শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জড়িতদের সন্ধানে মাঠে দুদক টিম

গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে অর্থপাচার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

ওভার ইনভয়েস-আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বছরে পাচার হচ্ছে- ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা পাচার করছেন গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ। দেশি-বিদেশি গবেষণায় উঠে আসা এ তথ্যের সূত্র ধরে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়েছেন সংস্থার সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদকের চাহিদার ভিত্তিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ওভার ইনভয়েসিং সংক্রান্ত কিছু তথ্য পাঠিয়েছে। যার ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন সদস্যের টিম গঠন করেছে। বর্তমানে উক্ত টিম অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু ব্যাপকভিত্তিক। তাই অনুসন্ধান প্রক্রিয়াসম্পন্ন হতে সময় লাগবে। দুদক এনবিআর থেকে এর মধ্যেই তথ্য পেতে শুরু করেছে। দুদক সচিব আরও জানান, সংস্থার উপ-পরিচালক বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের টিম বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। সহকারী পরিচালক আতাউল কবির এবং বজলুর রশিদ টিমের অপর দুই সদস্য।
অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে ‘সন্দেহভাজন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি মালিক’দের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এখন থেকে এনবিআর ওভার ইনভয়েসিংয়ের তথ্য পাওয়ামাত্র নিয়মিতভাবে দুদককে সরবরাহ করবে। বিদেশে অর্থপাচার রোধে দুদক অত্যন্ত কঠোর। তদন্ত করার মতো তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুদক অর্থপাচার রোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ক্ষেত্রে দুদক বিএফআইইউ এবং সেন্ট্রাল অথরিটি তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা দরকার হবে।
এদিকে দুদকের একটি সূত্র জানায়, ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) গতবছর ৩ মার্চ অর্থপাচার সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমেও গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইউ)র আমদানি-রফতানির মাধ্যমে অর্থপাচারের বিষয়টি শনাক্ত করে। সন্দেহভাজনদের একটি তালিকা দুদকে পাঠায় ব্যবস্থার নেয়ার জন্য। এ প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ওই প্রতিবেদনের সত্যতাও খুঁজে পাওয়া যায়।
কমিশনে জমা দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়। বর্তমান বাজারদরে (৮৫ টাকায় প্রতি ডলার) বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অংক ৬৪ হাজার কোটি টাকা। ১৩৫টি উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশের গত ১০ বছরের (২০০৮-২০১৭) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মূল্য ঘোষণার গরমিল দেখিয়ে কীভাবে দেশ থেকে অর্থপাচার হয়, সেই চিত্র তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে ৩৫টি উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনামূলক চিত্রও উল্লেখ করা হয়েছে।
একটি দেশ অন্য দেশের সঙ্গে আমদানি-রফতানি করার সময় প্রকৃত মূল্য না দেখিয়ে কমবেশি (ওভার ইনভয়েস-আন্ডার ইনভয়েস) দেখানো হয়। মূল্য ঘোষণার বাড়তি অংশের অর্থ বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়। এমন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জিএফআই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাংলাদেশ বিষয়ে ২০১৪,২০১৬ ও ২০১৭ সালের কোনো তথ্য-উপাত্ত দেয়া হয়নি। মাত্র ৭ বছরের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অর্থপাচারের হিসাব উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবছরের গড় অর্থপাচারের হিসাবে ওই ১৩৫টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩৩তম। এ দেশে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে মূল্য ঘোষণার গরমিল দেখিয়ে টাকা পাচার হয়। প্রাসঙ্গিকভাবে এমন কিছু ঘটনা উদ্ঘাটনের উদ্ধৃতিও দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য সব দেশের যত আমদানি-রফতানি হয়, তাতে গড়ে ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ বা প্রায় ১৮ শতাংশের মূল্য ঘোষণায় গরমিল থাকে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০০৮ সালের পরে বাংলাদেশে এভাবে মূল্য ঘোষণায় গরমিল দেখিয়ে অর্থ পাচারের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৫১ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিদেশে চলে গেছে। ২০০৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ৫২৮ কোটি ডলার। এ ছাড়া ২০০৯ সালে ৪৯০ কোটি ডলার, ২০১০ সালে ৭০৯ কোটি ডলার, ২০১১ সালে ৮০০ কোটি ডলার, ২০১২ সালে ৭১২ কোটি ডলার ও ২০১৩ সালে ৮৮২ কোটি ডলার বিদেশে গেছে।
প্রতিবেদন মতে, বছরে গড়ে ৩২৯ ডলার ওই সব উন্নত দেশে চলে গেছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৫৮ কোটি ডলার। ২০০৮ সালে এভাবে উন্নত দেশে গেছে ২৫৫ কোটি ডলার। প্রতিবেদন সম্পর্কে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী প্রায় সবার ছেলেমেয়ে বিদেশে থাকে। সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তরা টাকা সরানোর চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে এ দেশে বিনিয়োগ বা টাকা রাখায় কোনো আস্থা নেই। সুশাসন না থাকলে টাকা পাচার হবেই। টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িতরা সমাজের এলিট শ্রেণি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন