কুয়েতে মানবপাচার ও অর্থপাচারের দায়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলের সাজা নিয়ে এখনো পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছে সরকার। পাপুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও সাজার বিষয়ে বারবার কুয়েত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো দেশটি কোনো তথ্য দেয়নি। সে কারণে বাংলাদেশ সরকারকে শুধু গণমাধ্যমের তথ্যের উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে।
জানা যায়, সাজাপ্রাপ্ত এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতারের পরেই তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কুয়েত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কুয়েতে বাংলাদেশের দূতাবাস ও ঢাকার কুয়েত দূতাবাসের মাধ্যমে পাপুলের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া এমপি পাপুলের সাজা হওয়ার পর কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে দেশটির সরকারের কাছে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। তবে এখনো কুয়েত সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য মেলেনি।
সূত্র জানায়, এমপি পাপুলের গ্রেফতার ও সাজা নিয়ে শুধু গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকেই তথ্য জানতে পেরেছে বাংলাদেশ সরকার। তবে সেই তথ্যের উপর নির্ভর করেই পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোনো এমপি ফৌজদারি আদালত থেকে দুই বছর সাজাপ্রাপ্ত হলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। এমপি পাপুল কুয়েতের ফৌজদারি আদালত থেকে চার বছর সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সে অনুযায়ী তারও সংসদ সদস্য পদ থাকার কথা নয়। এখন কুয়েত সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের রায়ের কপি পেলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলের বিষয়ে কুয়েত সরকারের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য পাওয়া গেলে সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেই তথ্য জাতীয় সংসদে পাঠানো হবে। সংসদই তখন পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এমপি পাপুলের বিষয়ে কুয়েত সরকারের কাছ থেকে আমরা এখনো অফিসিয়াল কোনো তথ্য পাইনি। তাদের কাছ থেকে অফিসিয়াল তথ্য পাওয়া গেলে সেটা আমরা আমাদের পার্লামেন্টকে দেব, আমাদের সরকারকে জানাব। তখন যে সিদ্ধান্ত নেয়ার নেয়া হবে। এ বিষয়ে সেখানে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে খোঁজখবর নেয়ার জন্য বলেছি। তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন।
এমপি পাপুলের বিষয়ে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এ বিষয়ে আমরা তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছি। কুয়েতে আমি নিজেও কথা বলেছি।
গত ২৮ জানুয়ারি কুয়েতের ফৌজদারি আদালত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলকে চার বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়। একই সঙ্গে তাকে ১৯ লাখ কুয়েতি রিয়াল (৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা) জরিমানা করা হয়। কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওথমান পাপুলের সঙ্গে সেদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জারাহকেও চার বছরের কারাদ- ও ১৯ লাখ কুয়েতি রিয়াল জরিমানা করেন।
মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে ২০২০ সালের ৬ জুন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করে কুয়েতের পুলিশ। তিনি তারপর থেকেই সে দেশের কারাগারে আটক ছিলেন। ছয় মাস বিচার প্রক্রিয়া শেষে তাকে ওই সাজা দেয়া হয়।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন কুয়েতে পাপুল সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত চেয়ে চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়াও পাপুলের স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাদের দুদক ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পাপুল ও পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন