শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক

পরিবহন শ্রমিক নেতা বাচ্চুর গাড়ি চালক ছিনতাইয়ে জড়িত

খলিলুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে খোকা। ফুলবাড়ীয়া বাস টার্মিনালের শ্রমিক নেতা ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর গাড়ি চালক। এর বাইরেও তার পরিচয় রয়েছে। তিনি সংঘবদ্ধ একটি ছিনতাই চক্রের সদস্য। সম্প্রতি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। শুধু খোকাকে নয়, গত শনিবার ওই চক্রের আরো ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে একদিনের রিমান্ডে নেয়া হয় তাদের। এ সময় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্টসূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম কোতোয়ালি থানাধীন তাঁতিবাজার রামোনের অফিস থেকে একটি ব্যাগের মধ্যে ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা করার উদ্দেশ্যে রিকশায় রওনা হন। শাহবাগ থানাধীন টিএনটি এক্সচেঞ্জ এর পূর্ব পাশে রাস্তার ওপর টেম্পুস্ট্যান্ডে পৌঁছালে ওই চক্রের সদস্যরা তার রিকশার গতিরোধ করে তাকে ঘিরে ধরে। এ সময় তারা ভুক্তভোগী শহিদুলকে উপর্যপুরি কিল, ঘুষি, থাপ্পড় ও চাকু দিয়ে তার ডান চোখের নিচে গুরুতর আঘাত করে তার কাছে থাকা ব্যাগভর্তি ৩৫ লাখ টাকা জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় গত শনিবার পুলিশ ওই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মাজহারুল ইসলাম ওরফে রাকিব, জহিরুল তালুকদার, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে খোকা, সেলিম ওরফে ল্যাংরা সেলিম, লালন ও মো. সেলিম মিয়া। তাদের মধ্যে আবু বক্কর সিক্কিক ওরফে খোকা পরিবহন নেতা ইসমাঈল হোসেন বাচ্চুর ড্রাইভার। ওই চক্রের সাথে ফুলবাড়িয়া ঢাকা জেলা শ্রমিক পরিবহন যানবহান শ্রমিক ইউনিয়নে সভাপতি নূরুল আমিন নূরও জড়িত বলে জানা গেছে। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে তারা চাঞ্চ্যলকর তথ্য নিয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ অভিযানে নেমেছে। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, ফুলবাড়ীয়া বাস টার্মিনালের শ্রমিক নেতা ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর বিরুদ্ধেও রয়েছে খুন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা। এর আগে শ্রমিকদের দাবির মুখে তাকে টার্মিনাল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। করোনার মধ্যে তিনি আবার টার্মিনালে ফিরে আসেন।
ডিবির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিশু বিশ্বাস ইনকিলাবকে বলেন, শাহবাগ এলাকা থেকে ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার ৬ আসামিকে একদিনের রিমান্ডে আনা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। রিমান্ডে শেষে গতকাল তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকই পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন। ইতোমধ্যে এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িতদের নাম তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। তবে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউনিক, শ্যামলি, হানিফ, মামুন পরিবহনসহ বিভিন্ন নামিদামি বাস সার্ভিসের টিকিট দেয়ার কথা বলে বাস টার্মিনালে ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যাত্রীদের নির্যাতন, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া-আসার বেলায় সায়েদাবাদ অথবা ফুলবাড়ীয়ায় আসামাত্র প্রতিদিন এই চক্রের খপ্পরে পড়তে হয় অসংখ্য যাত্রীকে। এ ছড়াও উত্তরবঙ্গগামী যাত্রী এবং সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমিকরা এই হয়রানীর শিকার হন। অনেকে তর্কে জড়াতে গিয়ে সক্রিয় এই চক্রের সদস্যদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন এবং সর্বস্ব হারিয়ে বাড়ি ফেরেন।
সম্প্রতি এই চক্রের হাতে নির্যাতনের শিকার সাইফুল ইসলাম নামের একজন যাত্রী ইনকিলাবকে জানান, তিনি অনেকদিন থেকে ঢাকায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। তার বাড়ি সিলেটে। কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে তিনি সায়েদাবাদে এসে প্রায় বিপাকে পড়েন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাড়ি ফেরার জন্য সায়েদাবাদে আসা মাত্র কয়েকজন যুবক আমাকে ঘিরে ফেলে। বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে সায়েদাবাদে আসামাত্র কয়েকজন যুবক আমাকে জোরপূর্বক টিকিট ধরিয়ে দেয়।
সরেজমিনে সায়েদাবাদ, ফুলবাড়ীয়া ও গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরো এলাকাজুড়ে টিকিট কাউন্টারগুলোর সামনে উঠতি বয়সি যুবক দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রী আসামাত্র তারা বিভিন্ন বাসের টিকিট দেয়ার আশ্বাস দিতে থাকে। অনেককে নিয়ে টানাটানির ঘটনাও চোখে পড়ে। এতে বিপাকে পড়েন বিশেষ করে ভদ্র নারী-পুরুষ।
সায়েদাবাদে একটি বাস কাউন্টারে থাকা তাসলিমা বেগম নামের এক যাত্রী ইনকিলাবকে বলেন, জোর করে আমাকে এক যুবক এই কাউন্টারে নিয়ে আসছে। কে নিয়ে আসছে জানতে চাইলে তিনি কাউন্টারে উপস্থিত এক যুবকে দেখান। সেই যবুকের নাম জানতে চাইলে সে কাউন্টার থেকে চলে যান।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একটি বাস কাউন্টারের ম্যানেজার ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাস স্ট্যান্ড ও টার্মিনালগুলো বিভিন্ন চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রতিদিন যাত্রীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। কেউ সাহস করে কিছু বলতে পারে না। আর কেউ কথা বললেই আক্রমণের শিকার হয়। শুধু তাই নয়, যাত্রীদে কাছ থেকে মূলবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়েও চলে যায় ওই চক্রের সদস্যরা। তবে ওই চক্রের সদস্যদের মধ্যে বেশির ভাগই পরিবহন শ্রমিক বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নামে সংগঠনের আড়ালেও ছিনতাইকারীরা আশ্রয় নিয়েছে। ওই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী ও দেশের সাধারণ যাত্রীদের ছিনতাই করে থাকে। পরে ছিনতাইয়ের একটি টাকার একটি অংশ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের দিতে হয়। তবে অনেকেই জানে না এরা কারা। আর যারা জানে তারা প্রাণের ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় সড়ক পরিবহন মটর শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান মোস্তাকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমি বাইরে আছি। পরে আপনাকে ফোন দিচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
ezana huda ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:৪১ এএম says : 0
Shajahan Khan is their God Father, he is involved with them.
Total Reply(0)
রিয়াদ হাসান জুয়েল ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:৫৬ এএম says : 0
এই সব চক্রদের আইনের আওতায় আনতে হবে,,,
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন