শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

মৃত মা-বাবার হক

মুফতি মুহাম্মাদ আকতার আল-হুসাইন | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

বুখারী শরীফে একই বর্ণনাকারী থেকে আরো এসেছে- তিনি আরো বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক লোক এসে বলল যে, আমার বোন হজ্জের মানত করেছিল। কিন্তু সে মারা গেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাঁর উপর কোন ঋণ থাকলে তবে কি তুমি তা আদায় করতে না? লোকটি বলল, হাঁ। তিনি বললেন, কাজেই আল্লাহর হককে আদায় করে দাও। কেননা, আল্লাহর হক আদায় করা আরো বড় কর্তব্য”।

তাদের পক্ষ থেকে দান-সদাকাহ করা : সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলো, আমার বাবা মারা গেছেন এবং তিনি কিছু সম্পদ রেখে গেছেন, কিন্তু ওয়াসিয়্যাত করেননি। তার পক্ষ থেকে সদাকাহ করা হলে কি তার গুনাহ ক্ষমা হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ।
মুসলিম শরীফে আরো এসেছে- “হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললো, আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। তাঁর ব্যাপারে আমি ধারণা করি, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন তবে সদাকাহ করতেন। আমি যদি তাঁর পক্ষে সদাকাহ করি, তবে কি আমার এ কাজের কোন সাওয়াব হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।
তাদের আত্মীয় স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করা : সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- হযরত বারাআ ইবনে আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- খালা হলো মাতৃস্থানীয়”। সহীহ তালীকুর-রাগীবে এসেছে- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণনা, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক লোক এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি একটি কবিরাহ গুনাহ করে ফেলেছি। আমার তওবা করার সুযোগ আছে কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মা কি জীবিত আছেন? সে বলল না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমার খালা কি জীবিত আছেন? সে বলল আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার সাথে ভালো ব্যবহার কর।
সহীহ ইবনে হিব্বানে এসেছে- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি কবরে তার বাবার সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়, সে যেন তার বাবার ভাইদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখে”।
তাদের বন্ধুদের সাথে ভালো ব্যবহার করা : সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার (রা.), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, মাক্কায় এক রাস্তায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) এর সাথে এক বেদুঈনের সাক্ষাৎ হলো। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) তাঁকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার পিঠে আরোহণ করতেন, সে গাধাটি তাকে আরোহনের জন্য দিয়ে দিলেন। তিনি তাঁর মাথার পাগড়ীটিও তাকে দান করলেন। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার (রা.) বলেন যে, আমরা তাকে বললাম, আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন। বেদুঈনরা তো অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায়। (এত দেওয়ার প্রয়োজন কি ছিল?) তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বললেন, এ ব্যক্তির বাবা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তির সর্বোত্তম নেকীর কাজ হচ্ছে তার বাবার বন্ধুর সাথে ভালো ব্যবহার বজায় রাখা।
মুসলিম শরীফে আরো এসেছে- হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত খাদীজাহ (রা.) ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীদের আর কারো প্রতি ঈর্ষান্বিত হইনি, অথচ আমার সাথে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটেনি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যাবাহ করতেন তখন বলতেন, এর গোশ্ত হযরত খাদীজাহ (রা.) এর বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। একদা আমি তাঁকে রাগিয়ে দিলাম এবং বললাম, হযরত খাদীজাহ (রা.) কে এতই ভালোবাসেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তাঁর ভালোবাসা আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে”।
তাদের পক্ষ থেকে রোজা পালন করা : সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- রোজা কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ হতে রোজা আদায় করবে।
সহীহ বুখারী শরীফে আরো এসেছে- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা এক মাসের রোজা যিম্মায় রেখে মারা গেছেন, আমি কি তাঁর পক্ষ হতে রোজা কাযা করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হাঁ, আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করাই হল অধিক যোগ্য।
তাদের পক্ষ থেকে উমরাহ বা হজ্জ করা। সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, আমার মা হজ্জের মানৎ করেছিলেন তবে তিনি হজ্জ আদায় না করেই ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তাঁর পক্ষ হতে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তার পক্ষ হতে তুমি হজ্জ আদায় কর। তুমি এই ব্যাপারে কি মনে কর যদি তোমার মায়ের উপর ঋণ থাকত তা হলে কি তুমি তা আদায় করতে না? সুতরাং আল্লাহর হক আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহর হকই বেশী আদায়যোগ্য।
তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করা : সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানী করার জন্য শিংওয়ালা দুম্বাটি আনতে নির্দেশ দিলেন, যেটি কালোর মধ্যে চলাফেরা করতো (অর্থাৎ- পায়ের গোড়া কালো ছিল), কালোর মধ্যে শুইতো (অর্থাৎ- পেটের নিচের অংশ কালো ছিল) এবং কালো মধ্য দিয়ে দেখতে (অর্থাৎ- চোখের চারদিকে কালো ছিল)। সেটি আনা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ছুরিটা নিয়ে এসো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ ৩ মার্চ, ২০২১, ১০:০১ পিএম says : 0
অনেক সুন্দর বিষয় বস্তু এখানে দেখলাম, অনেক উপকৃত হলাম ধন্যবাদ আপনাকে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন