বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের স্বাগতিক হতে অনীহা বিসিবি’র লক্ষ্য ২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহন

প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : বিশ্বকাপের যাত্রা থেকেই এই মেগা আসরে সরাসরি অংশগ্রহণের যোগ্যতা ছিল আইসিসি’র পূর্ণ সদস্য দেশের। তবে ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের মূল আসরকে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ করতে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে, ফরমেটে এসেছে পরিবর্তন। পূর্ণ সদস্য দেশ হয়েও সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে না অন্তত ২টি দল। ১০ দলের এই বিশ্বকাপে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে আইসিসি। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে ইংল্যান্ডকে বাদ দিয়ে অন্য যারা সেরা ৭ এ থাকতে পারবে যারা, তারাই কেবল ওই বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করবে। অবশিষ্ট ২টি দল নির্ধারিত হবে কোয়াইফাইয়ার থেকে। ২০১৪ সালে আইসিসি’র বার্ষিক সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। র‌্যাংকিংয়ে তখন বাংলাদেশ ৯ নম্বরে থাকায় আইসিসি’র এই পলিসি নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। বিশ্বকাপে অংশগ্রহনের জন্য দ্বিতীয় সুযোগের সদ্বব্যহার করতে ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাইয়ারের স্বাগতিক হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে স্বাগতিক হতে পেরেছে। ওই সভা থেকে বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইয়ারের স্বাগতিক হতে পারাকেই বড় অর্জন মনে করেছে বিসিবি। তবে ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে ৭-এ উঠে আসায় এখন আর কোয়ালিফাইয়ারের স্বাগতিক হওয়ার কথা ভাবছে না বিসিবি। এমনটাই জানিয়েছেন বিসিবি’র সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজনÑ‘এখন পর্যন্ত কোয়ালিফাইয়ারের স্বাগতিক হিসেবে বাংলাদেশের নাম আছে। তবে আমরা যদি সরাসরি ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলতে পারি, তাহলে কোয়ালিফাইয়ারের স্বাগতিক হব কেন? তখন অন্য কোনো দেশকে কোয়ালিফাইয়ারের হোস্ট করবে আইসিসি।’
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ২০১৫’র ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে সেরা ৮ এ থাকতে হবেÑঅবিশ্বাস্যভাবে এই হিসাবটা মিলিয়েছে বাংলাদেশ দল। ২০০৬-এর পর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগটা পেতে র‌্যাংকিংয়ের জটিল হিসাব মেলাতে আইসিসি যে ডেডলাইট বেধে দিয়েছিল, ২০১৫-এর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে র‌্যাংকিংয়ে সেরা ৮-এ উঠে এসেছে বাংলাদেশ। গত বছর হোমে উপর্যুপরি তিন তিনটি বড় ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ দলকে হারাতে হয়েছে পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে!
র‌্যাংকিংয়ে ৯ থেকে এক লাফে ৭-এ উঠে ২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহণের ছক এঁকেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। যে করেই হোক, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষ ৮ দলের মধ্যে থাকা চাই-ই-চাই। এই হিসেব মেলাতে র‌্যাংকিংয়ে নীচু সারির কোন দলের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে খেলা থেকে বিরত থাকার পক্ষে ছিল বিসিবি। এ বছরের জানুয়ারীতে আইসিসি’র এফটিপিতে থাকা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোমে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ বাদ দিয়ে খেলেছে ওই প্রতিপক্ষের সঙ্গে ৪ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। ওয়ানডের বর্তমান র‌্যাংকিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশের নীচে নেমে গেছে বলে বাংলাদেশ সফরে তাদের আগ্রহে বিসিবি দেয়নি সম্মতি! এফটিপির নির্ধারিত সিরিজের বাইরে দ্বি-পাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে উপরের সারির দলগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে চাইছে না, র‌্যাংকিং হারানোর শঙ্কায়। আবার র‌্যাংকিংয়ে নীচের সারির দলগুলোর সঙ্গেও খেলতে আগ্রহী নয় বিসিবি একই শঙ্কায়। সে কারণেই গত ১০ মাস ওয়ানডেহীন কাটিয়েছে মাশরাফিরা। এ বছরের ৮ মাসে অস্ট্রেলিয়া যেখানে ইতোমধ্যে খেলে ফেলেছে ১৮ ওয়ানডে, ইংল্যান্ড ১৫, শ্রীলঙ্কা ১২, দক্ষিণ আফ্রিকা ১১, ভারত ৮, নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮টি করে, পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ে ৬টি করে ওয়ানডে, আইসিসি’র সহযোগী সদস্য আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের ম্যাচ সংখ্যা যথাক্রমে ৯,৭ ও ৫। সেখানে ওয়ানডে ম্যাচহীন বছরের প্রথম ৮ মাস কেটে গেছে বাংলাদেশের! বিলম্বিত হচ্ছে তামীমের ৫ হাজারী ক্লাবের সদস্যপদ।
র‌্যাংকিংয়ে ৭ নম্বরে থিতু বাংলাদেশ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। ১০ দলের ২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি কোয়ালিফাই করতে র‌্যাংকিংয়ে সেরা ৮-এ থাকতে হবে বাংলাদেশকে আরো ১৩ মাস। অথচ, এই সময়ে কি না পরিবর্তন করেছে সিদ্ধান্ত। ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে সামনে রেখে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ, যে সিরিজে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে রয়েছে ২টি ম্যাচ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে অবতীর্ন হওয়ার আগে আফগানিস্তানকে আতিথ্য দিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও চূড়ান্ত করে ফেলেছে বাংলাদেশ দল। যে দুটি সিরিজে আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ডের কারো কাছে হোঁচট খেলেই বিপদ। ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের নিচে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান এমন একটি সুযোগই খুঁজছে।
পলিসিতে ঝুঁকি নিয়ে এর আগেও একবার ভুল করেছে বিসিবি। টি-২০ বিশ্বকাপে সরাসরি সুপার টেনে খেলতে বিসিবি’র টাকায় ২০১২ সালে ইউরোপ সফরে বড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডকে ৩ ম্যাচের টি-২০ সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ করে টি-২০ র‌্যাংকিংয়ে অবিশ্বাস্যভাবে সেরা ৬-এ উঠে এসে নেদারল্যান্ডস সফরে খেয়েছে হোঁচট। নেদারল্যান্ডস এবং স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে র‌্যাংকিংয়ে ১০-এ নেমে ওই ভুল পলিসিই উন্মোচন করেছে বিসিবি। সামনে ১৩ মাসের পথটা অনেকটা দুর্গম। এই সময়ে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে ২০টি ওয়ানডে। তবে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যোগ্যতা অর্জন পরীক্ষায় কৃতকার্য বিসিবি ২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আইসিসিকে আর একবার শিক্ষা দিতে চায়। হিসেব করে পা ফেলছেন বলেই মনে করছেন বিসিবি’র সিইও।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন