শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বৈদ্যুতিক রেলপথ নির্মাণের প্রস্তাব

১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশের রেলখাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি কোম্পানি। ১০ বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তিন ধাপে তারা ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) দেয়া ওই প্রস্তাবে প্রথম ধাপে কনটেইনার পরিবহন ও অন্যান্য মালপত্র পরিবহনে পায়রা বন্দর থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ডাবল ট্র্যাক বৈদ্যুতিক রেললাইন নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা। প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে নির্মাণ হবে নতুন পদ্মা সেতু থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে মাতারবাড়ী বন্দর পর্যন্ত উচ্চগতির প্যাসেঞ্জার রেল। আর প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্যাসেঞ্জার রেলের সম্প্রসারণ করা হবে। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, এ ধরনের প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাইয়ে অনেক তথ্য প্রয়োজন হয়। বিনিয়োগ প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ে আছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো যত দ্রুত করা যায় ততই ভালো। দেশে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে প্রকল্পটি বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবে বলে আমরা মনে করছি। এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বিনিয়োগের বিষয়টি ইআরডি দেখে। বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে পিপিপি নীতিমালা করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর চীন থেকে ফিরে আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম, নতুন যে রেলপথগুলো হবে সেগুলোতে ইলেকট্রিক ট্রাকশন রাখা যায় কিনা। তাতে অনেক টাকা লাগে। বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন। প্রয়োজন আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল সংযোগের। উপরের ক্যাবল ঝড়-বৃষ্টিতে নিরাপদ নয়।

তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক ট্রেন চালাতে গেলে এগুলোর সবই প্রয়োজন হবে। রেলমন্ত্রী বলেন, পিপিপি নীতিমালায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছি। এতে সাড়াও মিলছে। সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলে যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা প্রস্তুত।
দেশের সব জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। রেলের নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ১৬০ কিলোমিটার বা দ্রুতগতির বৈদ্যুতিক রেলপথ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বৈদ্যুতিক রেলপথ অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি আইএম পাওয়ার।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষার্ধে বাংলাদেশে ‘ইন্টিগ্রেটেড রেল অ্যান্ড এনার্জি প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব দেয় যুক্তরাজ্যের বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতের প্রতিষ্ঠান আইএম পাওয়ার পিএলসি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) দেয়া ওই প্রস্তাবে প্রথম ধাপে কনটেইনার পরিবহন ও অন্যান্য মালপত্র পরিবহনে পায়রা বন্দর থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ডাবল ট্র্যাক বৈদ্যুতিক রেললাইন নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানিটি। তারা যুক্তরাজ্যসহ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বৈদ্যুতিক রেললাইন পরিচালনায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেরও প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিডা সূত্র জানায়, চার বছর মেয়দি প্রথম ধাপটি সম্পন্নে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে নির্মাণ হবে নতুন পদ্মা সেতু থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে মাতারবাড়ী বন্দর পর্যন্ত উচ্চগতির প্যাসেঞ্জার রেল। দ্বিতীয় ধাপে অর্থায়ন প্রয়োজন হবে ৬ বিলিয়ন ডলার। আর প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্যাসেঞ্জার রেলের সম্প্রসারণ। তৃতীয় ধাপ সম্পন্নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এছাড়া রেলওয়ে ট্র্যাক বরাবর বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে তারা। সব মিলিয়ে ১১ দশমিক ৭ বা প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রস্তাবে একটি কন্ট্রাক্ট গ্রুপ বা কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে বাংলাদেশে পিপিপি বা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের আভাস দেয়া হয়েছে। কন্ট্রাক্ট গ্রæপে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে রেলপথ প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান অ্যাডভিসিয়ান, টেনব্রোয়েকে, ব্রিটিশ স্টিল, সিমেন্স, ডবিøউএইচ ডেভিস, গ্রিন এনার্জি গ্রুপ, উড পিএলসি, লিবার্টি স্টিল ও এইচআর ওয়েলিংফোর্ড। ডিজাইন-বিল্ড-অপারেট অ্যান্ড মেইনটেইন পদ্ধতিতে সরকারের কাছ থেকে ৫০ বছর মেয়াদে (কনসেশন পিরিয়ড) প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে আইএম। সহযোগী অংশীদারদের মাধ্যমে চুক্তিকারী গ্রুপ থেকে ইকুইটি ও ডেটসহ এ প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে বলে পরিকল্পনায় জানিয়েছে তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ব্যবসায় নিয়োজিত আইএম মূলত রেল বিদ্যুতায়নের সমন্বয় করে। বাংলাদেশে এ কাজগুলো তারা করতে চাইছে কনটেইনার পরিবহনের জন্য। দ্বিতীয় ধাপের পরিকল্পনায় আছে উচ্চগতির প্যাসেঞ্জার পরিবহনে। প্রস্তাবটি বিডা ও রেল মন্ত্রণালয় সাদরে গ্রহণ করেছে। করোনাভাইরাস বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যসহ গোটা বিশ্বের জীবনে প্রভাব ফেললেও এ সমস্যাও দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যদিও এরই মধ্যে গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিনিয়োগ পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু দ্রুতই এ পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে বলে আত্মবিশ্বাস রয়েছে তাদের।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের নভেম্বরে বিডায় প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাব দেয় আইএম পাওয়ার। বিডার মাধ্যমে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি পাঠানো হলে তারা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে। প্রাথমিক প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাইয়ে নিজস্ব মতামতও জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে রেলওয়েকে প্রস্তাবের আরো কিছু বিস্তারিত বিষয় উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকেও তাগিদ জানানো হয়েছে বিডা ও বাংলাদেশ রেলওয়েকে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, আইএম পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের প্রস্তাবটি এরই মধ্যে কিছু প্রাথমিক মতামত উপস্থাপন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। সেখানে আরো বিস্তারিত তথ্যানুসন্ধানের দিকনির্দেশনাও আছে। রেলওয়ে নিয়ে সরকারের গ্রহণ করা প্রকল্পের সঙ্গে প্রস্তাবটির কোনো দ্বৈধতা আছে কিনা তা সুস্পষ্ট করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে রেলওয়ে। পিপিপি মডেলের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও তা আরো যথাযথ করার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করছে সংস্থাটি।

বৈদ্যুতিক রেললাইন নির্মাণের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি সক্ষমতা যাচাইয়ের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণারও তাগিদ জানিয়েছে রেলওয়ে। রেলপথটিতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ এবং তার দামের সম্পর্কেও স্বচ্ছ প্রক্ষেপণ প্রয়োজন। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও রেলওয়ে একটি মাত্র কোম্পানির (কনসোর্টিয়াম) কর্তৃত্বে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও আইএম পাওয়ারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে রয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ পরিস্থিতির বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সাপেক্ষে পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নেয়া অপরিহার্য বলে মনে করছে সংস্থাটি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
সবুজ ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
এখন বৈদ্যুতিক রেললাইন নির্মাণ কতটা যুক্তিযুক্ত সেটাই চিন্তার বিষয়
Total Reply(0)
Roshidul Arifin ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৫৬ এএম says : 0
শুভ উদ্যোগ, সাধুবাদ জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা রইলো
Total Reply(0)
Parvez ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৫৭ এএম says : 0
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ
Total Reply(0)
Umme Salma ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:০০ এএম says : 1
বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন।
Total Reply(0)
Gias Uddin Manik ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:০১ এএম says : 0
এগিয়ে যাক আমার স্বদেশ
Total Reply(0)
গোলাম মোস্তফা ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:০২ এএম says : 0
শীতের মধ্যেও ঢাকায় কয়েকবার লোডশেডিং হয় আর আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা চিন্তা করছি
Total Reply(0)
Karim ullah. ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:১৩ এএম says : 0
নতুন পদ্মা সেতু, বিষয়টা বুঝলাম না ।তাহলেকি ।আর একটা পদ্মা সেতু তৈরী হবে?
Total Reply(0)
Mominul+Hoque ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৩৯ এএম says : 0
বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে আরো উন্নত করার লক্ষ্যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত দ্রুত গতির ট্রেন সার্ভিস অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে!
Total Reply(0)
Jack+Ali ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:৩৮ এএম says : 0
Our government made our nation disable, we cannot manufacture, produce anything's, we always need to dependent on foreign countries. When ever there is project then they will loot million million dollar. They have destroyed our Sacred mother land from every corner. China is human being like us but we are Dumb, Deft and Blind.
Total Reply(0)
Rmp Harun ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:০২ পিএম says : 0
বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকা,এখানে প্রতি বছর লোকসানগুনতে হয়,মোদের সোনারদেশের সুন্দরমানুষের দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রের আমাদের,বিদেশি রাষ্ট্র বিনিয়োগ করা,সোনার বাংলার সকল মানুষের দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রেরবিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে ফোনকরে মানবতার মাধ্যমে আমরা আমরা সবাইরই প্রয়োজন।।
Total Reply(0)
NAZMUL AHASAN DIPU ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:০৬ পিএম says : 0
This project is not viable for Bangladesh. Because our 100% people are not under electric service. Power production is too much costly for Bangladesh. For power production we have to use coal or oil, which is imported from abroad through foreign currency. Diesel Engine is best solution for us. We will import oil from abroad and by which rail engine will all over the country.
Total Reply(0)
SHAHID KHAN ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:২০ পিএম says : 0
আগে দেশের সকল রেলপথ ডাবল লাইন করুন। পরের চিন্তা পরে হলে ভাল হয়।
Total Reply(0)
Forid Moho ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:৪৬ পিএম says : 0
বাংলাদেশি অনেক জনগণ চোর আছে । তারা দেশকে ভালোবাসে না, তারা বিদ্যুতের তার চুরি করে, বিদ্যুৎ চুরি করে অনেক বড় লোক হবে, আর ঝড় বৃষ্টিতে পোল এবং তারের ক্ষতি হবে ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন