শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পেঁপে চাষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের সাফল্য

প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তাজ উদ্দীন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) থেকে

লোহাগাড়া উপজেলার পটিবিলা গৌড়স্থান এলাকার আব্দুল জব্বারের সন্তান। ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র। পড়ালেখার পাশাপাশি বড় পরিবারের খরচ বহন ও নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে নেওয়ার জন্য বছর চারেক আগে পোল্ট্রি ফার্মের কাজে নামেন। প্রথম দুই দফা লাভ করলেও পরবর্তীতে এই ব্যবসায় বেশ কয়েক দফায় ক্রমাগত লোকসান হতে হতে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা মানুষের কাছে দেনা পড়ে যায়। পরবর্তীতে আবার ধারদেনা করে গরু মোটাতাজাকরণের কাজে নামেন। কিন্তু সেখানেও লাভের মুখ দেখেনি। তবু হাল ছাড়েনি জমির। পুটিবিলা পহরচান্দা মৌজায় তার বাবার দখলীয় সরকারি পরিত্যক্ত খাসজমিতে পেঁপে চাষের উদ্যোগ নেয়। তার তাতেই তার কাছে সফলতা ধরা দেয়। গত দেড় বছর আগে প্রথম ১ হাজার পেঁপে গাছ লাগিয়ে লাভ করতে না পারলেও ক্ষতি হয়নি। হাল ছাড়েনি জমির। পরবর্তী বছর একই জায়গায় সম্পূর্ণ নিজের অভিজ্ঞতায় আবার ২ হাজার পেঁপে গাছ লাগান। আর তাতেই বাম্পার ফলন ঘটে। আগের ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে গত বছর সে লাভের মুখ দেখে। ঐ বছরের লাভ ও মূলধনসহ বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে ধারদেনা করে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে একই এলাকায় ৭ একরের বনজঙ্গলে ভরা পরিত্যক্ত জমি পরিষ্কার করে গত বছর সেখানে ৫ হাজার পেঁপে চারা লাগায়। নিজে নার্সারি করে তা চাষ করে। গত দেড় মাস হতে এই বাগান থেকে পেঁপে বিক্রি শুরু করে। প্রতিসপ্তাহে ৩ টন করে পেঁপে বিক্রি করছে। যার মূল্য ১ লক্ষ টাকা। আগামী ১ মাস পর প্রতি সপ্তাহে ৫ টন করে পেঁপে করতে পারবে বলে জমির আশা প্রকাশ করছেন এবং পরবর্তীতে তার পরিমাণ আরও বাড়তে থাকবে বলে তার ধারণা। তার পেঁপে বিক্রির এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী ৩ মাসে মূলধন পেয়ে যাবে বলে তার বিশ^াস। তবে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার বন্য হাতির দল এসে কয়েকশ’ পেঁপে গাছের চারা নষ্ট করে দিয়েছে বলে সে জানায়। অথচ স্থানীয় বনবিভাগ থেকে বার বার সহায়তা পেয়েও সে কোন সহায়তা পায়নি বলে জানায়। এদিকে তার পেঁপে চারার মাঝে মাঝে জমিগুলোতে বিভিন্ন জাতের ১১ শত আমগাছ ও ৭ শত লিচু গাছ লাগিয়েছে। যেগুলোতে আগামী বছর ফলন আসতে পারে। এছাড়াও এ বছর নতুন করে বড় আকারের একটি ছাগলের খামার করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও সে জানিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আলম বলেন, জমির উদ্দীন তার এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারলে আগামীতে সে সারা দেশের ছাত্রদের কাছে মড়েল হয়ে থাকবে। সম্প্রতি তার বাগান পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় জমির উদ্দীন বাগানে অন্যান্য শ্রমিকের সাথে কাজ করছে। মনে হচ্ছিল সেও দিনমজুর। কাজের ফাঁকে তার সাথে কথা বলে জানা যায়, সে সারাদিন মানুষের সাথে বাগানে কাজ করে আর রাতে বই নিয়ে পড়াশুনা করে। এ পর্যন্ত কোন পরীক্ষায় সে ফেল করেনি বলে জানিয়েছে। পুটিবিলা পহরচান্দার এই নির্জন পাহাড়ি এলাকায় তার বাগানের মাঝে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে রাতে সে একাই থাকে। সাথে কলেজের বইপুস্তকও রয়েছে। লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সে প্রায়ই সহায়তা পেয়ে আসছে বলে জানায়। তবে সে জানায়, সরকারি জায়গাটি যদি তাদের নামে বন্দবস্ত করে দেওয়া হয় তাহলে সে ভবিষ্যতে আরো নতুন ধরনের ফলের চাষ করতে ইচ্ছুক। তার বাগানে কর্মরত দিনমজুর আব্দুল মন্নান বলেন, জমির সারাদিন বাগানে কাজ করে রাতে আবার পড়াশুনা করে। নিজের প্রতি তার কোন খেয়ালই নেই। সারাদিন পাহাড়ি জমিগুলো দীর্ঘ কয়েক যুগ কষ্ট করে কৃষকরা চাষাবাদের উপযোগী করে তুলেছে। লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জমির উদ্দীনের বাগানে আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত যতটুকু পারি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, কর্মের প্রতি তার আগ্রহ ও প্রচেষ্টাই তার সফলতার মূলধন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন