে সক্ষম হবে এবং এর মাধ্যমে দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজ করবে।’ জাপানের চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি কাটসুনবু কাটো এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, জাপান গভীরভাবে মিয়ানমারের পরিস্থিতিতে নজর রাখছে। তিনি মন্তব্য করেন, ‘জাপান বিশ্বাস করে সকল পক্ষের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অধীনে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ।’ সেনা অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা মিয়নামারের পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছি। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ভারত অবিচলভাবে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে।’ অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরাইজ পেইন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার সরকার মিয়ানমারি সামরিক বাহিনীর আরো একবার মিয়ানমার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় এবং স্টেট কাউন্সিলর ডাও অং সান সুচি ও প্রেসিডেন্ট উ উইন মিন্টের আটকে গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছে।’ বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সামরিক বাহিনীকে আহবান জানাচ্ছি আইনের শাসনকে সম্মানের, বৈধ পন্থায় মতোবিরোধ সমাধানের এবং সকল বেসামরিক নেতা ও অবৈধভাবে গ্রেফতার হওয়া সব বন্দীদের ছেড়ে দেয়ার।’ ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতার্তের এক মুখপাত্র সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘এটি দেশটির অভ্যন্তরীন বিষয়, যাতে আমরা হস্তক্ষেপ করবো না।’ ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে দেশটির সবপক্ষকে আত্মসংযমের পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহবান জানিয়েছে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও অন্য সকল পক্ষকে দেশটিতে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং আইনের শাসন সমুন্নত রাখার আহবান জানানো হয়। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে সমস্যা সমাধানে সবপক্ষকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহবান জানিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডাইরেক্টর জন সিফটন সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছেন, ‘দশকের পর দশক মিয়ানমার শাসন করা সামরিক জান্তা কখনোই প্রথম ধাপে ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি। তারা কখনোই বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি। সুতরাং, আজকের ঘটনা ম‚লত দেশটিতে বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিবিম্ব।’ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি রিজিওনাল ডাইরেক্টর মিঙ ইউ হাহ সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে অং সান সুকিসহ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রয়টার্স, আলজাজিরা, সিএনএন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন