শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শূন্য ভোটের রাজনীতি এবং আমাদের গণতন্ত্র

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

যেকোনো নির্বাচনের ফলাফল দুইটি। এক. পরাজয়। দুই. জয়। এর বাইরে টাই হতে পারে। এটা খুব কমই হয়। তবে প্রার্থী পরাজিত হলেও এর মধ্যে দুইটি ধরণ থাকে। এক. হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। দুই. শোচনীয় পরাজয়। প্রথমটিতে কিছুটা সম্মান ও সান্ত¦না জড়িয়ে থাকলেও দ্বিতীয়টিতে দুঃখ-বেদনা ছাড়া কিছু থাকে না। দুই প্রার্থী যদি শক্তিশালী দলের হন, সেখানে শোচনীয় পরাজয় বিজয়ী প্রার্থীর পক্ষেও মেনে নেয়া কঠিন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। বলা হয়েছিল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির দুই প্রার্থীই ভদ্রলোক। তাদের ইমেজ ভালো। কাজেই, দুইজনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও সম্মানজনক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, এমন আশা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বিএনপির প্রার্থী শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছেন। এমনই শোচনীয় যে, তাকে জামানত পর্যন্ত খোয়াতে হয়েছে। সাধারণত কোনো নির্বাচনে যত ভোট পড়ে তার ৮ ভাগের একভাগ বা ১২.৫০ শতাংশের কম ভোট পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। চসিক নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ২২.৫২ শতাংশ। জামানত রক্ষা করতে হলে মেয়র প্রার্থীদের কমপক্ষে ৫৪ হাজার ৪৩৬ ভোট পেতে হতো। এ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে জামানত খুইয়েছেন। অত্যন্ত শোচনীয় এবং লজ্জার ফলাফল। বলা বাহুল্য, এ নির্বাচনে একমাত্র ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ছাড়া অন্য সব দলের প্রার্থীও জামানত হারিয়েছেন। এতে লাভ হয়েছে নির্বাচন কমিশনের। তাকে জামানত ফেরত দিতে হয়নি। বিগত এক দশক ধরে নির্বাচন কমিশন যত নির্বাচনের আয়োজন করে আসছে, দেখা যাচ্ছে, তাতে সে এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরাই নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হচ্ছে। নির্বাচন শেষে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর মতোই ‘ভোট সুষ্ঠু হয়েছে’ বলে কমিশনকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখা যায়। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, নির্বাচন যেন শুধু ক্ষমতাসীন দল ও নির্বাচন কমিশন করে থাকে। অন্য দলের প্রার্থী কেবল অংশগ্রহণকারী। তাদের ক্ষেত্রে ‘পরাজয় বড় কথা নয়, অংশগ্রহণই বড় কথা’।

দুই.
জাতীয় থেকে স্থানীয় সব ধরনের নির্বাচনে বিএনপি’র শোচনীয় পরাজয় এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, দলটি নির্বাচন করছে কেন? নির্বাচনে অংশ না নিলে কি এমন ক্ষতি হয়? করলেও এমন শোচনীয় পরাজয় হচ্ছে কেন? প্রথম প্রশ্নের উত্তরে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবরই বলে আসছেন, আমরা দেখাতে চাই, এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। চসিক নির্বাচনের পরও এমন বক্তব্য দেয়া হয়েছে। তার এ কথার সূত্র ধরে বলা যায়, বিগত এক দশক ধরে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা এবং প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের দাপটে নির্বাচন যে সুষ্ঠু হচ্ছে না, তা দেশের জনগণ ভালো করেই জানে। বিএনপির নতুন করে দেখানোর কিছু নেই। যে পরীক্ষার্থী এসএসসি বা অন্যকোনো ফাইনাল পরীক্ষায় ফেল করে, পরবর্তীতে পাস করার জন্য সে নতুন করে চেষ্টা শুরু করে। নিজের ক্যারিয়ার ও লোকলজ্জা এড়ানোর জন্য তার মধ্যে ‘পাস করতেই হবে’ এমন মনোভাব সৃষ্টি হয়। শোচনীয় পরাজয়ের পর বিএনপির মধ্যে পাস করার এমন মনোভাব কিংবা কিভাবে পাস করা যায়, তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে বাধ্য করার মতো সুষ্ঠু, জোরালো ও জনসম্পৃক্ত উদ্যোগ নেই বললেই চলে। অনেকটা গয়রহভাবে চলছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরূপ আচরণ এড়িয়ে সৃজনশীল নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখাতে পারছে না। সরকার তার নেতা-কর্মীদের মধ্যে নির্যাতনের যে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে, তা বিগত এক দশকেও কাটিয়ে উঠতে পারছে না। বিরূপ পরিস্থিতিতে কীভাবে রাজনীতি করতে হয়, তা দলটির রাজনীতিতে অনুপস্থিত। দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, নির্বাচনে অংশ না নিলে যে ক্ষতি হয়, তা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলটির দিকভ্রান্ত হওয়া থেকে বোঝা যায়। নির্বাচন প্রতিরোধ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে সরকারের রোষাণলে পড়ে দলটির নেতা-কর্মীদের ব্যাপক নীপিড়ন-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের অভিযোগে হামলা-মামলায় পর্যুদস্ত হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে, নির্বাচনে অংশ না নিলে দলটির নেতা-কর্মীদের নতুন করে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ার শঙ্কায় শঙ্কিত অবস্থায় রয়েছে দলটি। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে দলটি নির্বাচনে অংশ নেয়াকে ‘ঢাল’ হিসেবে নিয়েছে। অর্থাৎ পিঠ বাঁচাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং শোচনীয় পরাজয়ের পথ বেছে নিয়েছে। তিন তিনবার ক্ষমতায় থাকা এবং দেশের ইতিহাসে সংসদে বৃহত্তম বিরোধী দলের আসনে বসা একটি দল যে এমন করুণ দশায় নিপতিত হবে, রাজনৈতিক অবস্থান ও সাংগঠনিক ভিত্তি এত দুর্বল হয়ে পড়বে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। তাহলে, এভাবেই কি দলটির রাজনীতি এগিয়ে যাবে? দলটির ভবিষ্যতই বা কি? বলার অপেক্ষা রাখে না, দলটির রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও দূরদর্শিতার অভাব যতই থাকুক না কেন, তার ব্যাপক জনসর্থন রয়েছে। কেবল ভোটের ফলাফলে এসে তা মুখ থুবড়ে পড়ছে। অথচ দলটির প্রার্থীদের লাইন ধরে ফেল করা এবং ভোট পাওয়ার হার যে তার প্রকৃত চিত্র নয়, তা সকলেরই জানা। এর কারণ, দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ দলের আদর্শ ও অন্তর্নিহিত শক্তিতে বিশ্বাস হারালেও দলটির একজন সাধারণ সমর্থক তার বিশ্বাস হারায়নি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সে তার ভোটটি দলটিকেই দেবে। তার এই বিশ্বাস এখন ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের ভয়ে সুপ্ত হয়ে রয়েছে। এই সাধারণ সমর্থক এবং ক্ষমতাসীন দলের আচরণ অপছন্দ করা ভোটারদের বিশ্বাস ও আস্থা দলটি জাগিয়ে তুলতে পারছে না। তাদের নির্ভয়ে ভোট দেয়ার সাহস যোগাতে পারছে না। অন্যদিকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কৌশলের কাছে দলটি বারবার মার খাচ্ছে। তারা দলটির নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার কাজটি ভোটের আগ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে করতে দিলেও ভোটের দিন কেন্দ্রের ধারেকাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। ঝেটিয়ে বিদায় করে দিচ্ছে। ফলে তারা নির্বিঘ্নে কারসাজির মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দিতে পারছে। ভোট কেন্দ্রে যত না ভোটার উপস্থিত হয়, ফলাফলে দেখা যায়, তার চেয়ে বহু গুণ বেশি ভোট পড়েছে। এসব ভোটের সিংহভাগই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, কোনো কোনো ভোট কেন্দ্রে বিএনপি’র প্রর্থীদের কেউ ভোটই দেয়নি। এটা অবিশ্বাস্য হলেও তার নজির চসিক নির্বাচনে দেখা গেছে। এ নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে বিএনপির মেয়র প্রার্থী কোনো ভোটই পায়নি। ১২১টি কেন্দ্রে পেয়েছে শূন্য থেকে ৫ ভোট। ৬৫টি কেন্দ্রে পেয়েছে ৬ থেকে ১০টি। এটা কি ভাবা যায়, বিএনপির মতো বৃহত্তম বিরোধী দল এমন ভোট পাবে? সাধারণ হিসাবে, যেসব কেন্দ্রে দলটি এই ভোট পেয়েছে, সেখানে দলটির যেসব অঙ্গ সংগঠনের কমিটি রয়েছে, শুধু তারা ভোট দিলেও তো কয়েক হাজার ভোট পড়ার কথা। তাহলে, তাদের ভোট গেল কোথায়? কিংবা তারা কেন ভোট দিতে যায়নি? এসব প্রশ্নের উত্তরে দলটির শীর্ষ নেতারা বরাবর যে কথা বলে আসছেন, তাই বলবেন। বলবেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হামলা ও পুলিশ প্রশাসনের ভয়-ভীতি এবং মামলা-মোকদ্দমা থেকে বেঁচে থাকার জন্যই নেতা-কর্মীরা ভোট কেন্দ্রে যায়নি। প্রশ্ন এসে যায়, তাহলে নেতা-কর্মীদের এই ভয়-ভীতি কাটিয়ে উঠার জন্য কিংবা উজ্জীবিত করার জন্য দলটি কি কাজ করছে? এভাবে ভয়-ভীতির মধ্য দিয়েই কি দলটির রাজনীতি বছরের পর বছর ধরে চলবে? রাজনীতি কি মামলা-মোকদ্দমা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হামলার ভয় নিয়ে করা যায়? আমাদের দেশের রাজনীতির ধরণই তো এরকম, বিরোধী দল ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের আনুকূল্য পাবে না। তাদের হামলা-মামলার মধ্য দিয়েই রাজনীতি করতে হয়। সময় অনুযায়ী, রাজনীতির ধরণ ও কৌশলের পরিবর্তন আনতে হয়। বিএনপির রাজনীতিতে কি এই বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল দেখা যায়? দেখা যাচ্ছে না। বরং দেখা যাচ্ছে, দলটি সব ধরনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে শোচনীয় পরাজয় বরণ করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। বিরূপ পরিস্থিতিতে কিভাবে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, এমন পরিকল্পনা বিগত দশ বছর ধরে দলটির কর্মকান্ডে দেখা যায়নি। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা থেকে শুরু করে মনোবল বৃদ্ধির যে কৌশল প্রয়োজন, তার কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় তারা বরযাত্রীর মতো অংশগ্রহণ করলেও ভোটের দিন হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে না বলে দুপুর না গড়াতেই বর্জন করে চলে যায়। একটি রাজনৈতিক দল কতটা অসংগঠিত হলে এবং তার নেতা-কর্মীর মনোবল দুর্বল হলে এমন কান্ড করতে পারে! নিশ্চিতভাবেই এই ব্যর্থতা দলের নীতি-নির্ধারকদের। তারা দলকে সুসংগঠিত করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। দেশের একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের এমন দুর্বল অবস্থান শুধু দলটির নয়, সুষ্ঠু রাজনীতি এবং গণতন্ত্রের জন্যও ক্ষতিকর।

তিন.
একটি বিষয় এখন স্পষ্ট, ক্ষমতাসীন দল যেভাবেই হোক তার ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার বিষয়টি পাকাপোক্ত করে ফেলেছে। এর ফলে প্রকারন্তরে এক দলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চসিকের নির্বাচনের দিকে তাকালে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এ নির্বাচনে বিরোধী দলের শুধু মেয়র প্রার্থীও পরাজিত হয়নি। সব কাউন্সিলর পদপার্থীই পরাজিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র থেকে শুরু করে সব কাউন্সিলর পাস করেছে। আগে দেখা গেছে, যেকোনো স্থানীয় নির্বাচনে বিরোধী দলের মেয়র প্রার্থী ফেল করলেও কিছু না কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী পাস করেছে। এখন তা ধীরে ধীরে উধাও হতে শুরু করেছে। এই যে ধাপে ধাপে পৌরসভার নির্বাচন হচ্ছে, তাতে বিএনপির কতজন মেয়র ও কাউন্সিলর পাস করেছে? তাদের খুঁজে পেতে হলে মাইক্রোস্কোপ লাগবে। ফাঁক-ফোকর দিয়ে যে কয়জজন পাস করেছে তাকে দৈব ঘটনা বা ক্ষমতাসীন দলের বেখেয়াল বললে ভুল হবে না। দেখা যাচ্ছে, জাতীয় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের জয়জয়কার। এ চিত্র থেকে বোঝা যায়, দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের অস্তিত্ব বলতে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ তার এই একচেটিয়া বিজয়কে তার উন্নয়নের সুফল বলে মনে করছে। দেশের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিচ্ছে বলে প্রচার করছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের উন্নয়ন চায় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগের শত্রুও তা চাইবে না। তবে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে গিয়ে দেশের মৌলিক চরিত্র গণতন্ত্র ও সুশাসন যে ধুলোয় মিশে যাচ্ছে, তা ভুলেও স্বীকার করছে না। দলটির আচরণে প্রতীয়মান হয়, দেশে অবারিত রাজনীতি ও গণতন্ত্র থাকলে তা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই, উন্নয়ন করতে হলে বিরোধী দলের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের হাত-পা বেঁধে ফেলতে হবে। কোনোভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেয়া যাবে না। এ নীতি নিয়েই দলটি দেশ পরিচালনা করছে। বলা বাহুল্য, অবরুদ্ধ রাজনীতি ও গণতন্ত্রের রুদ্ধকর অবস্থার মাঝে যে উন্নয়ন করছে, তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও তীব্র হয়ে উঠেছে। উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে মহাদুর্নীতি। গড়ে উঠেছে সুবিধাবাদী ও দুর্নীতিবাজ শ্রেণী, যারা উন্নয়নের ছোঁয়ায় কোটিপতি হয়ে গেছে। দেশে টাকা রাখার জায়গা না পেয়ে তারা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। (যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ বছরে দেশ থেকে ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে)। আর সাধারণ জনগণ পড়েছে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে। ইতোমধ্যে করোনায় দারিদ্র্যসীমার রেখাটির অবনতি হয়েছে। দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। তাহলে উন্নয়ন হচ্ছে কিভাবে? অর্ধেক মানুষের হাতেই যদি অর্থ না থাকে, তবে তারা কিভাবে জীবনযাপন করবে? অবকাঠামোগত এই উন্নয়নই বা তাদের কি সুফল দেবে? পর্যবেক্ষকরা বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের মধ্যে যে উন্নয়ন ঘটে তা টেকসই হয়। জনগণ ভাল থাকে। দেশ সভ্য হয়ে উঠে। এসব কথা পুরনো এবং ক্ষমতাসীন দল আমলে না নিলেও তা এখন বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্র ও সুশাসন এখন কি অবস্থায় রয়েছে, তার চিত্র পাওয়া যায় নোয়াখালির কোম্পানিগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জা, যিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই, তার এক মন্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের দুই-একজন ছাড়া অন্যরা পালানোর দরজাও খুঁজে পাবে না।’ ক্ষমতাসীন দলের একজন তৃণমূল পর্যায়ের নেতা যখন এ কথা বলেন, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না দেশের গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু রাজনীতি কী করুণ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ ক্ষমতাসীন দল, তার প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন দ্বারা বাক্সবন্দী হয়ে রয়েছে। তা নাহলে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা হয়েও তার এ বক্তব্য দেয়ার কথা নয়। তিনি যেন যাত্রার মঞ্চে হঠাৎ আবির্ভূত শ্বেতকাপড় পরিহিত ‘বিবেক’ চরিত্র হয়ে কথাটি বলেছেন।

চার.
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, দক্ষ নেতৃত্বের অভাবে বিরোধী দলগুলো জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এখন বিরোধী দল বলে যে দলগুলো রয়েছে তাদের নেতৃত্ব সেভাবে নেই বলে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি। বিরোধীদল বিশেষ করে বৃহত্তম বিরোধীদল বিএনপির রাজনীতির বর্তমান হালচাল দেখলে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব স্থবির হয়ে রয়েছে। রাজনীতির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যও তার মধ্যে দৃশ্যমান নয়। কেবল নির্বাচনে অংশগ্রহণ আর ফেল করার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তবে এ প্রশ্নও আসে, বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল স্থবির হয়ে পড়ল কেন? এর দায় কি সরকারের নেই? নিশ্চয়ই আছে। সরকার কি রাজনীতি ও গণতন্ত্রের উপর চেপে বসেনি? দুটোকে লকডাউনে রাখেনি? এসব প্রশ্নের উত্তর বোধকরি সকলেরই জানা। তবে করোনার জন্য যেমন লকডাউনের প্রয়োজন ছিল, তেমনি অর্থনীতি ও মানুষের কল্যাণের জন্য তা ধীরে ধীরে তুলেও নেয়া হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে লকডাউন থাকলে দেশের কি অবস্থা হতো? গণতন্ত্র ও রাজনীতি লকডাউনে থাকায় দেশের কি অবস্থা হয়েছে? এ পরিস্থিতি কি দীর্ঘকাল চলতে পারে কিংবা চলা উচিৎ? কাজেই, দেশের সুষ্ঠু রাজনীতি ও গণতন্ত্রের যে দীর্ঘ লকডাউন চলছে, তা ধীরে ধীরে তুলে নেয়া সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। দেশের গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু রাজনীতি বাঁচিয়ে রাখতে এর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বিরোধী দলেরও উচিৎ তৎপর হয়ে গঠনমূলক ও সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির মাধ্যমে নিজেকে সংগঠিত এবং শক্তিশালী করে তোলা।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md hossain ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:৪৯ এএম says : 0
The real also final is no shame for the actions for elections .So now what should be done to kick out that is now Farz for everybody.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন