শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনে ধীরগতি, পাসপোর্টের জন্য গলদঘর্ম

১ লাখ ১০ হাজার প্রবাসীর এনরোলমেন্ট সম্পন্ন

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:০০ পিএম

মালয়েশিয়ায় নতুন পাসপোর্ট হাতে পেতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের গলদঘর্ম। যথসময়ে পাসপোর্ট হাতে না পেলে মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষিত বৈধকরণ কর্মসূচি রিক্যালিব্রেশনের সুযোগ থেকে হাজার হাজার অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশির বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। নতুন পাসপোর্টের অভাবে দেশটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারি মাঝেও দেশটিতে দু’লক্ষাধিক অবৈধ বাংলাদেশি পালিয়ে পালিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। মালয়েশিয়া থেকে একাধিক ভুক্তভোগি এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। দেশটিতে সাত লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে।

মালয়েশিয়া সরকারের বৈধকরণ কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে ১ লাখ ১০ হাজার প্রবাসী কর্মীর নতুন পাসপোর্ট রি-ইস্যুর জন্য সার্ভারে এনরোলমেন্ট পুরোপুরি সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকা থেকে নতুন পাসপোর্ট সরবরাহে ধীরগতির দরুণ মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের মাঝে পাসপোর্ট সরবরাহ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে শত শত প্রবাসী কর্মী প্রতিদিন বাংলাদেশ হাইকমিশনে ধরণা এবং ফোন করেও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না।

প্রবাসীদের মাঝে নতুন পাসপোর্ট বিতরণ সহজীকরণের লক্ষ্যে পাসপোর্ট মোবাইল সার্ভিস সেন্টার আরো বাড়ানোর জন্য মালয়েশিয়া প্রবাসী কমিউনিটির শীর্ষ নেতা ও আওয়ামী লীগ মালয়েশিয়া শাখার যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ বাদল জোর দাবি জানিয়েছেন। প্রবাসী নেতা রাশেদ বাদল আজ বুধবার ইনকিলাবকে জানান, লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী বৈধতা লাভের জন্য নতুন পাসপোর্টের জন্য হাইকমিশনে আবেদন জমা দিয়েছেন। পাসপোর্টের অভাবে অনেক প্রবাসী চরম হতাশায় ভুগছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রবাসী নেতা বলেন, সময়মতো পাসপোর্ট না পেলে অনেক প্রবাসী ভিসা নবায়ন করতে ব্যর্থ হবে। এতে অতিরিক্ত জরিমানা গুনতে হবে তাদের এবং টাকা ও পাসপোর্ট হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে। তিনি বলেন, বর্তমানে কুয়ালালামপুরস্থ হাইকমিশন, জহুরবারু অগ্রণী রেমিট্যান্স সেন্টার, পেনাং কনসুলেট অফিস ও ক্যামুরুন হাইল্যান্ডে পাসপোর্ট সেবা দেয়া হচ্ছে। তিনি অনতিবিলম্বে ঢাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ নতুন পাসপোর্ট মালয়েশিয়ায় পাঠানোর জন্য সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

করোনা মহামারি পরিস্থিতিতেও হাইকমিশনে বিদ্যমান সীমিত জনবল ও লজিস্টিক নিয়ে রাতদিন একটানা অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে পাসপোর্টের নতুন আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে ইতোমধ্যে হাইকমিশনের প্রায় ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ম হয়েছে। এদের সবাই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছে। কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।

এদিকে, পাসপোর্ট নিয়ে সংশয় কাটছে না মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের। ভুক্তভোগি প্রবাসীরা বলছেন, গত বছর দালাল ও এজেন্ট এর মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে বৈধতার সুযোগ হারিয়েছেন, খুঁইয়েছেন পাসপোর্টও। এ বছর ভেন্ডর বা এজেন্ট নিয়োগ না দিয়ে মালিকের বৈধতার সুযোগ দিয়েছে। প্রতারণাও হবে না বলে আশা করছেন প্রবাসীরা। তবে সময় মত পাসপোর্ট হাতে না পেলে এবারও বৈধতার সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যাবে বলে শঙ্কায় রয়েছেন প্রবাসীরা। এ সুযোগে প্রবাসীদের হাতে দ্রুত পাসপোর্ট বিতরণের জন্য মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। অনুরোধের প্রেক্ষিতে আশ্বাসও দিয়েছেন মন্ত্রী। এ দিকে মালয়েশিয়ায় করোনা মহামারির কারণে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশটির সরকার বাধ্যতামূলক আরোপ করেছে স্বাস্থ্য, সামাজিক দূরত্ব ও বিভিন্ন বিধিনিষেধ।

হাইকমিশন সূত্র জানায়, সব নীতিমালা অনুসরণ করে ছুটির দিনসহ হাইকমিশনের সংশি¬ষ্টরা দিন রাত কাজ করে করোনাকালীন সময়েও পাসপোর্ট বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্রমতে, সিএমসিও এবং এসওপি নির্দেশনা মেনে প্রতিদিন ১৩শ পাসপোর্ট ডেলিভারি এবং প্রায় ১৫শ নতুন পাসপোর্টের আবেদন এন্ট্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও অন্যান্য সেবা নিয়মিত দেয়া হচ্ছে। অপর দিকে, পাসপোর্টের সঙ্কটের অজুহাত দিয়ে এক শ্রেণির দালাল চক্র হাইকমিশনের পাসপোর্ট ডেলিভারি শাখায় বকশিসের বিনিময়ে পাসপোর্ট দ্রুত পেতে সহায়তা করার অভিযোগ উঠছে।

গত নভেম্বর থেকে দেশটিতে শুরু হয়েছে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া রিক্যালিব্রেশন। আগামী জুন মাস পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া চালু থাকবে। এই বৈধকরণ পক্রিয়ায় বৈধ হতে নতুন পাসপোর্টের আবেদন বৃদ্ধি পেয়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ। মালয়েশিয়ার সরকার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম এসওপি ঘোষণার মাধ্যমে অধিক গণজমায়েতকে নিষিদ্ধ করেছে। তবুও প্রবাসীদের পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোভিড-১৯ মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাইকমিশনের কর্মীরা পাসপোর্ট বিতরণ করে যাচ্ছে। বিদেশি দূতাবাসের মধ্যে একমাত্র মালয়েশিয়া ডাকযোগের মাধ্যমে পাসপোর্ট এপি¬কেশন রিসিভ সিস্টেম চালু রেখেছে। পাসপোর্ট ডেলিভারিতে অনলাইন বুকিং সিস্টেম পাসপোর্ট সংক্রান্ত যে কোন সমস্যা সমাধানের বিষয়টি সহজতর করা হয়েছে। এ বিষয়ে পাসপোর্ট এন্ড ভিসা শাখার প্রধান মো. মশিউর রহমান তালুকদারকে আজ বুধবার একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মালয়েশিয়ায় নবনিযুক্ত হাই কমিশনার মো. গোলাম সারওয়ার অভিবাসী দিবসে তার বক্তব্যে বলেছেন, পাসপোর্ট দ্রুত ডেলিভারি দিতে ইতোমধ্যে হাইকমিশনে ৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং আরো নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মালয়েশিয়া পোস্ট অফিসের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে যাতে করে পাসপোর্ট মালয়েশিয়া দূর-দূরান্তে কর্মরত কর্মীদের সহজে পৌঁছে দেয়া যায়।

এদিকে, করোনা মহামারি সংক্রমণের কারণে দেশে আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীদের ফিরিয়ে নিতে মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে নতুন কর্মী নিয়োগ শুরু করতে প্রটোকল চূড়ান্ত করার তাগাদা দিয়েছে ঢাকা। এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার নতুন হাইকমিশনার হাজানাহ মো. হাশিম রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকমিশনারের মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকাররের প্রতি এসব আহ্বান জানান।

হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে বর্তমানে খুব ভালো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিরাজমান। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার, উচ্চশিক্ষা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, বাণিজ্য, পর্যটন, জ্বালানিসহ বিভিন্ন কারণে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরোধ করে বলেন, জি টু জি (দুই দেশের সরকারি ব্যবস্থাপনায়) ভিত্তিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু করতে নিয়োগ বিষয়ের প্রটোকল চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী করোনাকালে দেশে ফেরা প্রবাসী কর্মীদের ফিরিয়ে নিতে মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন