শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

১৪৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিজেদের অবস্থান আরও বিস্তৃত ও মুনাফা বাড়াতে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি-কর্ণফুলী পাওয়ার ও বারাকা শিকলবাহা পাওয়ারে ১৪৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড।
নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করা বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার বুক বিল্ডিং পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। আইপিও তহবিলের অর্থ ব্যবহার করে ২১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি সাবসিডিয়ারিতে ১৪৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ইক্যুইটি বিনিয়োগের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহে খরচ করবে।

বারাকা পাওয়ার লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে ২০০৭ সালে ৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় বারাকা পাওয়ারের।
এরপরে ২০১৪ সালে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে ফার্নেস অয়েল জ্বালানী ভিত্তিক ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চট্টগ্রামে স্থাপনের অনুমতির পরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করে আসছে বলে জানান কোম্পানিটির কর্মকর্তারা।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রামে প্লান্টগুলো ঘুরে দেখা যায়, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের ব্যবসায়িক সাফল্যের ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটি দুটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করে। যার একটি কর্ণফুলী পাওয়ার লিমিটেড এবং অন্যটি হল বারাকা শিকলবাহা পাওয়ার লিমিটেড। সাবসিডিয়ারি দুটির ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার।

কর্ণফুলী পাওয়ার ১১০ মেগা-ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ফার্নেস ওয়েল ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান, যা ২০১৯ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। বারাকা শিকলবাহা পাওয়ার বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে ২০১৯ সালের মে মাসে। এটি ১০৫ মেগা-ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এইচএফও ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।

বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর কাদির শাফি বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে আমরাই প্রথম প্রতিষ্ঠান, যারা ডি-সালফারাইজেশন প্রযুক্তির প্ল্যান্ট স্থাপন করেছি যা সালফার নিঃসরণকে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় রাখতে সক্ষম। তিনি আরো বলেন, সঞ্চালন লাইনের অপর্যাপ্ততার কারণে আমাদের দুটি সাবসিডিয়ারি বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণরূপে উৎপাদনে যেতে পারছে না। তবে, আগামী মে মাসে আমরা সম্পূর্ণ উৎপাদনে যেতে সক্ষম হব এবং আমাদের কোম্পানির আয়ও বৃদ্ধি পাবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় থাকা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী চৌধুরী বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আর এ জন্য আমরা পুঁজিবাজারে আসছি। এতে করে জবাবদিহিতা বাড়ে। অন্যদিকে বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে করেসপন্ডিং ব্যাংকিং করতে গেলেও সুশাসন ও শেয়ার ধারণের অবস্থা দেখা হয়। সব মিলিয়ে শেয়ারবাজারে আসতে পারলে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ে।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো দেশজুড়ে আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বেসরকারী খাতের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিতে উন্নীত হওয়া। এজন্য আমাদের সাবসিডিয়ারিগুলোকে আরও লাভজনক করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আর এই লাভের অংশ সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাই।
পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থের ব্যবহার প্রসেঙ্গে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের চেয়ারম্যান বলে, আইপিও তহবিলের বড় অংশই কর্ণফুলী পাওয়ার এবং শিকলবাহা পাওয়ারে ইক্যুইটি বিনিয়োগে ব্যবহার করা হবে। বাকিটা ব্যবহার হবে আমাদের কোম্পানিটি কে কিছুটা ঋণ মুক্ত করতে। অন্যথায় আমাদের আয়ের বড় একটি অংশ ব্যাংক লোনের সুদ বাবদ খরচ হয়ে যাবে, যা বেশি মুনাফা অর্জনে বাধা সৃষ্টি করবে।
২০২০ সালের ৩০ জুনের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের মোট সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৬৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কোম্পানিটি সম্মিলিতভাবে মুনাফা করেছে ৬৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের দ্বিগুণের বেশি। বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের প্রান্তসীমা মূল্য (কাটঅফ প্রাইস) নির্ধারণে নিলাম আগামী ১৫ ফেব্রæয়ারি বিকাল ৫টা থেকে ১৮ ফেব্রæয়ারি বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

এরআগে গত ৩১ ডিসেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭৫৫তম কমিশন সভায় বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারকে বিডিংয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। কোম্পানিটির বিডিং অনুমোদনের সময় কমিশন থেকে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কমিশনের সম্মতিপত্র ইস্যুর তারিখ থেকে আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত কোম্পানিটি বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বাড়াতে পারবে না এবং সব সময় সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ন্যূনতম ৫১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন শর্ত আরোপ করায় দীর্ঘ মেয়াদে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবে বলে মনে করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

গতবছরের আর্থিক বিবরণী অনুসারে, পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্মিলিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) ২৩ টাকা । একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্মিলিত আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৩৭ পয়সা। বিগত ৫ বছরের আর্থিক বিবরণী অনুসারে, কর-পরবর্তী নিট মুনাফার ভারিত গড় হারে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ২২ পয়সা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন