শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুইজনকে খুঁজছে পুলিশ

মদপান ও ধর্ষণে তরুণীর মৃত্যু আরাফাতের লাশ পুনরায় উত্তোলনের আবেদন করবে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস অব বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ওই তরুণীর বাবা বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলায় দায়ের করেছেন। মামলায় নিহতের বন্ধু মর্তুজা রায়হান চৌধুরীকে (২১) ধর্ষণকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অন্য চার আসামির মধ্যে তিন জন হলেন, নুহাত আলম তাফসির (২১), আরাফাত (২৮) ও নেহা (২৫)। আরেকজনের নাম জানা যায়নি। মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার মর্তুজা রাহয়ান চৌধুরী ও নুহাত আলম তাফসিরকে ৫দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অতিরিক্ত মদপানের ঘটনায় নিহত ওই তরুনীর আরেক বন্ধু আরাফাত রাজধানীর সিটি জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছে। চিকিৎসকরা মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘অতিরিক্ত মদ্যপান’ উল্লেখ করেছে। মৃত্যুর পরপরই বিষয়টি পুলিশকে না জানিয়ে তার লাশ দাফন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই ঘটনার রহস্য জানতে আরাফাতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে পুলিশ। প্রয়োজনে কবর থেকে তার লাশ উত্তোলনের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া নিহত তরুনীর বান্ধবী নেহাকে খুঁজছে পুলিশ। তিনি বর্তমানে সুস্থ কিংবা জীবিত আছে কি না এ বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে শুনেছি নেহার এক বন্ধু বিমানবন্দর থেকে মদ এনে উত্তরার ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে পান করেছে। আমরা সেই ছেলের নাম পরিচয় এখনো পাইনি। তাকে খোঁজা হচ্ছে। সেই মদপানের কারনেই কিছু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এছাড়া মদ পান করার কারণে বিষক্রিয়া হয়েছে কি না তা আমরা তদন্ত করছি। এছাড়াও উত্তরার যে রেস্টুরেন্ট থেকে এই মদ্যপান করা হয়েছিল, তাদের লাইসেন্স আছে কি না তাও তদন্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, নিহত তরুণীর ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, অতিরিক্ত মদপান, মদে বিষক্রিয়া অথবা বেশি মদ পান করিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা আরো দুজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, রায়হানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ইতিমধ্যে চেক করা হয়েছে। সেটি দেখে আমাদের মনে হয়েছেম যে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং এবিষয়ে দুইজনই অবগত ছিলেন। বাকিদের মোবাইল ফোনগুলো সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এটি মুলত একটি ড্রিংক্স পার্টি ছিল (মদপান)। পার্টি আয়োজনের অন্য কোন উদ্দেশ্য তদন্ত করে পাইনি।
গ্রেফতারকৃত মর্তুজা রাহয়ান চৌধুরী ও নুহাত আলম তাফসিরকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দিয়ে পুলিশ জানায়, নিহত তরুণী ও রায়হান আগে থেকেই প্রেমিক- প্রেমিকা ছিলেন। তারা আগে থেকেই ২৮ জানুয়ারি বিকালে দেখা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এদিন বিকালে তারা হাতিরপুলের মোতালিব প্লাজার সামনে একত্রিত হন। সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা হয় তাদের বন্ধু আরাফাতের। আরাফাত তাদেরকে গুলশানে একটি রেস্টুরেন্টে দাওয়াত আছে বলে নিমন্ত্রণ দেন। সেই দাওয়াতে যাওয়ার জন্য তারা প্রথমে আরাফাতের বাসায় যান। সেখান থেকে একযোগে যাওয়ার সময় আরাফাত তাদের জানায়, রেস্টুরেন্টের লোকেশন একটু বদল হয়েছে। উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বু সুট রেস্টুরেন্টে যান। রেস্টুরেন্টে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন ওই তরুণীর বন্ধু নেহা ও তার আরেক ছেলে বন্ধু। রেস্টুরেন্টে তারা ৫ জন একত্রিত হয়ে মদপান করেন। একপর্যায়ে নেহা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন নেহা ও তার বন্ধু চলে যায়। রেস্টুরেন্টে আরাফাত, রায়হান ও ওই তরুণী মদপান করতেই থাকে। একপর্যায়ে নিহত তরুণী টয়লেটে গিয়ে বমি করে। সেই অবস্থা দেখে রায়হান ও আরাফাত ওই তরুণীকে নিয়ে একসাথে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে একটি উবার নেয়। উবারে ওই তরুণী ও রায়হানকে গুলশান-২ এ নামিয়ে দেয় আরাফাত।
গুলশান-২ এ নেমে ওই তরুণী বলে যে, সে বাসায় যাবে না, তাকে তার বান্ধবী তাফসিরের বাসায় নিয়ে যেতে বলে। তখন তারা দুইজন মিলে মোহাম্মদপুর হোমস লিমিটেডের ৯ নম্বর বিল্ডিংয়ের বাসায় যায়। সেদিন তাফসির একা ছিল। ২৮ তারিখ রাতে তারা তাফসিরের বাসায় যান। এরপর রায়হান ও ভিক্টিম তরুণীকে এক রুমে রেখে অন্য রুমে চলে যায় তাফসির। পরদিন ভোরে ভিক্টিমকে তাফসিরের বাসায় রেখে নিজের বাসায় চলে যায় রায়হান। সকাল থেকে দুর্বল বোধ করছিলেন ভিকটিম তরুণী। দুপুরে তাফসিরের বাসায় এসে আবার খোঁজ খবর নিয়ে যায় রায়হান। শুক্রবার মধ্যরাতে রায়হান তার বন্ধু কোকোকে ফোন দিয়ে তরুণীর শারীরিক অসুস্থতার কথা জানায়। তখন কোকো এসে তাকে প্রথমে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইসিইউ সুবিধা না থাকায় ৪০ মিনিট পর তাকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আইসিইউতে রাখা হয় তরুণীকে। তখন রায়হান তরুনীর বাবাকে ফোন করে এবিষয়ে জানায়। তরুনীর বাসা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। ৩১ জানুয়ারি রবিবার সকালে ওই তরুনীর মৃত্যু হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন