শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

জীবন বাঁচাতে রক্তদান : প্রচলিত আইন ও ইসলামী আইনি দিক

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৬ এএম

লাইসেন্স ব্যতীত বেসরকারী রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা; ভুল ব্যবস্থাপত্র প্রদান; অননুমোদিত পদ্ধতিতে রক্ত পরিসঞ্চালন; বিনষ্টযোগ্য উপকরণ বিনষ্ট না করা এবং তা পুনরায় ব্যবহার করা; অনিরীক্ষিত রক্ত পরিসঞ্চালন করা; অননুমোদিত উপায়ে রক্ত, রক্তের উপাদান ও রক্তজাত সামগ্রী সংগ্রহ, উৎপাদন ও বিতরণ করা’ অননুমোদিত ব্যক্তি কর্তৃক রক্ত পরিসঞ্চালন করা; রক্তদাতার ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করা এবং অতিরিক্ত সেবা ফিস আদায় করা এই আইন অনুসারে দন্ডনীয় অপরাধ। উল্লিখিত অপরাধসমূহের যে কোন একটি বা একাধিক অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচারান্তে দোষী সাব্যস্ত হলে সশ্রম কারাদন্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। এ আইনের অধীনে সংঘটিত সকল অপরাধ অআমলযোগ্য (ঘড়হ-পড়মহরুধনষব), জামিনযোগ্য, আপোষযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। মামলা দায়ের করতে হবে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। এই আইন অনুসারে কৃত অপরাধের বিচারের জন্য মামলা করতে পারবেন (ক) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং তার অবর্তমানে মহা-পরিচালকের দায়িত্ব পালনরত কোন কর্মকর্তা অথবা তার কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা এবং (খ) ক্ষতিগ্রস্থ কোন ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি। এরা ছাড়া আর কেউ এসব বিষয়ে মামলা দায়ের করতে পারবে না। অভিযোগ দায়ের করতে হবে লিখিতভাবে।

এছাড়া নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন ২০০২-এর আলোকে ২০০৮ সালে প্রণীত হয় রক্তদান বিধিমালা। এতে সরকার অথবা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রক্তবাহিত রোগ নির্ণয়, রক্তের অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রক্ত সংরক্ষণ এসব কাজের জন্য প্রয়োজনীয় রিএজেন্ট, রক্তের ব্যাগ ইত্যাদি সরবরাহ নিশ্চিত করা বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
রক্তদান ও পরিসঞ্চালনের শরয়ী বিধানঃ কোন বিশেষ মুহুর্তে স্বেচ্ছায় সুস্থ রক্তদাতার দেহ থেকে রক্ত সরবরাহ করে গ্রহীতার দেহে পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে রোগীর জীবন রক্ষা করা অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা নিরাপদ বিশুদ্ধ রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। রক্তদান প্রসঙ্গে আলিমদের মধ্যে দুটি মত প্রচলিত রয়েছে। নিম্নে তাদের মত দুটি প্রমাণসহ বিশ্লেষণ করা হলো-
এক. রক্তদান বৈধ নয়: অনেক আলিমের মতে, ইসলামে রক্তদান বৈধ নয়। তাঁদের দলীল ও যুক্তিগুলো হলো-
ক. খাদ্য হিসেবে রক্ত নিষিদ্ধঃ আল্লাহ তা’আলা প্রবাহিত রক্ত অর্থাৎ শিরা ও ধমনীর টাটকা রক্ত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন মৃত জীব, প্রবাহিত রক্ত (কাঁচা বা রান্না করে) শূকর এবং যেসব জীব-জন্তু আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। কিন্তু যদি কেউ নিরুপায় হয়ে পড়ে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে সীমালংঘনকারী না হয়, তাহলে তার কোন অপরাধ হবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়াবান।
তিনি আরও বলেন, তুমি বলে দাও, আমার কাছে যে ওহী পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে এমন কোন হারাম জিনিস আমি পাচ্ছি না যা একজন ভোজনকারী মানুষ সচরাচর খেয়ে থাকে; কিন্তু মৃত বা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের মাংস নিষিদ্ধ। কেননা এসব অপবিত্র- অথবা বা অবৈধ আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম নেওয়ার কারণে। তবে কেউ যদি অবাধ্য না হয়ে এবং সীমালংঘন না করে তা গ্রহণে বাধ্য হয়, তাহলে তোমার প্রতিপালক অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত, প্রবাহিত রক্ত ও শূকরের গোশত এবং এমন জানোয়ার যার ওপর আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কারো নাম নেয়া হয়েছে, কিন্তু যদি কাউকে বাধ্য করা হয়, সে যদি সীমালংঘনকারী না হয়, তাহলে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
খ. নিষিদ্ধ খাদ্য দ্বারা চিকিৎসা নিষিদ্ধঃ ইসলামী শরী’আতে যেসব খাদ্য ও পানীয় নিষিদ্ধ তা ঔষধ হিসেবে গ্রহণও নিষিদ্ধ। আবুদ দারদা রা. বলেন, রাসূল স. বলেন, নিশ্চয় রোগ ও ঔষধ আল্লাহ প্রদত্ত দুটি জিনিস। তিনি প্রত্যেক রোগের নিরাময় ব্যবস্থা করেছেন; সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর; তবে হারাম কোন কিছু দ্বারা চিকিৎসা নিও না।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল স. অপবিত্র ঔষধ থেকে নিষেধ করেছেন। নিষিদ্ধ জিনিসের মধ্যে আরোগ্য দানের ক্ষমতা নেই। ইসলামী শরীয়তে মদ একটি হারাম পানীয়। স্বাভাবিকভাবে তাই মদ দিয়ে ঔষধ গ্রহণও হারাম। এ সম্পর্কে তারেক বিন সুয়াইদ রা. বলেন, রাসূল স. কে মদ ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তা ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। তখন প্রশ্নকারী বলল, আমিতো এটা ঔষধ হিসেবে তৈরি করেছি। তখন রাসূল স. বললেন, মদ কখনো ঔষধ হতে পারে না, বরং সে নিজেই রোগের উপাদান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন