বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কারো বিতর্কে জড়ানো উচিত নয়

শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া দু’জনই মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় প্রেসক্লাবে ডা. জাফরুল্লাহ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া-তারা দুইজনই মুক্তিযোদ্ধা। তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের কারো কোন বিতর্কে জড়ানো উচিত নয়। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রকাশনা সংস্থা ‘দি ইউনিভার্সেল’ এর উদ্যোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের লেখা নতুন গ্রন্থ ‘করোনাকালে বাংলাদেশ’ এর প্রকাশনা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক যিনি, ইতিহাসের যার আলাপের প্রয়োজন নেই তাকে নিয়ে ছোট করার একটা অপরাধ আছে। এই যে দ্বি-চারিতা- এর কারণটা কোথায়? মৌচাকে ঢিল দিলে খোঁচা খেতে হয়। আমার মনে যে প্রশ্নটা আসে, আমি যে প্রশ্নটা রেখেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী কী মুক্তিযোদ্ধা? ঠিক একইভাবে দ্বিতীয় প্রশ্নটা আনছি আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কি মুক্তিযোদ্ধা? আমি মনে করি তারা দুই জনই মুক্তিযোদ্ধা।
শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া কেনো মুক্তিযোদ্ধা তার কারণও ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, কারণটা হলো, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি। উনি তখন গর্ভবতী। উনি কোথায় অবস্থান করেছিলেন? পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর রেশন খেয়েছেন এবং ধানমন্ডিতে সম্ভবত ২২ কি ৯নং বাড়ি, সিএসপি একেএম আহসান সাহেবের বাড়িতে প্রায় ৮ মাস কাটিয়েছেন। উনার (শেখ হাসিনা) দুই ভাই (শেখ কামাল ও শেখ জামাল) সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ঠিক একইভাবে আমরা যদি খালেদা জিয়ার বিষয়টাতে আসি। তার স্বামী একটা শক্তিমান সামরিক সজ্জিত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন। এটা সত্যি কথা প্রথমবার যখন উনি ঘোষণা দেন তখন বলেছিলেন, আই মেজর জিয়া ডিক্লেয়ার্ড দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্স। তারপরে যখন দ্বিতীয়বার ঘোষণা দেন তখন একে খান বললেন, এই জাতীয় ঘোষণা হলে মনে হবে এটা সামরিক ক্যু হয়েছে। এটা রাজনৈতিকভাবে দিতে হবে। তার পরেরটায় যে ড্রাফটা করেন, আই মেজর জিয়া অনবিহাফ অব আওয়ার গ্রেট লিডার শেখ মুজিবুর রহমান ডিক্লেয়ার্ড দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্স। প্রথম যে ঘোষণা সেখানে উনি নিজেকে প্রেসিডেন্টও বলেছিলেন। এটা ইতিহাসের সত্য উনি কয়েক ঘণ্টার জন্য আমাদের বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

বেচারি খালেদা জিয়া একটা ছোট সন্তান যাকে আপনারা কেউ কেউ বেশি পছন্দ করেন, কেউ কম করেন তারেক জিয়া। তাকে নিয়ে একের পর এক বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আত্মগোপন করে বেড়াচ্ছেন। আত্মগোপন করেছেন আবদুল্লাহ সাহেবের বাসায়। তারা তাকে আশ্রয় দেন, তারা তাকে লুকিয়ে রাখেন। যখন না পারেন পরে এক সময়ে অনেক কষ্ট করে খালেদা জিয়া ঢাকায় এসে মৌচাকের কাছে একজনের বাড়িতে ছিলেন। পরে এক সময়ে ধরা পড়ে যান। পরে তাকে ক্যান্টনমেন্টে আটকে রাখা হয়। উনি ছিলেন পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি। ঠিক যেভাবে শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি। ঢিল ছুড়াছুড়ি করলে, সরকার পাগলামি করলে অনেক নতুন কথা আসবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গোপনে ঢাকায় এসে মায়ের সাথে সাক্ষাতের একটি স্মৃতি এবং পরে কলকাতায় গিয়ে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের সাথে দেখা করার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি তাজউদ্দিন সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলাম- আমার মায়ের স্ট্যাটাস কী? উনি বলেছিলেন, অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা। তাই অকারণে কে মুক্তিযোদ্ধা কে মুক্তিযোদ্ধা না- এটা নিয়ে বিতর্ক না করাই ভালো।

জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিল করার প্রস্তাবের সমালোচনা করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, জিয়াউর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর উত্তম একটা প্রমাণিত সত্য। এই উপাধি তো পাকিস্তান দেয় নাই, শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছেন। উনি তো কোনো দিন প্রশ্ন করেন নাই- জিয়া বেটা তোরে কে কইছে আমার নামে ঘোষণা দিতে। বরঞ্চ তাকে প্রমোশন দিয়েছেন। আজকে আপনারা কেন এই প্রশ্ন উঠাচ্ছেন। এই প্রশ্ন উঠিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে অপমান করছেন, বঙ্গবন্ধুকে অপমান করছেন, তাকে ছোট করছেন। ওই যে বললাম, মৌচাকে যদি ঢিল মারেন আজকে প্রশ্ন উঠতে পারে সিরাজ সিকদারের বিচার নিয়ে। এই বোকামী করা এটা পাগলামীর নামান্তর। দেশের বর্তমান দুর্নীতি ও দু:শাসনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের মানুষ ক্ষমতার পরিবর্তন চায়। তিনি বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামার আহবান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের লেখা নতুন গ্রন্থ ‘করোনাকালে বাংলাদেশ’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার মারুফ হোসেনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, আইন বিভাগের অধ্য্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও দি ইউনিভার্সেল এর প্রকাশক শিহাব উদ্দিন ভুঁইয়া বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক হারুন অর রশীদ, আব্দুস সালাম, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ৩১৯ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের মূল্য ধরা হয়েছে ৬শ’ টাকা। গ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকেছেন অরুপ মান্দি। ড. খন্দকার মোশাররফের ইতোমধ্যে ‘মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান’, ‘রাজনীতির হালচাল’, ‘ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের কারাগারে ৬১৬ দিন’সহ ৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

লেখক ড. খন্দকার মোশাররফ তার গ্রন্থে করোনাভাইরাসের পরিচিতিসহ করোনাকালে সার্বিক পরিস্থিতি, দেশের অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে এর বিরূপ প্রভাব, করোনা মোকাবিলায় সরকারের অব্যবস্থাপনা, ব্যর্থতা, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলেন। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস এই বই ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কাজে লাগবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের যদি কাজে লাগে তাহলেই আমার পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছে বলে আমি মনে করব।
ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভ্যাকসিন ক্রয় একটি সূত্র থেকে আনা হয়েছে। সেজন্য আমাদেরকে এখানে মূল্য বেশি দিতে হয়েছে। যে ভ্যাকসিন ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিনেছে ২ দশমিক ১৯ ডলার, ফিলিপাইন কিনেছে ২ দশমিক ৫০ ডলার এবং ভারত নিয়েছে ৩ দশমিক ২০ ডলার, যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে ৪ ডলার আর বাংলাদেশ কিনেছে ৫ ডলার। পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন এই নিয়ে বহু বির্তক হয়েছে। এই ভ্যাকসিন বেশি দামে কেনার জন্য আমাদের দেশকে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন