শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দুআর হাকীকত এবং দুআর আনুষ্ঠানিকতা

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:৫৯ পিএম

আল্লাহ যদি তোমাকে কোনো অকল্যাণ দিয়ে আক্রান্ত করেন তাহলে তিনি ছাড়া তা দূর করার আর কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমার কোনো কল্যাণ চান তবে তাঁর দয়া প্রতিহত করারও কেউ নেই। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা কল্যাণ দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ইউনুস : ১০৭)। এ ঘোষণা পবিত্র কোরআনের। প্রতিটি মুমিনই শাশ্বত এ বাণীতে বিশ্বাস করে। এ বিশ্বাস তার ঈমানের অংশ। সঙ্গত কারণেই যে কোনো আপদে-বিপদে মুমিন আল্লাহ তাআলারই শরণাপন্ন হয়। তাঁকেই ডাকে। তাঁর কাছেই দুআ করে। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছেন এভাবে : যখন তুমি কিছু প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে; যখন সাহায্য চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। (জামে তিরমিযী : ২৫১৬)।

এজন্যে কোনো বিপদ এলেই, কোনো সঙ্কট তৈরি হলেই মুমিন আল্লাহ তাআলার দরবারে দু’হাত তুলে দুআ করতে থাকে। তার বিশ্বাস-আল্লাহ ছাড়া তাকে বিপদ থেকে বাঁচানোর কেউ নেই, তার প্রয়োজন পূরণ করে দেয়ার মতো অন্য কেউ নেই। বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকা- এ তো আল্লাহর বিধান অমান্যকারী, কার্যত আল্লাহকে অস্বীকারকারী কাফেররাও করে। পবিত্র কোরআনে একটি উপমায় চিত্রিত করা হয়েছে কাফেরদের এ অবস্থা।

লক্ষ করুন : তিনিই সেই সত্তা, যিনি তোমাদেরকে জলে-স্থলে ভ্রমণ করান এবং তোমরা যখন নৌকারোহী হও, এগুলো আরোহীদেরকে নিয়ে অনুকূল বাতাসে বয়ে যায় আর তারাও এতে আনন্দিত হয়, অতঃপর এক ঝড়ো বাতাস তাতে আঘাত হানে এবং সর্বদিক থেকে তরঙ্গ তাদের ওপর আছড়ে পড়ে আর তারা মনে করে- তারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছে, তখন তারা আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে আল্লাহকে ডেকে বলে- ‘তুমি যদি আমাদেরকে এ থেকে উদ্ধার করো তবে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ অতঃপর তিনি যখনই তাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখনই তারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে জুলুম করতে থাকে। (সূরা ইউনুস : ২২-২৩)।

আরেক আয়াতের বর্ণনা : তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন তারা বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে ভিড়িয়ে দেন, তখন তারা শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে! (সূরা আনকাবূত : ৬৫-৬৬)।

তাই কেবলই বিপদের সময় আল্লাহকে ডাকা মুমিনদের কোনো বিশেষত্ব নয়। তারা তো সুখে-দুঃখে উৎসবে-সঙ্কটে সর্বাবস্থায়ই আল্লাহকে ডাকে। যে কোনো কাজ করার সময় তারা আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে। সে কাজটি কঠিন মনে হলেও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, এমনকি সহজ মনে হলেও আল্লাহকেই ডাকে। মুমিন বান্দার ফরিয়াদ তো এমন, হে আল্লাহ! আপনি যা কিছু সহজ করে দেন তা ছাড়া তো সহজ আর কিছুই নেই। আপনি যখন ইচ্ছা করেন তখন দুঃখ-কষ্টকেও সহজ করে দেন।

তাই টাকা-পয়সা থেকে শুরু করে যাবতীয় উপায়-উপকরণ হাতে নিয়েও মুমিন বান্দার একটাই দুআ- আল্লাহ! আপনি সবকিছু সহজ করে দিন! আপনি না চাইলে কোনো কিছুই সহজ হতে পারে না। মোটকথা, ইহকালীন ও পরকালীন সুখ-শান্তির জন্যে, বিপদ থেকে মুক্তির জন্যে এবং সার্বিক কল্যাণের জন্যে মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে দুআ করে থাকে। দুআর আদেশ স্বয়ং আল্লাহর : তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। (সূরা মুমিন : ৬০)।

দুআ হচ্ছে বন্দেগি ও দাসত্ব প্রকাশের চূড়ান্ত মাধ্যম। রাসূলে কারীম (সা.) যে গুণাবলিতে গুণান্বিত ছিলেন, এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ হচ্ছে তাঁর গোলামি ও দাসত্ব। মানুষকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিই করেছেন তাঁর ইবাদত ও দাসত্ব করার জন্যে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি মানুষ ও জিন জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যেই সৃষ্টি করেছি। (সূরা যারিয়াত : ৫৬)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Kamal Uddin ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
দোয়া শব্দের অর্থ আল্লাহকে ডাকা, কিছু চাওয়া, প্রার্থনা করা অর্থাৎ বিনয়ের সঙ্গে মহান আল্লাহর কাছে কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রার্থনা করাই হল দোয়া।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:০৩ এএম says : 0
দোয়াকে আল্লাহ ইবাদত হিসেবে অভিহীত করেছেন এবং সাহায্য লাভের মাধ্যম বানিয়েছেন। তাইতো কুরআন ও হাদীছে নববী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে মানুষকে দোয়ার বিষয়ে নির্দেশ তথা তাক্বীদ দিয়েছেন।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:০৪ এএম says : 0
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি আল্লাহর নিকট দোয়া করে এবং সে দোয়া’র মধ্যে পাপ অর্থাৎ অসৎ উদ্দেশ্য এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রসঙ্গ না থাকে, তবে আল্লাহ তাআলা উক্ত দোয়া’র বিনিময়ে ঐ ব্যক্তিকে তিনটি প্রতিদানের যে কোনো একটি দান করেন। ১। ঐ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ দ্রুত কবুল করেন; ২। তার প্রতিদান আখেরাতে প্রদানের জন্য জমা রাখেন; অথবা ৩। তার থেকে অনুরূপ আরেকটি কষ্ট বা সমস্য দুরীভ‚ত করেন। এ প্রতিদানের কথাগুলো শুনে ছাহাবায়ে কেরাম বললেন, তাহ’লে আমরা বেশী বেশী দু’আ করব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলরেন, আল্লাহ আরও বেশী দু’আ কবুলকারী। (মুসনাদে আহমদ/মিশকাত)
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:০৪ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের তাঁর শেখানো ভাষা ও নিয়মে, দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণে লাভে আশ্রয় প্রার্থণা করার তৌফিক দান করুন আমীন। ছুম্মা আমীন
Total Reply(0)
হোসাইন এনায়েত ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
দোয়ার আদব: ১. কাকুতি-মিনতি সহকারে ও গোপনে দোয়া করা। ২. একমনে ভয় ও আকাঙ্খা সহকারে এবং অনুচ্চ বা মধ্যম স্বরে দোয়া করা। ৩. দোয়া সারগর্ভ ও তাৎপর্যপূর্ণ হওয়া।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন