শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

কার্নিভালের ক্যানভাসে কল্যাণ

প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইমরান মাহমুদ, কক্সবাজার থেকে: তখনও ঝিরি ঝিরি ঝরছে বৃষ্টি। মনের কোণেও জমতে শুরু করেছে ঘন কালো মেঘ। কালো মুখেই সমুদ্রতীরে ঘেরা সৌন্দর্য্যে ভরা শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যখন পৌঁছেছি, তখনও ঈষাণ কোনে খেলা করছে মেঘের দল। তবে সময় গড়িয়ে যখনই মাঠে প্রবেশ করলো একটি গাড়ি অমনি উধাও হতে শুরু করেছে মেঘের দল। নইলে এত্ত তারা চোখে পড়বে কি করে? একে একে নেমে এলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একসময়ের মাঠ কাঁপানো সব তারকারা। ছিলেন ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জয়ের নায়ক আকরাম খান। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে যাত্রা শুরু। বাংলাদেশ ওয়ানডেতে আজ বিশ্বের উদীয়মান শক্তি। অন্যদিকে দেশের হয়ে প্রথম আন্তুর্জাতিক টেস্টের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নাইমুর রহমান দুর্জয়। তার হাত ধরেই ওয়ানেড পর শুরু টেস্টে টাইগারদের স্বপ্নের যাত্রা। দীর্ঘ একটা সময় ঘোরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নানা স্বপ্নের জাল বুনেছেন, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, খালেদ মেহমুদ সুজন, হাবিবুল বাশার সুমন, খালেদ মাসুদ পাইলটরা। বলা চলে তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেট পথ এতটা স্বপ্নময় হয়েছে। ধিরে ধিরে তারা মাঠ ছেড়েছেন। এখন মাঠে-ব্যাট বল হাতে সাবেক এই ক্রিকেটারা না থাকলেও, সেই স্বপ্নের মাশাল এখন মাশরাফি-সাকিব-তামিমদের হাতে। তাই বলে কি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে নেই স্বপ্ন সারথীদের? পারেন!
আর সেই স্বপ্ন গোটা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয়ে আবারও ‘মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভাল’ (এসসিসি) ব্যানারে ব্যাট-বল হাতে মাঠে নামছেন অকরাম-দুর্জয়রা। তবে এবার ক্রিকেটকে একতাবদ্ধ কারার স্বপ্ন দেখাচ্ছে সোনালী দিনের ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেশের যে কোন দুর্যোগে ভূমিকা রাখার অঙ্গিকার নিয়ে আজ থেকে কক্সবাজার মাঠে গাড়াচ্ছে সাবেকদের ক্রিকেট উৎসব। ৬টি দলে ভাগ হয়ে মাঠ মাতাবেন তারা। আজ দুপুর ২টায় শেখ কামাল স্টেডিয়ামের এক নাম্বার গ্রাউন্ডে খালেদ মাসুদ পাইলটের নেতৃত্বে রেনেসা রাজশাহীর মুখোমুখী হবে খালেদ মেহমুদ সুজনের কনফিডেন্স ঢাকা মেট্রো। একই সময় গ্রাউন্ড ‘টু’তে আকরাম খানের নেতৃত্বে ইস্পাহানি চিটাগাংয়ের মুখোমুখি হবে নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের জেবি ঢাকা ডিভিশন। এমন একটি মিলন মেলার সাক্ষী হতে পেরে আবেগে ভেসে গেলেন আকরাম খান, ‘আসলে আগেও যেমন মাঠে নামার জন্য উদগ্রীব থাকতাম। এখনও আছি। তখন স্বপ্ন এক রকম ছিল, এখন অন্যরকম। আমাদের মূলত উদ্দেশ্যে হলো এই ক্রিকেট কার্নিভালের মাধ্যমে সব ক্রিকেটারকে এক প্লাটফর্মে আনা।’
গতকাল ঢাকা থেকে ৬টি দলের হয়ে ৯০ জন সাবেক ক্রিকেটার সাগর কন্যা কক্সবাজারে এসেছেন। কিন্তু এসেই পড়েছেন বৃষ্টির কবলে। তবে ছয় দলের অধিনায়ক বৃষ্টি দেখে একটুও ঘাবড়ে জাননি। তাদের উৎসবের রঙকে কোনভাবেই ফিঁকে করে দিতে পারবে না বৃষ্টি এমনটাই জানান আকরাম, ‘বৃষ্টি আমাদের থামিয়ে দিতে পারবে না। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ২৫ ওভারের পরিবর্তে ১২ ওভার খেলবো, তা না পারলে ৬ ওভার খেলবো। তাও যদি না পারি, তাহলে সবাই মিলে ফুটবল খেলবো।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি পরিচালক নাইমুর রহমান দুর্জয় ক্রিকেট মাঠে দর্শকদের আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘জানি না এখন আমাদের খেলা দেখতে মাঠে দর্শকরা আসবে কিনা। একটা সময় ছিল যখন আকরাম ভাই, নান্নু ভাই- আমরা খেলেছি, মাঠে দর্শক আসতো। যদি আমাদের কেউ এখনও স্মরণ রাখে তাহলে হয়তো এই মাঠে খেলা দেখতে আসবে।’
এই কার্নিভালের মাধ্যমে সাবেক ক্রিকেটারদের একত্রিত করার মাধ্যমে একতাবদ্ধ হওয়ার বার্তা জানান আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। তিনি বলেন, ‘আগে আমরা যারা এক সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি, এখন কর্মব্যস্ততার কারণে আমাদের বছরের পর বছর দেখা হয় না। আমি মনে করি এই কার্নিভালের মাধ্যমে সবাই আবার একতাবদ্ধ হবে। এভাবে আমরা হয়তো ক্রিকেটের উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখতে পারবো।’ আর খালেদ মেহমুদ সুজন মনে করিয়ে দিলেন এই কার্নিভালের তাদের মহৎ একটি স্বপ্নের কথাও, ‘এই ক্রিকেট কার্নিভালের মাধ্যমে যে আয় হবে সেটি ব্যবহার করতে চাই সেসব ক্রিকেটারদের জন্য যারা টাকার জন্য চিকিৎসা করতে পারেন না।’ এছড়া সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনও জানালেন ফের ব্যাট-বল নিয়ে মাঠে নামার উদ্দেশ্য শুধু ক্রিকেটের কল্যাণে তাদের ভূমিকা রাখার কথা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন