শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা পুত্রবধূ পাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তার সম্মাননা

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৪৫ পিএম

শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করলেই সম্মাননাসহ উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা। এমনই ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন টাঙ্গাইল সদর থানার (ওসি) অফিসার ইনচার্জ মীর মোশারফ হোসেন। তিনি নিজে গিয়ে বাড়ি উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন পুত্রবূধর হাতে।

উপহার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ী, পোড়াবাড়ির চমচম ও সম্মাননা স্বারক। সেই সাথে পরিবারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তার এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সুশীল সমাজে প্রশংসিত করেছে।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদের এডমিন নওশাদ রানা সানভী জানান, আমি কিছু তথ্য সংগ্রহের জন্য টাঙ্গাইল সদর থানায় যাই। থানার ভিতরে প্রবেশ করতেই একটি ফেস্টুন আমার দৃষ্টি আকৃর্ষণ করে। ফেস্টুনে লেখা ছিলো “বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বাবা-মায়ের নিরাপদ আবাস’ পুত্রবধূ যদি আল­াহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করে আল­াহ তাকে আখিরাতে পুরস্কার প্রদান করবেন।” সেখানে আরও লেখা ছিলো শুশ্বর শাশুড়িকে যে সেবা যত্ন করবে এবং একসাথে বসবাস করবে সেই ভাগ্যবতিকে পুরস্কৃত করা হবে এবং যোগাযোগের জন্য ফোন নাম্বার উলে­খ্য করা ছিলো। উদ্যোগটি ভালো লাগায় আমি ফেস্টুনের ছবি তুলে ফেসবুক গ্র“প টাঙ্গাইল জেলা সংবাদে পোস্ট করি। বিষয়টি মানুষ ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করে এবং মুহুর্তেই বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়।

শহরের কলেজ পাড়া এলাকার বাসিন্দা শিউলি খান জানান, আমি টাঙ্গাইল জেলা সংবাদে একটি পোস্ট দেখতে পাই। পোস্টটি দেখে আমার খুব ভালো লাগে। আমিও আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মায়ের মতো ভালোবাসি এবং তাদের সেবা যত্ন করি। তাদের সেবা করে আমি আত্মতৃপ্তি পাই। বিষয়টি অবগত করার জন্য আমি ওই ফেস্টুনে উলে­খিত নাম্বারে ফোন করি। পরবর্তীতে ওই দিন বিকেল বেলায় ওসি স্যার নিজে এসে আমাকে উপহারগুলো তুলে দেন।

শিউলি খানের শ্বশুর কাজী মুজিবুর রহমান জানান, আমার একটি মেয়ে আছে, আমার পুত্রবধূও আমার আরেকটি মেয়ে। আমার মেয়ে আমাকে যেমন ভালোবাসে, আমার ছেলেবউও ঠিক তেমনি ভালোবাসে। আমাদের দেখভাল ও সেবাযতেœ কোন ত্র“টি করে না। এমন ছেলে বউ পেয়ে আমরা সত্যিই ভাগ্যবান।

বাউশা খানপুর এলাকার বাসিন্দা মাহমুদা আক্তার জানান, আমি পুরস্কার পেয়েছি। পুরস্কার পেয়ে নিজের প্রতি আরও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আমি আমার শ্বশুর শাশুড়িকে যেমন নিজের বাবা-মা’র মতো দেখি তারও আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন।

মাহমুদা আক্তারের শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন জানান, আমার ছেলে ও ছেলে বৌ আমাদের সাধ্য অনুযারি সেবা করে। একজন পুলিশ অফিসার আমার বৌমাকে পুরস্কৃত করেছে। পুরস্কার পেয়ে সে তো আত্মহারা।

টাঙ্গাইল সদর থানার (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান, আমি লক্ষ্য করেছি বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের অবহেলায় বাবা-মা অযতেœ জীবন যাবন করেন। অনেকেই ঠিকমত খাবারও দেয় না। আর্থিক অবস্থা ভালো এমন সন্তানরাও বাবা-মাকে ত্যাগ করে বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা বসবাস করে। তাদের ঠাই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। অনেক সন্তানরাই ভুলে যায় এই বাবা-মা দিনরাত পরিশ্রম করে সন্তানের মুখে আহার তুলে দেন এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। তারা এটাও ভুলে যায় তাদেরও একদিন বৃদ্ধ হতে হবে। আবার অনেক সন্তান আছেন যারা কাজের প্রয়োজনে বাহিরে ব্যস্ত থাকে কিন্তু তাদের বাবা-মা পুত্রবধূর সাথে বেশি সময় কাটান। আমার উদ্দেশ্য ওই পুত্রবধূদের উৎসাহিত করা।

তিনি জানান, যারা বাবা মাকে ছেড়ে দূরে চলে যায় এবং অনেকের একাধিক সন্তান থাকার কারণে বাবা-মাকে ভরনপুসন নিয়ে ঠেলাঠেলি করে দূরে সরিয়ে দেয়। সেই সব সন্তান ও পুত্রবধূর প্রতি প্রতিবাদ স্বরূপ এই আয়োজন করেছি। যাতে কোন বাবা-মাকে অবহেলা ও বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়।

তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত নয়জন পুত্রবধূকে সম্মাননা স্বারক ও উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন