বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে দুদককে নির্দেশ হাইকোর্টের

পাপুলের স্ত্রী-মেয়ের জামিন জালিয়াতির তদন্ত সেলিনা-ওয়াফার মেয়াদ বাড়লো জামিনের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৪ এএম

এমপি পাপুলের স্ত্রী-কন্যার জামিন জালিয়াতি তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দ্ইু মাসের সময় বেধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশ সম্পর্কে দুদকের কৌঁসুলি খুরশিদ আলম খান জানান,আগাম জামিন আবেদনে নথি জালিয়াতির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে দুদক সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম,তার মেয়ে ওয়াফা ইসলাম এবং তদবিরকারক হাফেজ আহমেদসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে শহিদ ইসলাম পাপুল, তার স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার বিরুদ্ধে গতবছর ১১ নভেম্বর মামলা করে দুদক। এ মামলায় গতবছর ২৬ নভেম্বর তারা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। এর মধ্যে পাপুলের স্ত্রী ও মেয়ের আবেদনের শুনানি নিয়ে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তাদের আবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নথি দাখিল করা হয়। যেখানে বলা হয়, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি শাখার হিসাবে অর্থপাচার সংঘটিত হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি।

বিষয়টি আদালতের নজরে আসায় ওই নথিতে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞাকে তলব করে সুয়োমোটো রুল জারি করেন আদালত। তিনি হাজির হয়ে বলেন, এ নথি টেম্পার (জালিয়াতি) করা হয়েছে। তবে পাপুলের স্ত্রী-কন্যার আইনজীবীর দাবি, এ নথি এনআরবি ব্যাংক তাদের সরবরাহ করেছে।

এরপর আদালত এনআরবি ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। গত ১২ জানুয়ারি এনআরবি ব্যাংক জানায়, তারা এ ধরণের কাগজ তারা দেয়নি। পরে হাইকোর্ট এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নথি তলব করেন। এ আদেশ অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক নথি দাখিল করে।

নথি উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আদালতে বলেন, জামিন আবেদনে দেয়া নথির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নথির সাদৃশ্য নেই। জামিন আবেদনে যা দাখিল করা হয়েছে তা জালিয়াতি হয়েছে। এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তার তদন্ত হওয়া দরকার। শুনানিতে জামিন আবেদনকারীর আইনজীবীও বলেন, ওই নথি যদি জালিয়াতি হয়ে থাকে তবে এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত ১১ ফেব্রæয়ারি এ বিষয়ে আদেশের জন্য তারিখ ধার্য করেন। সে অনুসারে গতকাল উপরোক্ত এ আদেশ দেন।

হাইকোর্টে সেলিনা ইসলাম এমপি এবং ওয়াফা ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। এছাড়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমডি’র পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু। সকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

সেলিনা-ওয়াফার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি : এদিকে পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম কাজী শহিদ ইসলাম এবং তাদের মেয়ে ওয়াফা ইসলামের জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ একেএম ইমরুল কায়েশের আদালত জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। একই আদালত গত ২৭ ডিসেম্বর তার তাদের প্রথম অন্তর্বর্তীকালিন জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর তারা হাইকোর্টে জামিন প্রার্থনা করলে বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ডিভিশন বেঞ্চ ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের বিচারিক আদালত আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।


উল্লেখ্য, গত ১১ নভেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা এবং মেয়ে ওয়াফাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগের মামলায় চার বছরের কারাদন্ড নিয়ে এখন কুয়েতের কারাগারে পাপুল বন্দী রয়েছেন পাপুল। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্ণীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহিদ ইসলাম টাকার জোরে এমপি হন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও তিনি এমপি করেন একই প্রক্রিয়ায়। এ বিষয়টি নিয়েও উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে। দুদক এবং সিআইডিতেও রয়েছে পৃথক অনুসন্ধান। তাদের দেশত্যাগের ওপরও দুদকের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতের আদালতে চার বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন পাপুল। এখন তিনি কুয়েত কারাগারে রয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন