বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস ১২ রবিউল আওয়াল ঈদে মিলাদুন্নবীকে (সা.) রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই দিনে সব সরকারি-বেসরকারি ভবন ও অফিস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া বিদেশী কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গত সোমবার মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীপরিষদ সচিব স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে এবং অবিলম্বে এ নির্দেশনা কার্যকর করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনে সরকারের এ সিদ্ধান্ত শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশী মুসলমানদের জন্য আনন্দের নয়, সারাবিশ্বের মুসলমানদের জন্যও সুসংবাদ। সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশের সকল মুসলমান আনন্দিত। তারা সরকারকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে। মাদরাসা শিক্ষকদের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এবং দেশের বিশিষ্ট আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ সরকারের এ সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের মুসলমানরা অভিনন্দন জানিয়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিজীবনে যেমন ধার্মিক এবং নিষ্ঠার সাথে ধর্ম পালন করেন, তেমনি ইসলামের খেদমতেও তিনি নানাভাবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতির কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং একজন মুসলমান হিসেবে তিনি ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা পালন করছেন।
রাসুলেপাক হযরত মুহাম্মদকে (সা.) সৃষ্টি না করলে মহান রাব্বুল আলামীন কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না। সকল সৃষ্টির মূলেই রয়েছেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। মানুষের কল্যাণে আল্লাহপাক যুগে যুগে যত নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাঁদের মধ্যে হযরত মুহাম্মদকে (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে স্থান দিয়েছেন এবং তাঁকে আখেরি নবী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাঁর পরে আর কোনো নবী ও রাসূল আসেনি এবং আসবেও না। আল্লাহপাক তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন। তিনি রাসূলকে (সা.) এতটাই শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন যে, রোজ হাশরে আল্লাহর কাছে বান্দাদের ক্ষমা করার সুপারিশের অনুমতি একমাত্র তাঁরই রয়েছে। আল্লাহতাআলা রাসূলকে (সা.) এতটাই ভালোবাসেন যে, তিনি নিজে তাঁকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর জন্য দরুদ পাঠ করেন। স্বয়ং আল্লাহর কাছে যখন রাসূল (সা.) এত প্রিয়, তখন মানুষ হিসেবে আমাদের কাছে তাঁর গুরুত্ব কত অপরিসীম তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। মানবজাতির জন্য এই দুনিয়া এবং আখেরাতের মুক্তির একমাত্র উপায় তিনি। তাঁর অনুসরণের মধ্যেই মুক্তি নিহিত রয়েছে। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ইসলামই হচ্ছে আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম। ইসলামের কান্ডারি রাসূল (সা.)। আমরা মুসলমানরা যে তাঁর উম্মত হতে পেরেছি, এটা স্বয়ং আল্লাহপাকের অনুগ্রহ ও করুণা ছাড়া কিছুই নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাসূলেপাক হযরত মুহাম্মদ (সা.) পুরো মানবজাতির কল্যাণের জন্যই প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর আদেশ, নির্দেশ অনুসরণ এবং মেনে চলার মধ্যেই আল্লাহর পছন্দের বান্দায় পরিণত হওয়া সম্ভব। কাজেই, তাঁকে ভালবাসা এবং তাঁর সুন্নাহ অনুযায়ী চলা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। রাসূল (সা.)-এর আগমনে পুরো পৃথিবী যেমন আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিল, তেমনি তাঁর ওফাতে পুরো পৃথিবী বিমর্ষ হয়েছিল। তবে মানবজাতির জন্য তাঁর আদর্শ ও সুন্নাহ কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। পুরো বিশ্বে ইসলাম নানা প্রতিকূলতা এবং অপপ্রচারের শিকার হলেও এর অগ্রযাত্রা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ অন্য ধর্ম থেকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী হবে। রাসূলের (সা.) ধর্ম ইসলামের এই অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। জীবনের প্রতিটি কাজে রাসূলের (সা.) আদর্শ বাস্তবায়ন ও মেনে চলা আমাদের নিজেদের স্বার্থেই একান্ত কর্তব্য। তাঁর জন্ম ও ওফাত দিবস মর্যাদার সাথে পালন করা ঈমানী দায়িত্ব। বাংলাদেশ সরকার এই দিবসটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঈমানী দায়িত্ব পালন করেছে।
রাসূলে পাক হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায় তার বিরোধী লোক যেমন ছিল, তেমনি আল্লাহর বাণী প্রচার ও তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অসংখ্য মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে এবং তা কেয়ামত পর্যন্ত চলবে। ১৯৭৮ সালে প্রখ্যাত লেখক মাইকেল এইচ হার্ট সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তিত্ব নিয়ে ‘দ্য হান্ড্রেড’ নামে যে গ্রন্থটি রচনা করেন তার প্রথম ব্যক্তিত্ব রাসূলেপাক হযরত মুহাম্মদ (সা.)। ইসলামের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রায় হতবিহ্বল হয়ে তা ঠেকানোর জন্য রাসূলকে (সা.) নিয়ে একটি শ্রেণীকে অমার্জনীয় ও অশোভন মন্তব্য করতে আমরা দেখেছি। বাংলাদেশ সরকার রাসূল (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাসূলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও সারাবিশ্বে ইসলামের শান্তির বাণী পৌঁছে দেয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যদিও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে সরকারি বন্ধ থাকে এবং বিভিন্ন দোয়ার আয়োজন করা হয়, তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত রাসূলের (সা.) প্রতি নতুনভাবে সম্মান দেখানো হয়েছে। মুসলমান ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে রাসূলের (সা.) প্রতি সম্মান দেখানো আমাদের কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ, তিনি ইসলামের খেদমতে ঈদে মিলাদুন্নবীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন