বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, সংবাদ সম্মেলন

নোয়াখালী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:০৬ পিএম

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জার পূর্ব ঘোষিত অবস্থান ধর্মঘট ও হরতাল চলাকালীন সময়ে পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ১৫জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এদিকে শুক্রবার বিকালে চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে আবদুল কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদল। অন্যদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় মিজানুর রহমান বাদল বাদী হয়ে ৪৪জনকে আসামী করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং-২৩)

কাদের মির্জার সংবাদ সম্মেলন
শনিবার বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা অভিযোগ করে বলেন, শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচীতে বিনা উস্কানিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে আমার নেতাকর্মীদের জখম করেছে। পুলিশ বসুরহাট রূপালী চত্বরে চেয়ার, প্রচার মাইক, জেনারেটর ভাঙচুর করেছে।

মির্জা বলেন, শুক্রবারে চাপরাশিরহাট বাজারে পুলিশের সহযোগিতায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে আহতের ঘটনার প্রতিবাদে আগামী সোমবার সকালে বসুরহাটে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হবে। আমাদের দাবীগুলো মানা না হলে জনগণকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করা হবে।

কাদের মির্জাকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবীতে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন
শনিবার দুপুর ১২টায় উপজেলার পেশকারহাট রাস্তার মাথায় কাদের মির্জাকে বহিষ্কার ও গ্রেফতারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল। সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, চিকিৎসার নামে কাদের মির্জা আমেরিকা গিয়ে বিএনপির পলাতক নেতা তারেক রহমানের সাথে একাধিকবার বৈঠক করে। বিএনপি-জামায়াতের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের রাজনীতি ধ্বংস করার জন্য অপরাজনীতি ও অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে বদ্ধ উম্মাদ হয়ে টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের গডফাদার কারচুপি নির্বাচনে জিতে মেয়র মির্জা এমপি হবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এসব অসত্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মওদুদ আহমদের অবর্তমানে বিএনপির মনোনয়ন নিশ্চিত করার শর্তে সমঝোতার মাধ্যমে সরকার এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে জনমনে বিভ্রান্তি ও হিংসা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র মির্জা, তার পুত্র তাশিক মির্জা ও তার বাহিনীর দলীয় নেতাকর্মীসহ নানা হত্যাকান্ড, টেন্ডারবাজি, নানা সেক্টরে চাঁদাবাজি, নেতাকর্মীদের অপমান-নাজেহাল করার অসংখ্য ঘটনা তুলে ধরা হয়। এসময় সন্ত্রাসের অঘোষিত গডফাদার মেয়র মির্জাকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তার করে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর দাবী জানিয়ে দলে শৃংখলা ফিরিয়ে আনা এবং কাদের মির্জার জিম্মি দশা থেকে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে মুক্ত করার দাবী জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনের শেষে আগামী সোমবার বিকেল ৩টায় বসুরহাট রূপালী চত্বরে আওয়ামী লীগ আহুত কাদের মির্জার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগ্নে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু, ওপর ভাগ্নে স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের সদস্য ফখরুল ইসলাম রাহাত, আওয়ামী লীগ নেতা হাসিবুস শহীদ আলোক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাসিব আহসান আলাল, চরকাঁকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান আরিফ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম শাহীন চৌধুরী, চরএলাহী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবুল বাশার প্রমূখ।

সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা
চাপরাশিরহাটে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল বাদী হয়ে ওইদিন রাতে ৪৪জনকে আসামী করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং-২৩)। এ মামলায় কাদের মির্জা অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা ও ৫নং চরফকিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন লিটন, আমেরিকা প্রবাসী আ’লীগ নেতা আইয়ুব আলী ও ছাত্রলীগ নেতা আরিফকে আসামী করা হয়েছে। একই সাথে কাদের মির্জার সমর্থকদের ওপর চাপরাশিরহাটে হামলা-গুলিবর্ষনের ঘটনায় দু’টি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে মেয়র কাদের মির্জার অনুসারি আমেরিকা প্রবাসী আইয়ুব আলী জানিয়েছেন।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি জানান, সকালে থানায় এসে কাদের মির্জা ও তার সমর্থকরা লাঠিসোটা নিয়ে থানায় হামলা করতে আসে। ওসি এবং পরিদর্শককে (তদন্ত) থানা থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন এবং পুলিশের মুখের ওপর হাত এনে অশালীন কথাবার্তা ও মারমুখি আচরণ করে। কাদের মির্জা পুলিশের সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে গায়ে পড়ে মারমুখী আচরণ করে তার সমর্থকদের নিয়ে থানার ভেতরে প্রবেশে বেআইনী চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোম্পানীগঞ্জে দুই জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। এছাড়াও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোম্পানীগঞ্জে ৪০ জন র‌্যাব সদস্য ও ১১০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন