শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মাওলানা এম এ মান্নানের ১৫তম ইন্তেকাল বার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৪ এএম

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেমে দ্বীন, উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, দেশবরেণ্য আলেম মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর আজ ১৫তম ইন্তেকাল বার্ষিকী। ২০০৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ইন্তেকাল করেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদারের্ছীনের উদ্যোগে আজ শনিবার সকাল ৯ টায় মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে নির্বাহী কমিটির বিশেষ সভা ও ইছালে ছাওয়াব মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। জমিয়াতুল মোদারের্ছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব শাব্বির আহমদ মোমতাজীর পরিচালনায় সভায় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তাঁর স্মৃতিচারণ করবেন।

দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা, দেশের আলেমকুলের শিরোমনি ও মাদরাসা শিক্ষার দিশারী মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ১৯৩৫ সালে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্রময় রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মাওলানা মান্নান (রহ.) ছিলেন দেশের আলেমকুলের শিরোমনি। তিনি আমেলদের আলেম, শিক্ষকদের শিক্ষক, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী আলেম-ওলামা-মাশায়েখের মুরুব্বি এবং জাতীয় বিবেকের কণ্ঠস্বর। রাজনীতিক এবং সমাজসেবক হিসেবে তিনি সমাজ গঠনে অনেক কীর্তি রেখে গেছেন। মাওলানা মান্নান সারাজীবন দেশ ও মানুষের খেদমতে নিবেদিত ছিলেন। যাপিত জীবনের সব পরিসরে তিনি জাতীয়, শিক্ষা, ও জনকল্যাণে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার প্রতিটি উদ্যোগ, প্রতিটি কর্মই হয়ে রয়েছে শিক্ষণীয়, অনুকরণীয়, অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।

মাওলানা এম এ মান্নান ছিলেন ক্ষণজন্মা প্রবাদ পুরুষ। তিনি নানান সময়ে দেশের ক্রান্তিলগ্নে আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। দেশের সকল ইসলামী ধারার রাজনৈতিক দলকে এক ছাতার নীচে এনে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষকে ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ করেছেন; ন্যায়ের রাজনীতির দিক্ষা দিয়েছেন। সবার কাছে ‘মাওলানা’ হিসেবে পরিচিতি পেলেও দেশের ডানপন্থী-বামপন্থী-মধ্যপন্থী সব ধারার রাজনৈতিক দল ও নেতাদের সঙ্গে সৌহাদ্য ও সম্পৃতি গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর দরজা সবার জন্য খোলা ছিল। তার কাছে আলেম এবং ইসলামী চিন্তাবিদরা যেমন আসতেন; তেমনি বামপন্থী ‘কমরেড’রা আসতেন। তিনি আলোচনা, বৈঠক, সেমিনার সবখানে বুদ্ধিদীপ্ত বক্তৃতার মাধ্যমে ‘মধ্যমনি’ হয়ে উঠতেন। তিনি আলেম-ওলামা ও মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষকদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষকে সহায়তা করেছেন। ন্যায়ের পথে নীতিনিষ্ঠ থেকে বেঁচে থাকার প্রেরণা দিয়েছেন লাখো বিপন্ন মানুষকে।

দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাওলানা মান্নানের অবদান অপরিসীম। ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন তুখোড় মেধাবী এবং বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী। শিক্ষক হিসেবে ছিলেন মানুষ গড়ার নিবেদিতপ্রাণ দক্ষ কারিগর। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নেতা, শাসক ও বাদশাদের সঙ্গে ছিল তার সুমধুর বন্ধুত্ব। তিনি ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় একজন রাজনীতিক, সংসদ সদস্য ও গণপ্রজাতন্ত্র বাংলাদেশে সরকারের একাধিকবার ক্যাবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। ধর্ম, শিক্ষা, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। নানান বৈষম্যের শিকার দেশের মাদরাসার শিক্ষকদের সুসংগঠিত করেছেন। তিনি সংগঠক হিসেবে ছিলেন আলোর দিশারী। তিনি যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই সাফল্য ধরা দিয়েছে, রেখেছেন মেধার স্বাক্ষর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনে তিনি অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি নিজে কয়েকটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার প্রচেষ্টায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠেছে। তিনি ছিলেন বহু প্রতিষ্ঠানের অবিভাবক। তার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শ্রম-সাধনা এবং শিক্ষা ও শিক্ষকদের ভাগ্যোন্নয়নে তার অসামান্য অবদান স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। ধর্ম ও ত্রাণ মন্ত্রী হিসেবেও তিনি প্রশাসন পরিচালনায় মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু মূল্যবান অবদান রেখেছেন। তবে মূল চিন্তা ছিল দেশের পিছিয়ে পড়া অবহেলিত বঞ্ছিত সমাজের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়-মাদরাসা মুখি করা। শিক্ষার মান উন্নীত করা, শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্য পুস্তকসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থা করা। শিক্ষক ও শিক্ষা-কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূরকরণ, বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা, আর্থ-সামাজিক মর্যাদা সুনিশ্চিত করা, সব শ্রেণির শিক্ষকদের একই প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করা। এতে তিনি সফল হয়েছেন।

ইংরেজ শাসনামল তথা ১৯৩০-এর দশকে দেশের মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলি-আউলিয়া ও পীর মশায়েখরা সংগঠনটির গোরাপত্তন করেন। তবে মাওলানা এম এ মান্নানের রাজনীতির পাশাপাশি এই অরাজনৈতিক সংগঠনটিকে সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠন ও সুসংগঠিত করতে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। তিনি ১৯৭৬ সালে সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে এর পুনর্গঠনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান। এতে সফল হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সভপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদারের্ছীন দেশের সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক সংগঠন।
সারাদেশ তথা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া রুপসা থেকে পাথুরিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা মাদরাসার শিক্ষক, আলেম সমাজ এখনো তাঁর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। করোনাভাইরাসের পার্দুভাবের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের বিভিন্ন জেলায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দেয়া ও মিলাদ মাফফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
আলেমকুল শিরমণি বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেসীনের সাবেক সভাপতি, সাবেক ত্রান ও পূনর্বাসন মন্ত্রী লাখ আলেমের ওস্তাদ, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) আমাদের এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান রহ. ছিলেন আওলাদে অলী, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ইসলামি ব্যাক্তিত্ব, মাদরাসা, কলেজ, স্কুলের শিক্ষক সমাজের অবিসংবাদিত নেতা, বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২৯ এএম says : 0
কৃতিমান এই ব্যক্তির আরবি, ইংরেজী ও ফারসি ভাষায় ছিল সমান দক্ষতা। এ দেশের আলেম সমাজ ও মাদরাসা ছাত্রদের জন্য অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। দৈনিক ইনকিলাব ও গাউসুল আজম কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা। তার অবদান কেয়ামত পর্যন্ত এ দেশের মানুষ স্মরণ করবে।
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম তৌকির ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৩২ এএম says : 0
আল্লাহ মরহুমকে জান্নাতে উঁচু মাকাম দান করুন। দেশের অসংখ্য স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার অধিকার বঞ্চিত হাজার হাজার শিক্ষকের মুখে হাসি ফোটাতে মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) যে ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন। তিনি আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ ও শিক্ষক সমাজের শ্রদ্ধেয় পথিকৃৎ ছিলেন। উনাদের পক্ষ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত ঈসালে সওয়াব মরহুমের নিকট পৌঁছাতে থাকবে।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৩৩ এএম says : 0
প্রিয় মাওলানা মরহুম এম এ মান্নান (রহ.) কেবল একটি নাম নয়, একটি চেতনা, একটি নেতৃত্ব এবং একটি সাধনার প্রতীক। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী প্রথিতযশা মহাক্কেক। তিনি ছিলেন এক খানদানী ঐতিহ্যের অধিকারী ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব, একটি ইতিহাস ও চেতনা। এদেশের আলেম সমাজ কাকে সবসময় স্মরণ করবে।
Total Reply(0)
মেহেদী ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৩৩ এএম says : 0
মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান মানুষে জন্য দুনিয়াতে যে খেদমত করে গেছেন সে কর্মসমূহের সওয়াব নিয়মিত পৌঁছাতে থাকবে, ইনশায়াল্লাহ।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৩৩ এএম says : 0
জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের আলেম সমাজ মরহুম এম এ মান্নানের মতো একজন বিচক্ষণ ব্যক্তির খুব বেশিই অভাব বোধ করছে। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে উচু স্থান দান করুন। আমীন।
Total Reply(0)
কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৩৩ এএম says : 0
মাওলানা মান্নান জাতীয় দুর্যোগ মূহূর্তে নানানভাবে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মাদরাসা শিক্ষাসহ শিক্ষাব্যস্থার উন্নয়ন, ওলামায়েকেরামের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট অবদান রেখে গেছেন। আল্লাহ তাকে উত্তম পুরস্কার দিন।
Total Reply(0)
shariful islam ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:০২ পিএম says : 0
প্রিয় মাওলানা মরহুম এম এ মান্নান (রহ.) কেবল একটি নাম নয়, একটি চেতনা, একটি নেতৃত্ব এবং একটি সাধনার প্রতীক। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী প্রথিতযশা মহাক্কেক। তিনি ছিলেন এক খানদানী ঐতিহ্যের অধিকারী ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব, একটি ইতিহাস ও চেতনা। এদেশের আলেম সমাজ তাকে সবসময় স্মরণ করবে।
Total Reply(0)
আহমাদ উল্যাহ শাহীন ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৩৬ পিএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা দাদাজানকে বেহেশতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন।তার শানকে বুলন্দ করুন।তার আওলাদদেরকে দ্বীনের জন্য কবুল করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন