শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার বিষয়টি অগ্রাধিকারে রাখতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৪২ এএম

গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে করোনার কারণে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ অব্যাহত থাকবে (কওমি ছাড়া)। কোচিং ও প্রাইভেটও বন্ধ রয়েছে। কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে অনলাইনের মাধ্যমে। কিন্তু সাউন্ড ডিস্টার্ব, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, খুবই ব্যয়বহুল এবং সহপাঠী, শিক্ষক ও বিনোদন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় পূর্ণ শিক্ষা অর্জন করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা। মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭০% ইন্টারনেট সুবিধা ও কম্পিউটার/স্মার্ট ফোন না থাকায় অনলাইন শিক্ষায় যুক্ত হতে পারেনি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাট বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে দেশে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার কোটি।এছাড়া,বহু শিক্ষার্থী বিদেশে অধ্যয়ন করছে। করোনায় তাদেরও শিক্ষা বন্ধ রয়েছে। এভাবে শিক্ষার্থীদের চরম ক্ষতি হয়েছে। তাই অভিভাবকগণ চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম ও বিপথগামিতা বেড়েছে অনেক। ওদিকে পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে নিম্ন থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত অটোপাশ দেওয়া হয়েছে। তাতে শতভাগ পাশ হয়েছে। অথচ স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা হলে ৭০-৮০% এর বেশি পাশ হতো না। ২০২১ সালের অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষার্থীদের মূল পাঠ্যসূচি থেকে ৫০% কমানো হয়েছে। কারিগরি শিক্ষায়ও তাই। এসব অটোপাশ ও সিলেবাস শর্টকাটের ক্ষতি ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। আবার শিক্ষার্থীরা এক বছরের গ্যাপে পড়েছে, যা পূরণ হবে না কখনই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে যত দেরি হবে ক্ষতির পরিমাণ ততই বাড়তে থাকবে।তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে দেশের বেশিরভাগ মানুষ। বক্তৃতা-বিবৃতিতেও অনেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি করে বলেছে- অফিস, কল-কারখানা, হাট-বাজার সবই চালু আছে,তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে কেন? বিষয়টি জাতীয় সংসদেও আলোচিত হয়েছে। বেশিরভাগ সদস্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে বলেছেন।

করোনাকালে শিক্ষার ক্ষতি বিশ্বব্যাপীই হয়েছে। তাই কিছু দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে। ইউনিসেফও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা বলেছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী করোনার প্রকোপ হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে হু। দেশেও করোনার সংক্রমণ হ্রাস পেয়েছে ব্যাপক। উপরন্তু করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। ফলে করোনা আর আগের মতো বিধ্বংসী হতে পারবে না। দেশের সব শিক্ষককে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। তাই আগামী মার্চের মধ্য সময়ে কিংবা শেষ প্রান্তে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখনই খোলা হোক, তা পূর্ণভাবে হবে না। ট্রায়াল হিসাবে আংশিকভাবে খোলা হবে।তবুও সেটা মন্দের ভাল। কারণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় এক বছর বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার অপূরণীয় ক্ষতি করছে। ঘরে বন্দি থাকায় তাদের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্র আরো করুণ! কারণ, করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টিউশন ফি পায়নি। ফলে মালিকরা শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন দেয়নি।তাই কর্মরত ১৪ লাখ শিক্ষক ও ৮ লাখ কর্মচারী মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাধ্য হয়ে অনেকেই নিম্নতর কর্মে নিযুক্ত হয়েছে! অপরদিকে,ভবন ভাড়া ও বিভিন্ন বিল দিতে না পেরে বহু মালিক তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়ে ভবন ভাড়া ছেড়ে দিয়েছে ও সব আসবাব পত্র বিক্রি করে দিয়েছে। কয়েক মাস আগের খবর, ‘চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে প্রায় ১৫ হাজার বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও হাইস্কুল বিক্রি করা হচ্ছে’! ইতোমধ্যেই এর অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। উপরন্তু এতদিনে এ সংখ্যা বেড়ে আরও অনেক হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারীর ভবিষ্যৎ ঘোর অন্ধকার! উপরন্তু শিক্ষার্থীরাও চরম সংকটে পড়েছে ভর্তি হওয়া নিয়ে। কারণ, এতো বিপুল শিক্ষার্থীকে সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংকুলান হবে না। অথচ তাদের শিক্ষা চালু রাখা জরুরী। এই অবস্থায় বেসরকারি খাতের বন্ধ হওয়া ও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নির্ণয় ও তা চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। নতুবা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারী এবং দেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে। পত্রিকায় প্রকাশ, দেশে সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেকগুণ বেশি। যেমন: শুধুমাত্র কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সংখ্যা ৬০ হাজার।তাতে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী ও ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সংখ্যাও বিপুল। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিই চালু রাখা জরুরি। একই সঙ্গে প্রায় এক বছর প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যারা শিক্ষায় অনাগ্রহী হয়েছে, ঝরে পড়েছে, তাদের পুনরায় শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

দেশের শিক্ষা খাতে নানা সংকট বিদ্যমান, যার অন্যতম হচ্ছে: সেকেলে শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষার মান নিম্নতম, অবকাঠামো, পরিবেশ ও জনবল সংকট, বেশিরভাগ শিক্ষকের অদক্ষতা, শিক্ষা ব্যয় অত্যধিক, পরীক্ষায় ব্যাপক নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁস,নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, পরীক্ষার সর্বোচ্চ মানে অসামঞ্জস্যতা (জেএসসি-এইচএসসি পর্যন্ত জিপিএ-৫ সিস্টেম। আর দেশী-বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে গ্রেড ৪ সিস্টেম), বহু পরীক্ষার ভারে শিক্ষার্থীরা ভীত-সন্ত্রস্ত ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে দু’চারটা উদাহরণ স্মরণযোগ্য। বিশ্বব্যাংকের জরিপ রিপোর্ট-২০১৯ অনুযায়ী, ‘বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৮% হলেও ৬৫% শিক্ষার্থী বাংলাই পড়তে পারে না। ইংরেজি ও গণিতে দুর্বলতা তার চাইতেও বেশি’। ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২০ মতে, ‘বাংলাদেশে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের হার প্রাথমিকে-৫০% ও মাধ্যমিকে-৩৪%। উপরন্তু সংস্থাটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের হারের ভিত্তিতে দেশগুলোকে উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন ভাগে ভাগ করেছে। তাতে বাংলাদেশ ‘নিম্ন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে (প্রায় অনুরূপ অবস্থা উচ্চ পর্যায়েও)! সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে গত ২০ নভেম্বর। এই পদগুলো দীর্ঘদিন যাবত শূন্য আছে (এর বাইরে শূন্য পদের সংখ্যা আরও অনেক রয়েছে)। দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজে ও মাদ্রাসায় ৮০ হাজারের মতো পদ শূন্য রয়েছে বলে গত ৭ ডিসেম্বর এক দৈনিকে প্রকাশ। বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭৭ হাজার শিক্ষকের পদ খালি আছে বলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি খবরে প্রকাশ। ইউজিসি’র সর্বশেষ বার্ষিক রিপোর্ট মতে, ‘দেশে বর্তমানে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে। তন্মধ্যে মাত্র ১১টিতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন। এর বাইরে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ৮৫টিতে ও কোষাধ্যক্ষ ৫৪টিতে নেই, আর তিনটি পদই শূন্য রয়েছে ২১টিতে। এছাড়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতে আন্তর্জাতিক মান বজায় নেই দেশের অর্ধেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই। সরকারি-বেসরকারি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই নেই আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা। গবেষণা বরাদ্দই নেই বহু প্রতিষ্ঠানে। প্রকাশনার অবস্থাও করুন’। উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’ গঠন করার নিয়ম রয়েছে, যা বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই নেই। ডিগ্রী কলেজে অনার্স চালু করায় উচ্চ শিক্ষার মান অনেক কমেছে। সব মিলে বৈশ্বিকভাবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান তলানিতে।
দেশের শিক্ষা খাতের বর্ণিত করুণ পরিস্থিতির জন্য প্রধানত দায়ী সরকারী বরাদ্দ, যা অতি নগণ্য! এক জরিপ অনুযায়ী, ১৯৭টি দেশের জাতীয় শিক্ষা খাতে গড়ে জিডিপি ব্যয়ের পরিমাণ ৪.৫%। বাংলাদেশ ব্যয় করে মাত্র ১.৩%; জরিপকৃত ১৯৭টি দেশের মধ্যে ১৮২টি দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ব্যয় করে। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যেও সবচেয়ে কম খরচ করে বাংলাদেশ। জনসংখ্যার তুলনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়প্রতি শিশু সংখ্যা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্থান পঞ্চম বলে গত ২০ জানুয়ারি এক দৈনিকে প্রকাশ।

দেশে ২০১০ সালে শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা হলেও সংশ্লিষ্ট আইন করা হয়নি এখনও।ফলে উক্ত শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার স্তর করার সুপারিশও বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে, ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে।তাও এখন স্বায়ত্তশাসনের খোলস আছে মাত্র। বাকীগুলো চলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শাসনে।

শিক্ষা ব্যবস্থার বর্ণিত দুর্দশার মধ্যে করোনা মহামারি মরার উপর খাড়ার ঘায়ের কাজ করছে। তাই শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়া জরুরী। তবে,স্বাস্থ্যবিধি মেনে। সে সাথে গত এক বছরের পিছিয়ে পড়া শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে হবে অতিরিক্ত শিক্ষার মাধ্যমে।এ ক্ষেত্রে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একসাথে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য বিধি পালন করার কারণে কোন প্রতিষ্ঠানে স্থান সংকুলান না হলে ডবল শিফট চালু করতে হবে। এছাড়া, শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়ে কর্মমুখী করা অতীব জরুরী। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সব চেয়ে বেশি ভাল হবে,৮ম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত (সমপর্যায়েরসহ) একটি স্তর করে কারিগরি শিক্ষার একটি করে ট্রেড বাধ্যতামূলক করা। অবশ্য এতে দক্ষ শিক্ষকের সংকট দেখা দিতে পারে। তবে, ট্রেডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান করা হলে এ সংকট থাকবে না। যেমন:ক প্রতিষ্ঠান আইটি ভিত্তিক, খ প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিক ভিত্তিক, গ প্রতিষ্ঠান মেকানিক্যাল ভিত্তিক ইত্যাদি। উপরন্তু কারিগরি বিষয়ের শিক্ষককে বিশেষ ভাতা তথা স্কুলের ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা ও কলেজের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা করে মাসিক বিশেষ ভাতা দেওয়া হলে দক্ষ শিক্ষকের অভাব হবে না।এসব হলেই ১০ বছরের মধ্যে দেশে প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক তৈরি হবে। কেউ বেকার থাকবে না। দেশে কোন কাজের লোকের ঘাটতি হবে না।

দেশের শিক্ষার মানোন্নয়ন খুবই জরুরি। এটা না হলে সে শিক্ষা সেকেলের শিক্ষার মতোই দেশ-বিদেশে অচল! দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য অবিলম্বে শিক্ষকের সব শূন্য পদ নিরপেক্ষভাবে পূরণ, সব শিক্ষকের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান, সব বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিন্ন নীতির আওতায় আনা, মূল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অনার্স ও মাস্টার্স বন্ধ করা, শিক্ষা খাতের সব নিয়ম কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং দুর্নীতি-অপচয়, দলীয়করণ বন্ধ করা আবশ্যক। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য নিম্নস্তরেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিত হবে। নতুবা এর প্রভাব রয়ে যাবে উচ্চ পর্যায়েও। সর্বোপরি দেশের শিক্ষার উন্নতির জন্য সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি করে জিডিপির কম পক্ষে ৫-৬% করা প্রয়োজন।এরূপ বরাদ্দ বেশিরভাগ দেশেই আছে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার বিনিয়োগ বিফল হয় না কোথাও। হাজারগুণ রিটার্ন আসে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। তাই শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদন্ড। আর সেই মেরুদন্ডের প্রাণ ভোমরা হচ্ছেন শিক্ষকরা।তবুও তারা সর্বাধিক অবহেলার শিকার হয়েছেন। ফলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসছেন না। যৎ সামান্য এলেও পরবর্তীতে ক্যাডার সার্ভিস বা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে হবে।সে জন্য শিক্ষকের বেতন ও মর্যাদা সর্বাধিক এবং পেনশনভুক্ত করতে হবে। তাহলেই শিক্ষকরা জাতির ভবিষ্যৎ নির্ণয়ে নিজেকে উজাড় করে দেবেন। দেশের সেরা মেধাবীরা শিক্ষকতায় আগ্রহী হবেন। অপরদিকে, শতভাগ শিক্ষার্থীকে অনলাইনের আওতায় আনার জন্য খুব দ্রুত দেশের সর্বত্রই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট স¤প্রসারণ করা জরুরি। কারণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা হলেও তা হবে সীমিত আকারে। সেটাও নির্ভর করবে করোনার উপর।করোনার সংক্রমণ যদি আবার বৃদ্ধি পায়,তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধ করে দিতে হবে। তাই অনলাইন শিক্ষা চালু রাখতেই হবে। অপরদিকে, সব চেয়ে বেশি কল্যাণকর হবে শিক্ষক,কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।এটা করা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্ধেক সংকট দূর হয়ে যাবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন