বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশমুখী পর্যটন

মৌসুম শেষেও কেন্দ্রগুলোতে ভিড় : পর্যটন ব্যবসায়ীদের মুখে স্বস্তির হাসি পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে : পর্যটন করপোরেশন করোনা-পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হও

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত পর্যটন খাত আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজার, খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালি, বান্দরবান, কুয়াকাটা, সিলেট, সেন্টমার্টিন ও সুন্দরবনসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত বিভিন্ন স্থান এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখর। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে লাখো পর্যটকের ভিড়। শুধু তাই নয় ঢাকার আশপাশে ছোটখাট রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও মানুষের ভিড় বাড়ছে। আগে অনেকে বছরে দু’তিন বার ভারত, সিঙ্গাপুর, নেপাল বা অন্য কোনো দেশে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যেতেন। করোনার কারণে তারা এখন বিদেশে যেতে পারছেন না বলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অর্থাৎ বলা যায় বাংলাদেশমুখী এখন পর্যটন।

পর্যটন মৌসুম প্রায় শেষ হলেও সাপ্তাহিক ছুটির সাথে মাতৃভাষা দিবসের বাড়তি ছুটি পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই গেছেন পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। আবার কেউ কেউ গেছেন খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালি বা বান্দরবানে। আবার কেউবা ছুটে গেছেন সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এভাবেই মানুষ একটু সময় সুযোগ পেলেই পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ছেন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে গিয়ে নাগরিক জীবনের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করছেন।

গত বছর মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণপিপাসুদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। ফলে এ খাতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট লোকজন ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, করোনায় এ খাতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কর্মহীন হয়েছে ৪০ লাখ লোক। তবে করোনা মহামারির শুরুর দিকের এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে পর্যটন খাত আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত আগস্টে দেশের সব পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার পর দিনে দিনে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলো জমজমাট হয়ে উঠে। অক্টোবরের শেষ থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত এই মৌসুমে পর্যটন ব্যবসা পুরো চাঙ্গা হয়ে উঠে। এ সময়ে প্রতিটি পর্যটন স্পটে ভ্রমণপিপাসুদের ঢল নামে। বলা যায় বছর শেষে ট্যুরিজম খাত পুরোপুরি চাঙ্গা হয়ে উঠে।

আমাদের কক্সবাজার ব্যুরো প্রধান শামসুল হক শারেক জানান, আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই ছুটিতে পর্যটন শহর কক্সবাজার সৈকতে ছিল মানুষের ঢল। এখনো পর্যটকদের ভিড়ে মুখর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এ অবস্থা আরো কয়দিন চলতে পারে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সী-ইন পয়েন্ট, কলাতলীর ডলফিন পয়েন্টসহ ইনানী, হিমছড়ি ও টেকনাফ সৈকতে এখনো পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। একইভাবে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনও মুখর রয়েছে পর্যটকে। তিনি জানান, গত দু’তিনমাস থেকেই কক্সবাজারের হোটেল মোটেল পুরোপুরি বুকিং রয়েছে। তারকা হোটেল থেকে সাধারণ হোটেল পর্যন্ত ৪ শতাধিক হোটেলের কোথাও রুম খালি নেই। এমনকি আগে বুকিং না দিয়ে যারা গত দু’একদিন আগে কক্সবাজার এসেছেন তাদের অনেকে রাত যাপন করছেন যানবাহনে অথবা শহরের বাসাবাড়িতে। এ প্রসঙ্গে হোটেল মোটেল গেস্টহাউজ সমিতির নেতা আলহাজ্ব আবুল কাসেম সিকদার বলেন, বর্তমানে বেশ ভালো পর্যটক আসছেন। এটি করোনা সঙ্কটকালীন ক্ষতি পোষাতে সহায়ক হবে।

সিলেট অফিস থেকে ফয়সাল আমীন জানান, প্রাকৃতিক সুন্দর্য উপভোগ করতে সিলেটে লাখো পর্যটকের ভিড়। ফলে পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীদের মুখে এখন হাসির ঝিলিক। যে হাসি কেড়ে নিয়েছিল করোনা মহামারি। সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্টহাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধক্ষ্য গোলাম কিবরিয়া লিপন বলেন, করোনাকালীন পরিস্থিতির ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল আমাদের ব্যবসা। সঙ্কট ছিল ব্যাপক। কিন্তু করোনার ভ্যাকসিনের সুখবর ও প্রয়োগের পর থেকে ইতিবাচক এক পরিবর্তন দেখছি। পর্যটক ব্যাপক হারে বাড়ছে। হোটেলগুলো আগাম বুকিং হচ্ছে। কঠিন দুঃখের পর সুখের আবহে আমরা বেশ তৃপ্ত।

করোনা মহামারির প্রভাবে অন্যান্য খাতের মতো বিপর্যস্ত ছিল পর্যটন খাত। মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর অচল হয়ে পড়েছিল দেশের সম্ভাবনাময় এ খাত। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের চলাচলে দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। যাত্রী সঙ্কটে বন্ধ ছিল সব ফ্লাইট। বাতিল হয়ে যায় বাংলাদেশে আসা পর্যটকদের অগ্রীম হোটেল বুকিং, বিমান টিকিটসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু। এর ফলে এ খাত সংশ্লিষ্ট লোকজন ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েন। বেকার হয়ে পড়েন অনেক শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সংশ্লিষ্টদের দাবি, করোনা শুরুর প্রথম চার মাসেই এ খাতে ক্ষতি হয় ১৪ হাজার কোটি টাকা। কর্মহীন হয়ে পড়েন ৪০ লাখ লোক। এর মধ্যে শুধু তারকা হোটেলেরই ক্ষতি ছাড়ায় ৭ হাজার কোটি টাকা। প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, করোনায় দেশে বেকার হয়ে পড়া হোটেল শ্রমিক ও কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। মহামারির ধাক্কা লাগে ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ব্যবসায়ও। প্রতিদিন লোকসান হয় শত কোটি টাকা। তারই মধ্যে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। সম্ভাবনার এ খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়ায়। ট্যুরিজম খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অঘোষিত এই লকডাউন শেষে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার পর পর্যটকদের উপস্থিতি তাদেরকে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস যুগিয়েছে। যদিও এখনো আন্তর্জাতিক পর্যটক অনেক কম। তারপরও শুধু দেশীয় পর্যটকদের ভিড় তাদের আস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে। খুব শিগগিরই বিদেশিদের আনাগোনা স্বাভাবিক হবে তখন পর্যটন খাত আরো চাঙ্গা হবে বলে তারা আশাবাদী।

ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম বাংলাদেশের প্রধান মো: শামীম বলেন, বছর শেষে পর্যটন খাত অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারির শুরুর দিকে একেবারে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। বর্তমানে সে অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে এ খাত চাঙ্গা হচ্ছে। করোনা-পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় মানুষ বন্দিদশা থেকে বের হচ্ছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে ভিড়। সব মিলিয়ে পর্যটন খাত আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো: হান্নান মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারির বিপর্যয় কাটিয়ে পর্যটন শিল্প অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ শিল্পকে আরো চাঙ্গা করতে সরকার ইতোমধ্যে অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের প্রতি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে পর্যটনবর্ষ পালন করা হচ্ছে।

ট্যুরিজম বোর্ড সূত্র জানায়, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকার বেশকিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে করে পর্যটকদের জন্য নতুন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়ছে। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজারে তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এগুলো হলো- সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক। এতে প্রতি বছরে বাড়তি ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া প্রায় ৪০ হাজার নতুন লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এর বাইরে দেশে আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা মানের হোটেল স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেটসহ অন্যান্য এলাকায় নতুন আরো ১০টি পাঁচ তারকা মানের হোটেল হবে। এতে আরো প্রায় ১০ হাজারের মতো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Josim Sikdder ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:৪১ এএম says : 0
বর্তমানে বেশ ভালো পর্যটক আসছেন। এটি করোনা সঙ্কটকালীন ক্ষতি পোষাতে সহায়ক হবে।
Total Reply(0)
মমতাজ আহমেদ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:৪২ এএম says : 0
যাতায়েত ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন করলে পর্যটকের সংখ্য আরও বাড়বে।
Total Reply(0)
হাবীব ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:৪৩ এএম says : 0
বাংলাদেশের প্রতি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে পর্যটনবর্ষ পালন করা হচ্ছে। ---এটা খুবই ভালো উদ্যোগ
Total Reply(0)
আবদুর রহমান ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:৫৪ এএম says : 0
খুবই ভালো খবর
Total Reply(0)
সাদ্দাম ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:৫৫ এএম says : 0
বিদেশী পর্যটকদেরকে আকর্ষিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
Total Reply(0)
রুহান ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:৫৬ এএম says : 0
আশা করি আল্লাহর রহমতে সকল ব্যবসাই এখন চাঙ্গা হবে।
Total Reply(0)
Sarwar Chowdhury ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৪৬ পিএম says : 0
আমাদের অপরুপ এই লীলাভূমি কক্সবাজার অত্যন্ত ব্যায়বহুল একটি কেন্দ্র। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর হোটেল/মোটেলের ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত। নয়তো এই খরচে পর্যটকেরা অন্য কোথাও চলে যাবে। আর তাছাড়া একটি কল্যানকামী রাস্ট্রের দায়িত্ব হলো অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সিটিজেনদের ভ্রমণে উৎসাহিত করা এবং হ্রাসকৃত মুল্যে ভ্রমণের ব্যাবস্থা জোরদার করা। অন্তত BPCL এর কিছু রুম হ্রাসকৃত মুল্যে সিনিয়র সিটিজেনদের সেবা দেওয়া। কারণ আমার মনে হয় প্রচন্ড পরিশ্রমের পর দীর্ঘ ক্লান্তিকর অবসর জীবনে বাংলার এই অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করা তাদের অধিকার।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন