বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পাথর কোয়ারি ও ক্র্যাশারশিল্প রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

সিলেটের সীমান্তবর্তী ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছানাকান্দি ও লোভাছড়া পাথর কোয়ারিগুলো যুগ যুগ ধরে আমাদের অবকাঠামো নির্মান খাতের জন্য প্রয়োজনীয় পাথরের অন্যতম উৎস। এসব কোয়ারি একদিকে যেমন দেশের জন্য বছরে শত শত কোটি টাকা মূল্যের পাথরের যোগান দিচ্ছে অন্যদিকে পাহাড়ি নদীর স্রোতের সাথে উজান থেকে আসা পাথর উত্তোলন করে শ্রমিকরা জীবিকা নির্বাহ করছে এবং নদীর প্রবাহ ও গতিপথ ঠিক রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। পাকিস্তান আমলে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে নির্মানের মাধ্যমে পাথর কোয়ারির উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ বড় অবদান রাখে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে পাথরের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি এ খাতে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সিলেট অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাথর কোয়ারিগুলো ঘিরে গড়ে উঠা স্টোন ক্র্যাশার শিল্পেও কোটি শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ ও হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। পরিবেশগত ক্ষতির দোহাই দিয়ে হঠাৎ করে পাথর কোয়ারিগুলো বন্ধ করে দেয়ায় এ অঞ্চলে নানামুখী সামাজিক-অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সংকট দেখা দিয়েছে। পাথর কোয়ারিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং অনিয়ন্ত্রিত পাথর উত্তোলনের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা কেউ অস্বীকার করে না। তবে হঠাৎ করে কোয়ারিগুলো বন্ধ করে দেয়া এর একমাত্র সমাধান নয়। এ ধরণের সিদ্ধান্ত অনভিপ্রেত ও অবিবেচনা প্রসুত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

গত কয়েকদিন ধরে ইনকিলাবে প্রকাশিত ধারাবাহিক প্রতিবেদনে সিলেটের বন্ধ হয়ে যাওয়া পাথর কোয়ারি এবং এসব কোয়ারি ও ক্র্যাশার শিল্পের সাথে জড়িত হাজার হাজার পরিবারের কর্মহীন জীবনের দুর্ভোগের চিত্র বেরিয়ে এসেছে। পাথর কোয়ারি ও ক্র্যাশার শিল্পের সাথে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিরা ছাড়াও পাথর পরিবহন ও ব্যবসায়ের সাথে সারাদেশে আরো হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। গত বছর অনেকটা আকষ্মিকভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এ শিল্পের সাথে জড়িত সব পক্ষ জোরালো প্রতিবাদ ও আন্দোলনের ডাক দেয়। সিলেট জেলা ট্রাক মালিক সমিতির নেতারা প্রতিবাদ সমাবেশ ও সিলেট প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করেছেন। তারা পরিবেশগত সুরক্ষার অজুহাত দেখিয়ে মূলত ভারত থেকে নিম্নমানের পাথর আমদানি করে মধ্যস্বত্বভোগীদের আর্থিক সুবিধা হাসিলের অভিযোগ তুলেছেন। বাংলাদেশে যখন পাথর উত্তোলন বন্ধ করে রাখা হয়েছে, তখন সীমান্তের ওপারে ভারতের পাথর কোয়ারিগুলোতে পুরো উদ্যমে কাজ চলছে এবং সে সব পাথর বাংলাদেশে আসছে। ভারত থেকে নিম্ন মানের পাথর আমদানি করে একটি ব্যবসায়ী চক্র লাভবান হলেও থেমে গেছে ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছানাকান্দি ও লোভাছড়ার বিশাল এলাকার পাথর শিল্পের সাথে জড়িত লাখো মানুষের কর্মচাঞ্চল্য, কোলাহল এবং নানা ধরনের ব্যবসা-বানিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড।

যেখানে কোয়ারিগুলো থেকে প্রতিদিন শত শত টন পাথর উত্তোলন করে নদীর গতিপথ সচল রাখা সম্ভব হয়েছে, সেখানে বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ধলাই নদীর বুকে পাথর ও বালির স্তুপ জমে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। একেকটি ক্র্যাশার মেশিনের পেছনে কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং গড়ে ৬০-৭০জন শ্রমিক কাজ করে। ভোলাগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা চার শতাধিক ক্র্যাশার মেশিন বন্ধ থাকায় শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান এখন অনিশ্চিত। বিনিয়োগকারিদের অনেকে ঋণগ্রস্ত ও দেউলিয়া হতে চলেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ্আমাদের নদনদী, নদীবাহিত পলিমাটি এবং পাথর গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক অর্থনৈতিক সম্পদ। উজানের নদীবাহিত পলিমাটি উপকুলীয় এলাকায় নতুন নতুন চর ও জনপদ গড়ে তুললেও পাথরের উপযোগিতা ও প্রয়োজনীয়তা এত বেশি যে আমাদেরকে প্রতি বছর দেশের কোয়ারি থেকে উত্তোলিত পাথর ছাড়াও ভারত থেকে পাথর আমদানি করতে হয়। নদী ও পরিবেশগত সুরক্ষার স্বার্থে পাথর কোয়ারিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যন্ত্রপাতি এবং অনিয়ন্ত্রিত পাথর উত্তোলন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে এ অজুহাতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়ার কোনো যুক্তি নেই। সনাতন পদ্ধতিতে এবং পরিবেশগত নজরদারি বাড়িয়ে পাথর উত্তোলন চালু করার পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারত থেকে পাথর আমদানির সাথে জড়িত কোনো স্বার্থান্বেষী মহল ও মধ্যস্বত্বভোগির প্রভাবে নয়, দেশের স্বার্থ এবং বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। পাথর কোয়ারি ও ক্র্যাশার শিল্পের পাশাপাশি সিলেটে বিপুল কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন