মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উন্নয়ন প্রকল্প গতি হারাচ্ছে

টার্গেট পূরণে রাজউকসহ ব্যর্থ অনেক বিভাগ : ব্যয় ও জনভোগান্তি বাড়ছে

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার সুপারিশ করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে এ লেক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। যাতে ২০১০ সালের জুন থেকে শুরু হয়ে এ প্রকল্প ২০১৩ সালের জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। তবে নানা ধীরগতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে পরবর্তীতে ২০১৯ সালে জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

তারপরও এ বছর প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না মর্মে, ২০১৬ সালে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে এর প্রাক্কলিত ব্যয় ২ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। গত ২০২০ সালে আবার মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এরপর প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাবের ওপর পিইসির সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার সিদ্ধান্ত মতে, গত বছর এপ্রলি মাসে ১০ জুন থেকে ২০২১ সালের জনে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বলা হয়। কিন্তু সংশোধিত প্রকল্পের ডিপি আর পাঠাচ্ছে না রাজউক। এ প্রকল্পের জন্য চলছে এখনো চিঠি চালাচালি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করতে না পারায় কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পসহ ২টি প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ সভার ডেকেছিলেন। কিন্তু সভাটি আর হয়নি।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন আল রশীদ ইনকিলাবকে বলেন, গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প, রাজশাহী মহানগরীর বিদ্যমান রাস্তা প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে একটি কার্যকর যানজট মুক্ত নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গুলশান, বনানী, বারিধারা শীর্ষক প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে এবং রাজউকের পক্ষ থেকে ৯ হাজার ৫৬২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এই প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। গুলশান-বনানী-মহাখালী লেক অংশের ৬৯ দশমিক ১৪৪ একর জমির ওপর এ প্রকল্প।

এসব এলাকায় জমি অধিগ্রহণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে নিদের্শনা দেওয়া হয় ঢাকা জেলা প্রশাসককে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ কেস নং-০১/১৬-১৭-এর মাধ্যমে কড়াইল (এক অংশ), মহাখালী, তেজগাঁও শিল্প এলাকা ও বনানী আবাসিক এলাকার মৌজায় নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। দীর্ঘ দশবছর ধরে এসব এলাকা মানুষ ভুমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারছে না। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ হয়নি।
‘রাজশাহী কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারি মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে এক অবস্থা বিরাজ করছে। প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু হয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করতে না পারায় তিন দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। উন্নয়ন কাজটি সম্পন্ন করার জন্য সর্বশেষ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তারপরও কাজটি শেষ হয়নি। এবার চতুর্থ দফায় মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। যদিও এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে ছয়টি বছর। মাত্র ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক প্রস্তুকরণ ও আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম সমাপ্ত করতেই যাচ্ছে এ সময়।

এ অবস্থায় লেকের উন্নয়ন করে এলাকার পরিবেশ উন্নয়ন, সৌন্দর্য বর্ধন ও নগরবাসীর বিনোদন সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য মূল প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৬ জুলাই অনুমোদন লাভ করে। এর ব্যয় ছিল ৪১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে নানা কারণে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়। ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা।

ওই সভার সিদ্ধান্ত মেনে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৮৮৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ধরে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়। একই বছরের ১১ অক্টোবর প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। বর্ধিত যানজট পরিস্থিতে রাজশাহী মহানগরীর কল্পনা সিনেমা হল থেকে রামচন্দ্রপুর, রাণী নগর হয়ে তালাইমারি মোড় পর্যন্ত এলাকাটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। ২০০৬ সালে রাজশাহী বাইপাস সড়ক চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

রাজশাহী বাইপাস সড়ক চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর বর্তমান পুরাতন নাটোর রোড সিটির পূর্ব গেট ও পশ্চিম গেট থেকে নগর কেন্দ্রে প্রবেশের সংযোগ সড়ক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বর্ধিত যানবাহনের তুলনায় বর্তমান সড়কটি খুবই অপ্রশস্ত। ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার লম্বা সড়কটির প্রশস্ততা ৬৭ ফুট। অপ্রশস্ত সড়ক ও অধিক সংখ্যক যানবাহন চলাচলের জন্য ায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। বর্ধিত যানবাহনের চাপে বর্তমান সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও যথাযথ ট্রাফিক ডিজাইন অনুযায়ী নির্মিত না হওয়ায় সড়কটি যানবাহন চলাচলের ত্রুটিপূর্ণ।

এ পরিপ্রেক্ষিতে হাতে নেয়া এ প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ১৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। ১২৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুলাই হতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের কথা ছিল। পরবর্তীতে তিন দফায় প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। এতেও কাজ শেষ হয়নি।
ভ‚মি অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও আইনি জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এবং রেট সিডিউল পরিবর্তনের কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব না হওয়ায় ফের সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যয় ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ১৬৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে শুরু থেকে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৯৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, যা মোট অনুমোদিত ব্যয়ের ৭৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৭১ শতাংশ। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ৪ দশমিক ৩২ একর ভূমির ক্ষতিপূরণ, ২০ হাজার ১২৩ দশমিক ৫০ বর্গমিটার কাঠামোর ক্ষতিপূরণ, ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক, চারটি কালভার্ট, ৬ দশমিক ২৩৩ কিলোমিটার নিকাশ কাঠামো, ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন স্থানান্তর, ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার লাইন ও তার, ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার গ্যাস লাইন স্থানান্তর, ৫ দশমিক শূন্য ৪ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ, ২ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার সড়ক বিভক্তিকরণ, এক হাজার মিটার নিরাপত্তামূলক ট্রাফিক কাঠামো, ২ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার মিডিয়ানের নিরাপত্ত বেষ্টনী, ২ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার রোড মার্কিং, ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামাদি স্থানান্তর, ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক বাতি স্থাপন, ৫০টি ট্রাফিক সিগনাল স্থাপন এবং ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কের পাশে ও মিডিয়ানে সৌন্দর্যবর্ধক গাছের চারা রোপণ করা হবে।
প্রকল্পের সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ভূমি অধিগ্রহণে ভূমির প্রকৃত পরিমাণ ৩ দশমিক ৩৯৯ একরের পরিবর্তে ৪ দশমিক ৩২ একর করা হয়েছে। এছাড়া কাঠামোর পরিমাণ ২৪ হাজার ১৫১ দশমিক ৯৫ বর্গমিটারের পরিবর্তে ২০ হাজার ১২৩ দশমিক ৫০ বর্গ মিটার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৪ হাজার ২৮ দশমিক ৪৫ বর্গ মিটার কমে গেছে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভৌত নির্মাণ কাজের এলজিইডি-২০১৯ রেট সিডিউল ও গণপূর্ত বিভাগ-২০১৮ রেট সিডিউল অনুসরণের ফলে দাফতরিক প্রাক্কলিত ব্যয় অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এর জন্য জননিরাপত্তা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে সবধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ ছিল। কাজটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত ৬ মাস অর্থাৎ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো দরকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন