বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজনীতি

একুশের স্বপ্নকে তমসাচ্ছন্ন করা হয়েছে : বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:১৯ পিএম

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তারা বায়ান্ন’র ২১ ফেব্রুয়ারীর সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়- বর্তমানে দেশের মানুষকে নানাভাবে অধিকারহীন করে একুশের স্বপ্নকে তমসাচ্ছন্ন করা হয়েছে। কিন্তু একুশের অম্লান চেতনা ষড়যন্ত্রকারি ও জনগণের মৌলিক অধিকার হরণকারী নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শক্তিকে রুখতে আমাদের উদ্ভুদ্ধ করবে।

বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন ছিল এদেশের জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।

রক্তরাঙ্গা ২১ ফেব্রুয়ারী আমাদের জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। এটি ছিল তৎকালীন পূর্ব বাংলার একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন।

মাতৃভাষা বাংলার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমে এসে পুলিশের গুলিকে পরোয়া না করে নিজের দাবিতে সোচ্চার থাকে।

সেদিন ছাত্ররা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে মাতৃভাষার মহিমা প্রতিষ্ঠায় যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল।

তাদের এই মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে রচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রথম সোপান।
বায়ান্ন সালের ২১’র পথ ধরেই এদেশের সকল গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীকারের সংগ্রাম সম্প্রসারিত হয়ে অর্জিত হয়েছে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা, আমরা পাই স্বাধীনতার স্বাদ।

বাণীতে বলা হয়- সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার সরকারী স্বীকৃতি না দিয়ে তৎকালীন পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এদেশের উপর নিজেদের সাংস্কৃতিক আধিপত্য বজায় রাখতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল-এদেশকে স্থায়ীভাবে পরাধীন রাখার জন্য।

দেশ স্বাধীন হলেও নতুন করে ভিন্ন মাত্রায় আধিপত্যবাদী শক্তি এদেশের উপর সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করে জাতি হিসেবে আমাদেরকে নতজানু করে রাখতে নানা কারসাজী চালিয়ে যাচ্ছে।

ভিন্ন কায়দায় আমাদের ভাষা সংস্কৃতির ওপর বিদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চলছে মহল বিশেষের তাবেদারির জন্য। যাতে আমরা মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে না পারি।

আর এই জন্যই এখন মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আবারো একদলীয় দু:শাসনের শৃঙ্খলে দেশের মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে।

গণতন্ত্রকে আরো কঠিনভাবে লৌহ শৃঙ্খলে বন্ধ করে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে এদেশের বারবার বহুদলীয় গণতন্ত্রের মুক্তির দিশারী বেগম খালেদা জিয়াকে।
একদলীয় নির্দয় অপশাসনে উৎপীড়িত জনগণকে অন্ধকার খাঁচায় চিরদিনের জন্য আটকে রাখতে বাক, ব্যক্তি, মূদ্রণ, চিন্তার স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছে।

এই অপহরণকারিদের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রামে দল, মত নির্বিশেষে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তাই এ মূহুর্তে আমাদের প্রধান কর্তব্য দেশনেত্রীর পূর্ণাঙ্গ মুক্তির জন্য সর্বব্যাপী সংগ্রাম গড়ে তোলা।
সুতরাং এই দু:সময়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে আমাদের প্রেরণা যোগাবে ৫২’র মহান একুশের শহীদদের আত্মদান।

বিএনপির মতে, ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করায় এই দিবসটিতে বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব মাতৃভাষার চর্চা ও বিকাশ ঘটাতে অদম্য প্রেরণা লাভ করবে।

মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের আয়োজিত নানাবিধ কর্মসূচির সাফল্য কামনা করি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ ভাষা সৈনিকদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের জানাচ্ছি সমবেদনা। পাশাপাশি ভাষা সৈনিকদের জানাই শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। তাঁদের পরিবারের সুখ, শান্তি ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

বাণীতে আরো বলা হয়- উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা-এই ঘোষণার বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় তৎকালীন পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয়।

তৎকালীন পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। ফলস্বরুপ বাংলা ভাষাকে সমমর্যাদার দাবিতে পূর্ব-বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে।

‘৫২’র ভাষা আন্দোলন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির চূড়ান্ত প্রকাশ। অধিকার আদায় এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে ভাষা শহীদগণ আমাদের প্রেরণার উৎস।
মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করে তারা আত্মত্যাগের যে গৌরবদীপ্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তার ফলাফল হয়েছে সুদুরপ্রসারী।

পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁদের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনের পথ বেয়ে আমরা অবতীর্ণ হয়েছি স্বাধীনতা যুদ্ধে।

প্রতিষ্ঠিত করেছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাজাত্যবোধ ও অধিকারবোধের চেতনাকে শাণিত করেছিল মহান ২১ ফেব্রুয়ারী।

সেই চেতনা নস্যাৎ করে একদলীয় শাসনের জগদ্দল পাথর আজ জনগণের কাঁধের ওপর চাপানো হয়েছে।

২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতের নির্বাচনে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে প্রতারিত করা হয়েছে-যা খোলাখুলি কারচুপির এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত।

বিএনপির দাবি- গণতন্ত্রকে সমাহিত করে এই দু:শাসন দীর্ঘায়িত করতে অবৈধ শক্তির জোরে সাজানো মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছিল প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য।

এখনো তাকে কারাগার থেকে নিজ গৃহে রাখা হলেও কার্যত: তিনি গৃহবন্দী। তার সকল মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।

বিশ্বাস করি-একুশের চেতনার উত্তরাধিকারী হয়ে এদেশের সংগ্রামী মানুষকে সাথে নিয়ে আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও মৃতপ্রায় গণতন্ত্র পুণরুজ্জীবিত করতে অতিশীঘ্র বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবোই ইনশাআল্লাহ।
শহীদের মহিমান্বিত অবদানের কারণে অমর একুশে ফেব্রুয়ারী আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে।

জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে অধিকতর সমৃদ্ধশালী করে তুলতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

যাতে সমৃদ্ধ সংস্কৃতিসম্পন্ন জাতি হিসেবে আমরা বিশ্ব সভায় মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন