বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বদলির আদেশ

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল আলীমের সাক্ষরিত পরিপত্রে সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বদলী করা হয়েছে।
আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে আগামী ২২ ফেব্রæয়ারির মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল ত্যাগ করে রুমা উপজেলায় যোগদান করতে অন্যথায় ২৩ ফেব্রæয়ারি থেকে অবমুক্ত ঘোষণা করা হবে বলে ও বদলীজনিত আদেশপত্রে হুঁশিয়ারি করা হয়। এমন আদেশ পেয়ে সাতকানিয়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও সর্বস্তরের জনগণের মাঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখা গেছে। অপরদিকে আশীষ চিরাণ তার নিজস্ব ফেসবুক পেজে বদলীজনিত আদেশের ফলে হাঁ হতাশার বিষয়টা ব্যক্ত করতে দেখা যায়।
সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশীষ চিরাণের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে এসব অভিযোগ লিখিতভাবে জানানো হয়। শুধুমাত্র সাতকানিয়া উপজেলার জনার কেঁওচিয়া প্রাথমিক কমিউনিটি বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের সময় ১০ লাখ টাকার লেনদেনের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। জানা গেছে, সরকার ঘোষিত কমিউনিটি বিদ্যালয়কে সরকার এমপিওভুক্ত করার নির্দেশনা দেয়। সাতকানিয়া উপজেলার কেওঁচিয়া ইউনিয়নের জনার কেওঁচিয়ার কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। ওই কমিউনিটি বিদ্যালয়ে শুরু থেকেই স্কুল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফের স্ত্রী জেসমিন আক্তার নকল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে এবং ফারহানা ইয়াসমিন নামের এক মহিলার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সনদ ব্যবহার করে চাকরি করে আসছিলেন। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি অবৈধ উপায়ে এই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরিদর্শনে যান সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশীষ চিরাণ। তিনি পরিদর্শনে গিয়ে ফারহানা ইয়াসমিনকে বলেন, আপনি ভুয়া নাম আর আরেকজনের সনদ ব্যবহার করে দীর্ঘ এতবছর চাকরি করে আসছেন। তাই আপনি পদত্যাগ করেন। আর না হয় বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরেকজনের সনদ ব্যবহার করে জেসমিন আক্তার এতদিন ফারহানা ইয়াসমিনের নাম ব্যবহার করে আসছিল। জেসমিন আক্তার পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে পদত্যাগ পত্র জমা দেন উপজেলা শিক্ষা অফিসে। সেই সময় একজনের সার্টিফিকেট আরেকজনে ব্যবহার করে এবং নাম পরিবর্তন করে ভুয়া শিক্ষিকা প্রমাণ করতে পারায় সাতকানিয়া জুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশীষ চিরাণ।
কিন্তু পরবর্তীতে পদত্যাগে বাধ্য করা ভুয়া শিক্ষিকাকে অফিসে ডেকে আনেন আশীষ চিরাণ। এ সময় কার সনদ তিনি ব্যবহার করে আসছিলেন তা জানতে চান জেসমিন আক্তারের কাছ থেকে। তখন তদন্তে প্রমানিত সেই ভুয়া মহিলা শিক্ষক স্বীকার করেন বলেন, এটা তার আপন বড় ভাইয়ে স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিনের সনদ। তিনি চাকরি করতে অনিচ্ছুক। তাই তার সনদ তিনি ব্যবহার করে আসছিলেন। অপরাধে দুজনের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকেন। তাদের শাস্তি না দিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরাণ উল্টো ভুয়া শিক্ষিকা জেসমিনের ভাবী ফারহানাকে ডেকে পরামর্শ দেন, আপনাকে আমরা সরকারিকরণ করব। এই ভুয়া শিক্ষিকার অসুস্থতাজনিত পদত্যাগপত্রটি আপনার বলে আপনি হাইকোর্টে একটা মামলা করেন। যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হবে। কিন্তু আমার অফিস মামলায় হাজিরা বা আপত্তি জানাবে না। তখন আপনি একদিনের জন্য চাকরি না করলেও আপনিই সরকারিকরণে অন্তর্ভুক্ত হবেন। অভিযোগ রয়েছে, আসলকে নকল আর নকলকে আসল বানানোর জন্য টাকা লেনদেন হয়েছে ১০ লাখ।
এদিকে, ভুয়া সনদ ব্যবহার করে নকল শিক্ষকের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশীষ চিরাণ বলেন, আসলে আমার তদন্তে ভুয়া প্রমান হয়েছে এটা সত্য। এবং এই ভুয়ার বিষয়ে আমি জেলা শিক্ষা অফিসকেও জানিয়েছি, কিন্তু একদিনের জন্য ও চাকরি না করা যেই ফারহানা ইয়াসমিন কি কারণে বা কার পরামর্শে হাইকোর্টে গিয়ে একটি মামলা করে আদেশ হাসিল করেছেন তা আমার বোধগম্য নয়। আসলে মামলা কখন হয়েছে আমি জানিনা এবং সমনও পায়নি। তাই একদিনের জন্য ও চাকরি না করা সেই ফারহানা ইয়াসমিন হাইকোর্টকে ভুল রিপোর্ট প্রদান করে আদেশ আনলে সেই আদেশ মূলে কাজ সম্পাদন করেছি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন