বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ভঙ্গুর দশায়

৫৬৮ কোটি টাকায় কুমিল্লায় হবে আন্ডারপাস-ইউলুপ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৬ এএম

অর্থনীতির লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কটি এরই মধ্যে ভঙ্গুর দশায় চলে গেছে। সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত গাড়ি ও ওজন নিয়ে চলার কারণে মহাসড়কটিতে সৃষ্টি হয়েছে রাটিং (রাস্তা দেবে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া)। বাইন্ডার্স কোর্স ও বিটুমিন কার্পেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেগুলো সংস্কারে সওজ অধিদপ্তরের মোটা অংকের টাকা ব্যয় হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের নকশা প্রণয়নের সময় ধরে নেয়া হয়েছিল, এতে প্রতি বছর গাড়ি চলাচল বাড়বে ৬ শতাংশ হারে। যদিও সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নির্দেশিকায় সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে যানবাহন চলাচলে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হারে প্রাক্কলনের নির্দেশনা রয়েছে। বাস্তবে দেখা গেল, চালুর পর চার লেনের মহাসড়কটিতে গাড়ির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। এতে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দেখা দিয়েছে রাটিং। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়কের ভিত। এতে করে মহাসড়কটি সংস্কারেও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (আইএমইডি) বিভাগের এক পর্যবেক্ষণ বলছে, চার লেনের মহাসড়কটিতে প্রকৌশল ও নকশাগত ত্রæটির কারণে শুধু স্থায়িত্ব কমছে না, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। মহাসড়কের যেসব অংশে রাটিংয়ের পরিমাণ বেশি, সেখানে ওয়্যারিং কোর্সের পুরুত্ব ৬০ মিলিমিটারের কম পাওয়া গেছে।

এদিকে, মহাসড়কটি সংস্কারের পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে মহাসড়কের কুমিল্লাতে তিনটি আন্ডার পাস ও একটি ইন্টারসেকশন ইউলুপ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ উদ্যোগের আওতায় জাতীয় এই মহাসড়কের ৯৩তম কিলোমিটার পদুয়ার বাজারে তিন রাস্তার মোড়ে নির্মাণ করা হবে আন্ডারপাসসহ ইউলুপ। অন্যদিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে নির্মাণ করা হবে আন্ডারপাস। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরেছে ৫৬৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

‘ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে তিনটি আন্ডারপাস ও পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশন ইউলুপ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যাবে। সেই সঙ্গে টেকসই, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থানের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক (এন-১) ও কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশনে ইউলুপ ও একটি আন্ডারপাস, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা গেট ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলী গেট সংলগ্ন স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে (এন-১) দুইটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক রাজধানী ঢাকাকে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযোগকারী যোগাযোগের অন্যতম করিডোর হিসাবে বিবেচিত। এ করিডোরের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের সঙ্গেও ভবিষ্যতে যোগাযোগের পরিকল্পনা রয়েছে। যেহেতু সড়কটি আঞ্চলিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহাসড়কের মেরুদÐ, এর বর্তমান ও ভবিষ্যতের ট্রাফিক চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষমতা ও গতিশীলতা থাকা অপরিহার্য। ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক এবং কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক দু’টি পদুয়ার বাজারে এসে মিলিত হয়ে চার রাস্তার মোড় তৈরি করেছে। এ মোড়ে ঢাকা-চাঁদপুর, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা, কুমিল্ল-চাঁদপুর ও চাঁদপুর-চট্টগ্রামগামী বিপুল সংখ্যক যানবাহনকে কম বেশি ৫০০ মিটারের মধ্যে ইউটার্ন করতে হয়। ফলে এ স্থলে অধিকাংশ সময়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। তাতে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয় এবং প্রায়ই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

এছাড়া কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা গেট ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলী গেট এলাকাতেও তীব্র যানজট দূর করাসহ সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এ জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশনে আন্ডারপাসসহ একটি ইউলুপ এবং কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা গেট ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলী গেট সংলগ্ন স্থানে জাতীয় মহাসড়কে দুইটি আন্ডারপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে ২ হাজার ১৪২ দশমিক ৭০ মিটার ইউলুপ নির্মাণ, তিনটি আন্ডারপাস, ১ দশমিক ৫৩ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ এবং একটি গ্রেডার, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি ট্রাক কেনা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ল্যান্ডস্কেপ, ইউটিলিটি শিফটিং ও বৃক্ষরোপণসহ অন্যান্য কাজও করা হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন-আল-রশীদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ৯৩তম কিলোমিটারে পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশনে একটি আন্ডারপাসসহ ইউলুপ ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা গেট সংলগ্ন স্থানে একটি এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হলে যানজট নিরসন হবে, দুর্ঘটনা কমবে এবং সমন্বিত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ সামগ্রিক আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Ataur Rahman ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
ইনকিলাবকে ধন্যবাদ ভালো একটা বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হোক।
Total Reply(0)
বারেক হোসাইন আপন ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক গ্ররুত্বপূর্ণ সড়ক। েএদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
Total Reply(0)
রাজিব ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
মহতি উদ্যোগটি দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানাচ্ছি।
Total Reply(0)
Jack+Ali ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:৪৪ এএম says : 0
When head of the country is 100% corrupt then all the corruption is committed by the criminal. It will happen until and unless we rule by Qur'an.
Total Reply(0)
Gobinda chandra debnath ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:০৩ পিএম says : 1
সরকারের এই সকল উদ্যোগ কে সব সময়ই সাধুবাদ জানাই। আজ এই সরকারের দূরদর্শীতা আছে বলেই দেশ দিন দিন উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। সব কিছুর পরে একটা কথা বলে শেষ করতে চাই,আমাদের উন্নতির সকল খাতে আরো বেশি দায়িত্বশীল এবং সৎ হওয়া জরুরী নাহলে দেশ এবং জনগনের অনেক লস হয়ে কিছু মানুষই লাভবান হবে। জয় বাংলা.... সবার উপরে দেশ
Total Reply(0)
জাগো বাংলা ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৪৪ পিএম says : 0
প্রথমে বলবো এরকম একটি বানিজ্যিক রাস্তা ৪ লাইনে থাকে কিভাবে,এই রাস্তা ৮ লাইনে উন্নিত করার প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন সরকারের,এই ছোট খাটো প্রকল্প টাকা নষ্ট বা দুর্নীতি চারা কিছুনা,ভবিষ্যৎ দেখা যাবে এই রাস্তা ৮ লাইন করতে গিয়ে আবার এইসব ভাঙ্গা পরতে পারে,তাই সরকারকে ঢাকা চট্রগ্রাম রাস্তা ৮ লাইনে করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হওক।
Total Reply(0)
Md. Moniruzzaman ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:২৯ পিএম says : 0
ভাই কী যে রিপোর্ট করেন? তৈরীর সময়ই তো এ অপশনগুলি রাখা হয়! না থাকলে পকেট ভারী হবে কিভাবে?
Total Reply(0)
Jonayed Bogdad ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:১৫ পিএম says : 1
এই উদ্যোগটি প্রশংসনীয়, পাশাপাশি ঢাকা-কুমিল্লা একটি রেল লাইন করা দরকার, তাহলে মহা সড়কে চাপ কমে যাবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন