বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান করা যাবে সরকারের ইচ্ছায়

প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মন্ত্রিসভায় আইনের সংশোধনী অনুমোদন
বিশেষ সংবাদদাতা : ফৌজদারি মামলায় আদালতে গৃহীত অভিযোগপত্রে নাম এলে জেলা পরিষদেও চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করা এবং চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সরকার মনোনীত কোনো ব্যক্তিকে ওই দায়িত্ব দেয়ার সুযোগ রেখে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বেঠকে
জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৬-এর নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এতে আরো বলা হয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এ সংক্রান্ত ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি জানান, জেলা পরিষদ আইনটি ২০০০ সালের। এতে অল্প কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। ২১ সদস্যের নির্বাচকম-লীর মাধ্যমে জেলা পরিষদ গঠন করা হবে। জেলা পরিষদে ১ জন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও ৫ জন সংরক্ষিত সদস্য থাকবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইলেক্ট্রোরাল কলেজ গঠন সম্পর্কে বিগত আইনে কিছুটা অস্পষ্টতা ছিল। নতুন আইনে এ বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে খুব শিগগির একটি অধ্যাদেশ জারি করে এটি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সচিব আরও জানান, স্থানীয় পর্যায়ের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সব প্রতিনিধির সমন্বয়ে ইলেকট্রোরাল কলেজ গঠিত হবে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি কর্পোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যগণের সমন্বয়ে জেলার পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচকম-লী গঠিত হইবে৷
এই নির্বাচকম-লীই ২১ সদস্যের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচন পরিচালনা করবে। নির্বাচনী আচরণবিধি কেউ লঙ্ঘন করলে ছয় মাস জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ- দেয়া যাবে। আগে এই আইনে সর্বোচ্চ সাত বছর জেল ছিল।
মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, মূল আইন অনুযায়ী, জেলা পরিষদের নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যানের উপর ন্যস্ত। চেয়ারম্যান প্রয়োজনে অন্য কাউকে ওই দায়িত্ব দিতে পারতেন। আইন সংশোধন হলেও নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতেই থাকবে। তবে পরিষদ চাইলে এর সব বা যে কোনো নির্বাহী ক্ষমতা কোনো অস্থায়ী প্যানেল চেয়ারম্যান বা কোনো সদস্য অথবা সরকার অনুমোদিত কোনো উপযুক্ত কর্মকর্তাকে দিতে পারবে। চেয়ারম্যান না থাকলে এর সদস্য বা সরকারের কোনো মনোনীত কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
তবে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সরকার কত দিনের জন্য অন্য কাউকে জেলা পরিষদেন চেয়ারম্যানের দায়িত্বে বসাতে পারবে সে বিষয়ে খসড়ায় স্পষ্ট কিছু নেই বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। একই সঙ্গে ফৌজদারি মামলায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্যদের কেউ গ্রেপ্তার হলে অথবা তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান এই আইনে রাখা হয়েছে।
শফিউল আলম জানান, শপথের সময় পরিচিতির জন্য পিতা বা স্বামীর সঙ্গে মাতার নাম অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি আইনে ছিল না। মাতার নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধনীতে।
তিনি আরও বলেন, সংসদ অধিবেশন না থাকায় এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। পরে এটি আইনে পরিণত করা হবে।
জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনাÑ একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর নির্বাচনে যাবে নির্বাচন কমিশন। আমাদের কাছে আপাতত কোন তথ্য নেই। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশা করি।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন যাবত দেশের জেলা পরিষদগুলো প্রশাসকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতারা। গত ২৭ জুলাই জেলা প্রশাসক সম্মেলনে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।
দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না জেলা পরিষদ নির্বাচন
প্রথমবার জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এ আইন অনুমোদনের পর অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানতে চানÑ জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে কি-না। প্রশ্নের জবাবে সরাসরি কোনো কিছু বলেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্ত্রিসভার একজন সিনিয়র সদস্য জানান, মোহাম্মদ নাসিমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখা যাক, আইনটা আগে হোক, তারপরে কি হয় দেখা যাবে’।
তবে দ্রুত জেলা পরিষদ নির্বাচন করতে চায় সরকার। সে কারণে প্রথমবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়তো নেয়া সম্ভব হবে না এমনটাই মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মন্ত্রী।
অনির্ধারিত আলোচনায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু বলেন, কোনো জেলা ছোট, আবার কোনো জেলা বড়। এ ক্ষেত্রে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে তো আসতে হবে।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৫টি ভাগে ভাগ করা হবে এশটি জেলাকে। সদস্য নির্বাচিত হবেন ১৫ জন। আর সংরক্ষিত আসন করা হবে পাঁচটি ভাগ করে। এ ক্ষেত্রে কোনো উপজেলাতে দু’জন সংসদ সদস্যও রয়েছে। কোনো জেলা অনেক ছোট। সে ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন মুজিবুল হক চুন্নু।
কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা অনুমোদন
মন্ত্রিসভা সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি), ২০১৫-২০৩৫ এবং নগর পরিবহন নীতি ২০১৫ এবং ইনস্টিটিউশনাল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে।
সংশোধিত এসটিপি সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক বিভাগ ২০ বছর মেয়াদি একটি পরিবহন পরিকল্পনা পেশ করেছে। এতে এমআরটি, বিআরটি, ইনার, মধ্য, এবং আউটার রিং রোড, আটটি রিডায়াল রোড, ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে, একুশটি টার্মিনাল এবং ঢাকার চারপাশে সার্কুলার ওয়াটারওয়ে করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশোধিত এসটিপিতে ট্রাফিক নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের উন্নয়ন এবং রুট র‌্যাশনালাইজেশন, পরিবহন পরিচালনায় কোম্পানি গঠন এবং বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন এসটিপি পরিকল্পনায় যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করে দেয়ার পর মুন্সীগঞ্জের বাওরভিটা থেকে নারায়ণগঞ্জের কাইকারটেক পর্যন্ত একটি নতুন মহাসড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। কৌশলগত পরিকল্পনায় এমআরটি লাইন নির্মাণের আগেই বালু নদীর পূর্বাঞ্চল থেকে ঢাকা বাইপাস সড়কের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
কবি শহীদ কাদরী ও মোহিতুলের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভার শোক
দেশের অন্যতম প্রধান কবি শহীদ কাদরী এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী আ ফ ম মুহিতুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে মন্ত্রিসভা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রিসভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই শোক প্রস্তাব পাস হয়। বৈঠকের শুরুতেই ওই দুজনের মৃত্যুতে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি শহীদ কাদরী (৭৪) গত রোববার নিউ ইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী মোহিতুল ইসলাম (৬৩) গত ২৫ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মারা যান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তার রিসিপশনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ ছিলেন মোহিতুল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সময় ধানম-ির ওই বাড়িতেই ছিলেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন