বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মার্কিন নীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তনের পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘আমেরিকা ফাস্ট’ নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এক এক করে বিশ্বের বহু সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। ফলে দেশটি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল বিশ্ব থেকে। এতে করে তার বিশ্ব নেতৃত্ব খর্ব হয়েছে। ট্রাম্প মুসলিম দেশ ও মুসলমানের প্রতি খড়গ হস্ত হয়েছিলেন। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বাইডেন দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনছেন। বাইডেন ট্রাম্পের ‘অনৈক্যবাদ’র’ পরিবর্তে ‘বহুপক্ষবাদে’র পথে এগুচ্ছেন। তাই জাতি সংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং অন্যান্য বিশ্ব ও আঞ্চলিক সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রকে পুনরায় সংযুক্ত করছেন, যেগুলো ট্রাম্প ত্যাগ করেছিলেন। বাইডেন বৈশ্বিক নেতৃত্ব পুনঃদখলে মনোনিবেশ করেছেন। মুসলমান ও মুসলিম দেশগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।ফলে মার্কিন নীতিতে মুসলিম দেশের ও মুসলমানের অনুক‚ল হাওয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাইডেন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই যেসব ঘোষণা দেন, তার অন্যতম হচ্ছে, কয়েকটি মুসলিম দেশ তথা ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনের মানুষের উপর যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাতিল, যা জারি করেছিলেন ট্রাম্প। বাইডেন প্রশাসন ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের কথা বলছে। উপরন্তু ফিলিস্তিনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে ও ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের সাহায্য নবায়নে কাজ শুরু করেছে। গত ২৬ জানুয়ারি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে জাতিসঙ্ঘের ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড মিলস বলেন, ‘নতুন প্রশাসনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হবে পারস্পরিক সম্মতির দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানকে সমর্থন করা, যেখানে ইসরাইল শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে একটি টেকসই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পাশাপাশি বসবাস করবে। কোনো পক্ষেই শান্তি চাপিয়ে দেওয়া যায় না। অগ্রগতি এবং চূড়ান্ত সমাধানের জন্য ইসরাইল ও ফিলিস্তিনদের অংশগ্রহণ এবং চুক্তি প্রয়োজন। এসব উদ্দেশ্য এগিয়ে নিতে বাইডেন প্রশাসন ফিলিস্তিনের পাশাপাশি ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্য কার্যকলাপ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে, যার মধ্যে থাকবে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব ও জনগণের সাথে মার্কিন সম্পর্ক নবায়ন করা’। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকিও বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন মনে করেন, ‘দ্বি-রাষ্ট্র’ সমাধানই ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ’। এর আগে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস গত ৮ নভেম্বর আমেরিকান নিউজকে বলেন, ‘তার সরকার কোনোভাবেই ট্রাম্পের একপেশে নীতি সমর্থন করবে না। ফিলিস্তিনদের সাথে আবারো শান্তি আলোচনা শুরু করবে। একই সঙ্গে ইসরাইলের দখলদারিত্বকেও সমর্থন করবে না ডেমোক্র্যাট সরকার। ট্রাম্পের বন্ধ করা ফিলিস্তিনদের জন্য মানবিক ত্রাণ সহায়তা পুনরায় চালু করা হবে’। যুক্তরাষ্ট্রের এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন। গত ২৭ জানুয়ারি ফাতাহ পার্টির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জিবরীল রজব বলেছেন, ‘পূর্ব জেরুজালেম কনস্যুলেট খোলা, ওয়াশিংটনে পিএলওর কার্যালয় ফের খোলা এবং দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান করার ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি স্বাগত জানানোর মতো ইতিবাচক নির্দেশক’। অন্য এক খবরে প্রকাশ, ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিনি কূটনৈতিক মিশন ফের চালু করতে চান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কিন্তু তাতে মার্কিন জঙ্গিবিরোধী আইনের প্যাঁচে পড়তে পারেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা, যা তেরি করেছেন ট্রাম্প। তাই এই আইনী বাধা দূর করতে হবে বাইডেনকে। স্মরণীয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের গোয়েন্দা শাখায় জ্যেষ্ঠ পরিচালক পদে নিয়োগ পেয়েছেন মাহের বিতার। তিনি ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভুত মুসলিম আমেরিকান।

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতি পরিবর্তন করে হঠাৎ একতরফাভাবে ‘ড্রিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ ঘোষণা করেন ২০২০ সালে। তাতে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করেন এবং তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেন। ট্রাম্পের এই নীতি-পদক্ষেপ ফিলিস্তিন ও জাতিসংঘসহ প্রায় সমগ্র বিশ্ব প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষও। তবুও ট্রাম্প অন্ধভাবে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখেন। ফলে ইসরাইল আরও বলিয়ান হয়ে উঠে এবং ফিলিস্তিনি এলাকায় ইহুদী বসতি নির্মাণ শুরু ও ফিলিস্তিনদের উপর নির্যাতন বৃদ্ধি করে। বস্তুত, ট্রাম্পের নীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিরসন তো দূর হয়-ই নি, বরং আরও জটিল হয়েছে এবং ফিলিস্তিনদের রক্তে দেশটির মাটি-পানি রঙ্গিন হওয়া অব্যাহত আছে!

স্মরণীয় যে, মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিরসনের লক্ষ্যে নরওয়ের অসলোতে ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়, যা ‘অসলো চুক্তি’ নামে খ্যাত। সে চুক্তির অন্যতম শর্ত হচ্ছে, ফিলিস্তিনরা স্বশাসনের অধিকার পাবে এবং ইসরাইল পশ্চিমতীরের জেরিকো ও গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে। আর ইসরাইল রাষ্ট্রের বৈধতা স্বীকার করে নেবে পিএলও। এর তিন সপ্তাহ পর অসলো চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হয় ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউজে। তাতে সই করেন পিএলও’র তৎকালীন প্রধান ইয়াসির আরাফাত ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী রাবিন। এই চুক্তির কারণে আরাফাত ও রাবিন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। চুক্তিটি জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসী সমর্থন করে। এই চুক্তির অন্যতম আর একটি শর্ত হচ্ছে, ২০০০ সাল থেকে ফিলিস্তিন পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করবে। কিন্তু ইসরাইলের কট্টরপন্থীরা ও ফিলিস্তিনের হামাস এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে। ফলে চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়নি। অবশ্য, অসলো চুক্তির কারণেই ফিলিস্তিন স্বায়ত্তশাসন পেয়েছে, যা আজও বহাল আছে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী পূর্ণ স্বাধীনতা পায়নি।ফলে বিশ্বের অতি পুরাতন এই সংকট রয়েই গেছে। আরও স্মরণীয় যে, ২০০২ সালে আরব লিগে এক চুক্তি হয়। ‘আরব পিস ইনিশিয়েটিভ› শিরোনামের ঐ চুক্তিতে ইসরাইলের প্রতি ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের আগ পর্যন্ত বিদ্যমান সীমানা থেকে তার দখলদারি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হয়। বিনিময়ে দেশটির সঙ্গে আরব ও এই অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু এটিও কার্যকর করেনি ইসরাইল। ফলে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সংকট-সংঘাত অব্যাহতই আছে! মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য অসলো চুক্তি ও আরব লীগের চুক্তি বাস্তবায়ন করার কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান কর্তৃপক্ষ যত দ্রুত বুঝবে এবং তা বাস্তবায়নে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ততই কল্যাণকর। উল্লেখ্য, হামাস আগে দুই রাষ্ট্রের বিপক্ষে ছিল। কিন্তু দলটি স¤প্রতি নীতি পরিবর্তন করে দুই রাষ্ট্রের পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

যা’হোক, বাইডেন প্রশাসন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধের পূর্ণ তদন্তের পথ খুলে দেবে। উপরন্তু সেই তদন্তে অতীত ও বর্তমানের ইসরাইলী উচ্চপদস্থ সামরিক ও কূটনীতিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হতে পারে।

কতিপয় কূটনীতিক অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, ‘কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা। তাই বাইডেন প্রশাসন কাশ্মীর নিয়ে বিশেষ কোনও নীতি নিতে পারেন’। ইতোমধ্যেই মার্কিন নতুন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাশ্মীর বংশোদ্ভুত দুই আমেরিকান মুসলিম নারী নিয়োগ পেয়েছেন। তারা বিশ্বের অতি পুরাতন সংকট-কাশ্মীর সংকট নিরসন কিংবা আন্তর্জাতিকরণ করার চেষ্টা করতে পারেন বলে অনুমেয়। ভারতীয় বংশোদ্ভুত আমেরিকান ২০ জনকে বাইডেন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে বিজেপি ও আরএসএস-এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে অভিযোগে। এ ঘটনা থেকে অনুমেয় যে, ধর্মীয় উগ্রবাদীদের বাইডেন প্রশাসন বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না।তাতে করে বিজেপি, আরএসএস এবং বোকো হারাম, আল শাবাব, আইএস ইত্যাদি ধর্মীয় উগ্রবাদীদের দুর্দিন সন্নিকটে। দ্বিতীয়ত: বাইডেন প্রশাসন গণতন্ত্র ও অধিকারকে সর্বাধিকার দিয়েছেন।ফলে বিশ্বের কট্টরপন্থি ও কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো চরম বিপদে পড়তে পারে। আর যদি তা হয়, তাহলে মুসলিম দেশগুলোর এ জাতীয় সংকটে পড়তে পারে।

বাইডেন সরকার ইরানের সাথে সৃষ্ট সংকট দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র রবার্ট ম্যালিকে ইরানের ভারপ্রাপ্ত বিশেষ দূত হিসেবে নিযুক্ত করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। ম্যালি ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি রূপায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন গত ২৮ জানুয়ারি ইরান সম্পর্কে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ‘ইরানকে আগে পরামাণু চুক্তির সব শর্ত পূরণ করার পথে ফিরে যেতে হবে। তারপর অ্যামেরিকাও চুক্তিতে ফিরে যাবে। সে ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও শিথিল করা হতে পারে’। ব্লিংকেন চুক্তির স¤প্রসারণ ঘটিয়ে অন্যান্য কিছু বিতর্কিত বিষয়ও অন্তর্গত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।এর জবাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জরিফ এক টুইট বার্তায় আগে অ্যামেরিকাকে পরমাণু চুক্তিতে ফিরে যাবার ডাক দিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিবও ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বর্তমান অচলাবস্থা কাটাতে একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। এর আগে ব্লিংনকেন মার্কিন সিনেটে নিজের মন্ত্রিত্ব চূড়ান্ত হওয়ার অধিবেশনে বলেন, ‘ইরান পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি মেনে চললে আমেরিকা তার মিত্রদের নিয়ে তেহরানের সঙ্গে আরও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে পৌঁছার চেষ্টা করবে। তাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিসহ আরও বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।ইরানের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বেশ কিছু দিন বলবত থাকবে’। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে ৬ জাতির সাথে ইরানের যে পরমাণু চুক্তি হয়, তা ইরান অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে।তবুও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুট করে ২০১৮ সালের মে মাসে আমেরিকাকে উক্ত চুক্তি থেকে বের করে আনেন। উপরন্তু ইরানের ওপর একের পর এক কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এটা তিনি ইসরাইলের প্ররোচনায় করেছেন বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। অথচ চুক্তির অন্য পক্ষগুলো এখনও চুক্তির পক্ষেই আছে এবং আমেরিকা চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার কঠোর সমালোচনা করেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটে বলেন, ‘আফগানিস্তানে তালেবানের সঙ্গে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের স্বাক্ষরিত হওয়া শান্তি চুক্তি নিয়ে আমরা এই চুক্তির অনেক গভীরে যেতে চাই। সবকিছু খতিয়ে দেখেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’। গত ২৮ জানুয়ারি পেন্টাগন বলেছে, ‘বাইডেন প্রশাসন বিশ্বাস করে যে, ২০২০ সালের চুক্তির আওতায় জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের প্রতিশ্রুতি না মানলে তালেবানদের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। যদিও ওয়াশিংটন এই প্রচেষ্টাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে’। এছাড়া, পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী সেনা প্রত্যাহার করা কঠিন ব্যাপার হবে।’ এর প্রতিত্তোরে আফগান তালেবান বলেছে, মার্কিন সেনাদের দেশ ছাড়তে হবে। তা না হলে তাদের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এছাড়া, তালেবান দোহা চুক্তি মেনে চলছে না বলে আমেরিকা যে অভিযোগ তুলেছে তাও নাকচ করে দিয়েছে তারা। অপরদিকে, আফগান প্রেসিডেন্ট ঘানি মার্কিন সেনা প্রত্যাহার না করার আহবান জানিয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সমস্ত বিদেশী সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ তালেবানের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুয়ায়ী সব সেনা সরিয়ে নিয়ে দেশটিতে জাতিসংঘের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচিতদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সুযোগ করে দেয়া। এটা যতদিন না হয়, ততদিন দেশটিতে জাতিসংঘের শান্তি বাহিনী মোতায়েন করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মার্কিন প্রশাসনের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের সংকট দূর করতে হলে পাকিস্তানের সহায়তা জরুরি। তাই আমরা পাকিস্তানের সাথে পুনরায় সম্পকোন্নয়নে আগ্রহী’। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই পাকিস্তানের পরম বন্ধুরাষ্ট্র ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ট্রাম্পের হঠকারী নীতির কারণে সম্পর্ক চরম শীতল হয়ে। সংকট নিরসনে পাকিস্তানের অংশিদারিত্ব জরুরি। বিষয়টি মার্কিন নতুন প্রশাসন অনুধাবন করতে পেরেছেন বলেই অনুমেয়।

বাইডেন প্রশাসন ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করছে বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশ।কিন্তু কোন পর্যালোচনা নয়, সোজা কথা, ইরাক থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে অবিলম্বে। নতুবা দেশটিতে নতুন সংকট সৃষ্টি হবে, যার দায় বর্তাবে বাইডেন সরকারের উপর।দ্বিতীয়ত ইরাকে নিজেদের সেনা রেখে লিবিয়া থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার জন্য অন্য দেশের প্রতি আহবান জানানো অনৈতিক।তৃতীয়ত ইরাকে মার্কিন সেনা থাকার অজুহাতে বিভিন্ন দেশ লিবিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার নাও করতে পারে। তাই ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা জরুরি।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন