বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ধানের শীষের ভোটাররা ১৩ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যে ঠাকুরগাঁও ছাড়ো

ঠাকুরগাঁওয়ে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর হুমকি

ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:৫০ পিএম

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছিলো আরও আগেই এবার কেবল অভিযোগ নয়, মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের হুমকি সম্বলিত ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ভিডিওতে দেখা যায়, মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ভোটারদের প্রকাশ্য একাধিক নির্বাচনী সভায় বলছেন, ‘যাঁদের মনে ধানের শীষের সঙ্গে পীড়িত আছে, তাঁরা ১৩ তারিখে ঠাকুরগাঁও ছেড়ে চলে যাবেন। ১৩ তারিখ সন্ধ্যার পরে তাঁদের দেখতে চাই না। তাঁদের ভোটকেন্দ্রে আসার কোনো প্রয়োজন নাই। তাহলে ভোটকেন্দ্রে যাবে শুধু কে? নৌকা, নৌকা আর নৌকা।’

প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও প্রশ্রয়ে এ ধরনের হুমকি ধামকির অভিযোগ বিএনপির পক্ষ থেকে আগেই সাংবাদিক সম্মেলন করে করা হয়েছিলো, তবে তা ছিলো সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুনাংশু দত্ত টিটোসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। এবার তা ভিডিওসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রচার হচ্ছে, যা নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত করছে। তবে এ নিয়ে প্রশ্ন কেবল বিরোধী দলেরই নয়, আওয়ামী লীগের একাংশের মধ্যেও এ নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলছেন,আমরা মনে করি, আমাদের নেত্রী গণতন্ত্রের মানস কন্যা, তাঁর ছবি ব্যবহার করে অগণতান্ত্রিক ভাষায় নির্বাচনী প্রচার, তাঁর ভাবমূর্তিরই অপূরণীয় ক্ষতি।

নির্বাচনী মাঠ ঘুরে দেখা যাচ্ছে, ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে তাঁরা প্রকাশ্য সভায় হুমকি দিচ্ছেন, নৌকায় ভোট না দিলে এলাকা ছাড়তে বলছেন, প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দেওয়ার কথা বলছেন।

সর্বশেষ ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় নির্বাচনী প্রচারণায় প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম। গত বৃহস্পতিবার শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে এক নির্বাচনী সভায় মাহমুদা বেগম বলেন,১৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় ভোট। ঠাকুরগাঁওয়ে নৌকার প্রার্থী আঞ্জুমান আরা বেগম মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য। এ কারণে তাঁর পক্ষে প্রচারণা চালাতে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সম্পাদক মাহমুদা কয়েক দিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছেন।

এর আগে বুধবার আরেক পথসভায় মাহমুদা বলেন, ‘সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যাঁরা নৌকায় ভোট দিতে না চান, ১৩ তারিখ সন্ধ্যার পরে আপনাদের চেহারা এলাকায় দেখতে চাই না। কোথায় যাবেন আমি জানি না। তবে ঠাকুরগাঁওয়ে থাকতে পারবেন না। যাঁরা নৌকায় ভোট না দেবেন, তাঁরা ঠাকুরগাঁও থেকে বিদায় নেবেন।’

নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে মহিলা আওয়ামী লীগের এই নেত্রী বলেন, ‘একদম পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, খাইদাই আমি জব্বারের, গান সালামেরটা গাইব না। কালকে থেকে রাস্তায় কোনো ধানের শীষের পোস্টার আমরা দেখতে চাই না। ধান বলে কোনো কথা নাই। ধানের শীষ বলে কোনো কথা নাই। আমরা শুধু দেখতে চাই নৌকা আর নৌকা। যদি ধান থাকে, তবে ধরে নেব এখানে আওয়ামী লীগ নাই।’

বক্তব্যের বিষয়ে মাহমুদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর হুমকিসম্বলিত এসব সভায় যেসব নেতৃবৃন্দকে দেখা গেছে তাঁদের অন্যতম জেলা আঃলীগ সাধারণ সম্পাদক দ্বীপক কুমার রায়, তিনি এ প্রসঙ্গে টেলিফোনে বলেন, এটা প্রটোকল যে, ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসলে বা সভা করলে দলীয় প্রটোকল অনুযায়ী জেলা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমাকে থাকতে হয়েছে। কিন্তু আমি তো ও ধরনের বক্তব্য দেইনি, কেউ বলতে পারবে না। তাঁর ৬ নং ওয়ার্ড এ নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক আছে দাবী করে তিনি জানান, এখানে তো স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে আমাদের কোনো সংঘাত ঘটেনি, সবার পোস্টার আছে, সবার অফিস চলছে, গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোট হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘পৌরসভায় ধানের শীষের ভোট তলানিতে ঠেকেছে। নিশ্চিত পরাজয় জেনে মাহমুদা আপার বক্তব্য এডিট করে বিএনপির লোকজন ছড়িয়ে দিতে পারে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোথাও এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন না।’

আর ধানের শীষের প্রার্থী শরিফুল ইসলামের অভিযোগ, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের এমন প্রকাশ্য বক্তব্যের পর ধানের শীষের কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। সাধারণ ভোটাররাও এতে শঙ্কিত। ভোটারদের হুমকি দেওয়ার ভিডিওর সিডিসহ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হচ্ছে।
বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌর মেয়র মির্জা ফয়সাল আমীনের অভিযোগ, অন্যায় করছে শাসক দল আর যুবদল সভাপতি মহিবুল্ল্যা আবু নূরসহ বিএনপির নির্বাচনী কর্মী নেতা সমর্থক পোলিং এজেন্টদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলার ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধ আজ হুমকির মুখে।

তবে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জিলহাজ উদ্দিন বলেন, এ ধরনের কোনো সিডি আমরা পাইনি তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব বক্তব্য আমি শুনেছি যা ঠিক হলে অনেক গর্হিত কাজ, তদন্ত করে এসব ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে সেই মাহমুদা বেগম কোথায় অবস্থান করছেন, সে ব্যাপারে সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আমি খোঁজ নিতে বলেছি, তিনি নাকি 'সোনার বাংলা' রিসোর্টে অবস্থান করছেন যা পৌরসভার বাইরে, তাই তাঁর বিষয়ে এই মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। তিনি বলেন, বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তদন্ত করে কিছু ব্যাপারে সত্যতা পাওয়া গেলে, তাঁকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা, পীরগঞ্জ পৌরসভার মতোই ভোটারদের ব্যপক উৎসাহব্যঞ্জক উপস্থিতিসহ উৎসবমুখোর পরিবেশে একটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন