শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘সুকুক’ বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক

দুবাইতে বিএসইসির রোডশো’র দ্বিতীয় দিন ব্যবসা সহজ করতে কাজ করছে কমিশন : বিএসইসি চেয়ারম্যান

হাসান সোহেল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে সুদের বন্ডের চেয়ে ইসলামিক বন্ডের (সুকুক) চাহিদা অনেক বেশি। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড এই সুকুক। এটাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। গতকাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বুাইয়ের পার্ক হায়াত হোটেলে ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ আয়োজিত ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : পোটেনশিয়াল অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেটস’ শীর্ষক ৪ দিনব্যাপি রোড শো’র দ্বিতীয় দিনে ‘সুকুক: দ্য নিউ ইনভেস্টমেন্ট অপরচ্যুনিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এই মত দেন।

বক্তারা বলেন, সুকুক বন্ডে ফিক্সড সুদ নেই। এটি ট্রাস্টির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে মূলত বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। আর ওই প্রকল্পের মালিকানার অংশীদার হয় সুকুক বন্ডের বিনিয়োগকারীরা। যা অন্য বন্ডে সুযোগ নেই। এছাড়া সুকুক বন্ড ব্যর্থ হলে, ওই প্রকল্পের সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকে।
তারা বলেন, বাংলাদেশের সুকুক বন্ড ইস্যুর অনেক সুযোগ রয়েছে। তবে এই বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে যেটা বড় প্রশ্ন হয়ে উঠতে পারে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়টি। কারন তালিকাভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে একজন বিনিয়োগকারীর যখন খুশি, তখন বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়ার সুযোগ থাকে। তাই এই বন্ডের তালিকাভুক্ত করার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়ার জন্য বলা হয়।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে সুকুক বন্ডের মতো পণ্যের অনেক চাহিদা রয়েছে। মুসলমানরা নির্দিষ্ট সুদের চেয়ে ইসলামিক প্রক্রিয়ায় আয় করতে চায়। তাই বাংলাদেশে সুকুক বন্ড চালুর অনেক সুযোগ রয়েছে। এই বন্ড থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান কমিশন ব্যবসাকে সহজ করে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরা ভালো ব্যবসা করার জন্য সময়ক্ষেপন করতে চাই না। কারও সময় নষ্ট করা আমাদের লক্ষ্য না। আমরা দ্রুত ও সহজে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি ছাড়াই কাজ করে দিচ্ছি।

সুকুক বন্ডের বিষয়ে দেশের নীতিনির্ধারকরা ইতিবাচক উল্লেখ করে প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমি দুবাই আসার আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ সচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে সাক্ষাত করেছি। তারা সবাই সুকুক বন্ডের বিষয়ে ইতিবাচক। নীতিনির্ধারকরা যেহেতু ইতিবাচক, তাই এই বন্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুবাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশ কনসুলেটের কনসাল জেনারেল মো. ইকবাল হুসাইন খান বলেন, বাংলাদেশে এখন বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে। সেখানে বিনিয়োগ দরকার। এই বিনিয়োগের চাহিদা সুকুক বন্ডের মাধ্যমে মেটানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য দুবাইয়ের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। মো. ইকবাল হুসাইন খান বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য সঠিক সময়ে এবং সঠিক জায়গায় রোড শো করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএসইসির কমিশনার কামালুজ্জামান, নির্বাহি পরিচালক মাহবুবুল আলম, বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, ইউসিবি ইনভেস্টমেন্টের সিইও তানজিম আলমগীর, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মাহতাবুর রহমান, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল, ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিইও রাশেদুল হাসান, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রহমত পাশা ও আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আরিফ খান।

উল্লেখ্য, শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড ‘সুকুক’। সুকুক একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেয়ার আইনি দলিল। সুকুক ইসলামি বন্ড চালু হলে সরকার উন্নয়ন কর্মকান্ডে অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস পাবে। এতোদিন সাধারণত বাজেটের খরচ মেটাতে এত দিন রাজস্ব সংগ্রহের পাশাপাশি সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও ব্যাংক ঋণের ওপর ভরসা করে আসছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে বড় উন্নয়ন কর্মকন্ডের মধ্যে রয়েছে-ঢাকা মেট্রো রেল, পদ্মা বহুমখী সেতু, পদ্মা রেল লিঙ্ক, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস রেলওয়ে, রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট, রামপাল তাপ বিদ্যু কেন্দ্র, মহেশখালি এলএনজি টার্মিনাল, মাতারবাড়ি পাওয়ার প্লান্ট, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলওয়ে লিঙ্ক, কর্নফুলী টানেল এবং পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প।

চারদিনব্যাপি এই রোডশো’ গত মঙ্গলবার শুরু হয়। আজ তৃতীয় দিন সকালে স্কোপ অব প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যান্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি সেমিনার হবে। এখানেও অংশ নেবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আর কাল শেষ দিনে ১২ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈঠক। এখানে বিনিয়োগকারীদের ছোট ছোট গ্রুপ অংশ নেবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন