বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশোভন কাজ থেকে বিরত রাখে

আহমাদুল্লাহ বিন রুহুল আমীন | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো সালাত। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে : কিয়ামত দিবসে বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেয়া হবে সালাতের মাধ্যমে। (মুসনাদে আহমাদ : ১৬৯৪৯)। হযরত উমর রা.-এর প্রসিদ্ধ বাণী : নিশ্চয়ই আমার কাছে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সালাত। যে ব্যক্তি সালাতের হেফাজত করল, যত্ম সহকারে তা আদায় করল, সে তার দ্বীনকে হেফাজত করল। আর যে তাতে অবহেলা করল, (দ্বীনের) অন্যান্য বিষয়ে সে আরো বেশি অবহেলা করবে। (মুয়াত্তা মালেক : বর্ণনা ৬)।

সালাত মূলত খোদাপ্রদত্ত এক মহান নিয়ামত। রাব্বুল আলামীনের এক বিশেষ উপহার, যা বান্দাকে সকল প্রকার অশ্লীলতা, পাপাচার, প্রবৃত্তিপূজা, ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাসের অন্ধ মোহ থেকে মুক্ত করে পূত-পবিত্র ও উন্নত এক আদর্শ জীবনের অধিকারী বানিয়ে দেয়। বিকশিত করে তোলে তার ভেতরের সকল সুকুমারবৃত্তি। তার জন্য খুলে দেয় চিরস্থায়ী জান্নাতের সুপ্রশস্ত দুয়ার।

সালাত হচ্ছে হিকমাহপূর্ণ এক অলৌকিক তরবিয়ত-ব্যবস্থা। সালাতের মাধ্যমেই ইখলাস, আত্মশুদ্ধি ও আত্মবিলোপের মহৎ গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে, যা বান্দাকে পৌঁছে দেয় আল্লাহর সান্নিধ্যের স্বর্ণশিখরে। সালাত এমন এক নিয়ন্ত্রক শক্তিতে পূর্ণ যে, খাঁটি মুসল্লি নামাজের বাইরের পরিবেশেও এমন কোনো কাজ করতে পারে না, যা মানুষের দৃষ্টিতে সালাতের ভাবমর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে। অদৃশ্য থেকে মূলত সালাতই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে তার রাত-দিনের সকল গতিবিধি।

শয়তানের ধোঁকায় যদি মুসল্লি কখনো কোনো অন্যায় বা অশোভনীয় কাজে লিপ্ত হতে চায় তখন নামাজের তরবিয়তে দীক্ষিত বিবেক তাকে বলে, তুমিই বল, একটু পরে যখন তুমি সালাতে তোমার মহান প্রভুর সামনে দাঁড়াবে তখন কি তোমার এই ভেবে লজ্জাবোধ হবে না যে, কেমন কালো মুখ ও কলুষিত হৃদয় নিয়ে তুমি আপন মালিকের সামনে দাঁড়াচ্ছ? যিনি অন্তর্যামী, তোমার গোপন-প্রকাশ্য সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।

যিনি ছাড়া তোমার আর কোনো ইলাহ নেই। যিনি তোমার একমাত্র আশ্রয়দাতা, যাঁর সামনে তোমাকে বার বার দাঁড়াতে হবে। যার কাছে তোমার সকল চাওয়া-পাওয়া। প্রতিটি মুহূর্তে তুমি যাঁর মুখাপেক্ষী। এগুলো জানার পরও কি তুমি তাঁর নাফরমানিতে লিপ্ত হবে? সালাত এভাবে মুসল্লিকে উপদেশ দিতে থাকে এবং পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বাধা দেয়। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা : নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবুত : ৪৫)।

ইমাম তবারী, ইবনে কাসীর, কুরতুবী, আলূসীসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসীরকারের মত অনুসারে আয়াতের মর্ম হলো, তাকবীর, তাসবীহ, কেরাত, আল্লাহর সামনে কিয়াম ও রুকু-সিজদাহসহ অনেক আমলের সমষ্টি হচ্ছে সালাত। এ কারণে সালাত যেন মুসল্লিকে বলে, তুমি কোনো অশ্লীল বা অন্যায় কাজ করো না। তুমি এমন প্রভুর নাফরমানি করো না, যিনি তোমার কৃত ইবাদতসমূহের প্রকৃত হকদার। তুমি এখন কিভাবে তাঁর অবাধ্য হবে, অথচ তুমি এমন আমল করেছ, যা তাঁর বড়ত্ব ও মহত্ত¡কে প্রকাশ করে। এরপরও যদি তাঁর অবাধ্য হও তবে এর মাধ্যমে তুমি স্ববিরোধী কাজে লিপ্ত হলে। (আর স্ববিরোধী কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি কোন্ স্তরে নেমে আসে সেটা তোমার ভালোই জানা আছে)। (রুহুল মাআনী : ১০/৪৮২)।

প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত নামাযে প্রতি রাকাতে বান্দাহ বলতে থাকে : ‘মালিকি ইয়াওমিদ দীন’। অর্থাৎ (তুমি) কর্মফল-দিবসের মালিক। আর তার স্মরণ হতে থাকে, তাকে কাল কর্মফল দিবসে মালিকের সামনে দাঁড়াতে হবে। সুতরাং তাঁর নাফরমানি থেকে, তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচতে হবে।

কোনো গুনাহ যদি নামাযের আগে হয় তাহলে তার গুনাহের কথা স্মরণ হয় ও লজ্জাবোধ হয়; বান্দা অনুতপ্ত হয় এবং ভবিষ্যতে গুনাহ না করার সংকল্প করে। তেমনি যদি কোনো গুনাহের নিয়ত থাকে তখন বান্দার মনে হয়, আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো; কাল কিয়ামতের দিনও তাঁর সামনে দাঁড়াতে হবে। তাহলে কিভাবে আমি নামাযের পর অমুক গুনাহ করার কথা ভাবতে পারি! এভাবে নামায বান্দাকে গুনাহ থেকে ফিরিয়ে রাখে, কৃত গুনাহ থেকে পবিত্র করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মিনহাজ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫০ এএম says : 0
সালাত মানুষের সুস্থ চিন্তা, ইমানি জীবনকে পূর্ণতা দেয়।
Total Reply(0)
তাজউদ্দীন আহমদ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫২ এএম says : 0
সালাতের নির্দেশ আল্লাহ থেকে মিরাজের সময় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে। সালাত (নামাজ) মুসলিম জীবনের অপরিহার্য একটি বিষয়, যা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, বৈষয়িক, ইহলৌকিক, পারলৌকিক, জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত এবং স্বীয় সত্তা ও সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধবিশেষ।
Total Reply(0)
মুহাম্মদ মুনিরুল হাছান ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫২ এএম says : 0
মানবজাতিকে আল্লাহতায়ালা ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা হয় এবং আল্লাহর নৈকট্যও লাভ করা যায়। আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হলো নামাজ।
Total Reply(0)
জব্বার ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫৩ এএম says : 0
নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বান্দা পাপমুক্ত হয়ে যায়। কারণ, নামাজ এমন একটি ইবাদত যাতে বান্দা শরীরের সবকয়টি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর সান্নিধ্য উপস্থিত হয়।
Total Reply(0)
মমতাজ আহমেদ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫৫ এএম says : 0
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ শুধু তাই নয়, নামাজ মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক পবিত্রতা সাধনের অনন্য হাতিয়ার।
Total Reply(0)
Monjur Rashed ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:২০ এএম says : 0
Now a days, people are offering Salat to Almighty Allah and getting involved in sin ( taking bribe , depriving people through dishonest business, being addicted to fornication) quite simultaneously. People are not getting rectified through Salat. True Muslims are very rare in the society. Munafiqs are abundant everywhere.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন