প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী এবং প্রথম খলিফাতুল মুসলিমীন, আমিরুল মোমেনীন, সাইয়েদুনা হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ছিলেন প্রথম কোরআন সঙ্কলনকারী। ইসলামের সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে ভন্ড নবীদের নির্মূল ও কোরআনকে চিরকালের জন্য সুরক্ষা ও নিরাপদ রাখার জন্য তাঁর গৃহীত সুদূরপ্রসারী ভ‚মিকা ছিল নজিরবিহীন, অতুলনীয়। মাত্র আড়াই বছর খেলাফত আমলে ইসলামের আরো নানা ক্ষেত্রে প্রথম খলিফার অবদান ইতিহাসের বিস্ময়কর ঘটনাবলির অন্তর্ভুক্ত। বিশেষত: পবিত্র কোরআন সঙ্কলনের সুকীর্তির কোনো তুলনা হয় না। অবাক করার মতো এ কীর্তি তিনি কিভাবে স্থাপন করেন এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করেন তা দেখার বিষয়।
এটা জানা কথা যে, কোরআন মজিদের সুবিন্যাস-সুরক্ষার প্রাথমিক কাজ খোদ নবুওয়াত যুগেই সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সকল অংশ বা খন্ড একত্রে ছিল না, কারো কাছে কোনো অংশ ছিল। কারো নিকট কোনো পূর্ণ সূরা ছিল এবং কারো কাছে অপূর্ণ সূরা বা অংশ সংরক্ষিত ছিল। কোরআনের অংশগুলো এইভাবে ছড়িয়ে থাকার মূল কারণ ছিল এই যে, ওহী নাজেল হওয়ার সময় ওহী লেখক (কাতেবীনে ওহী) গণের মধ্যে যিনি উপস্থিত থাকতেন, হুজুর (সা.) তাঁর দ্বারা লেখাতেন। কোনো কোনো বর্ণনা মতে, তাদের সংখ্যা সর্বোচ্চ চল্লিশ পর্যন্ত ছিল। তাছাড়া ওহী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে নাজেল হয়েছে, মদীনায় হিজরতের পূর্বে, মক্কায় অনেক সূরা নাজেল হয়েছিল, যেগুলো মক্কী সূরা নামে পরিচিত। মদীনায় হিজরতের পর কোরআনের যেসব সূরা নাজেল হয়, হুজুর (সা.) সেগুলোও একই পদ্ধতিতে লেখাতেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাত পর্যন্ত ‘কাতেবীনে ওহী’ ছাড়াও প্রচলিত প্রাচীনলিপি পদ্ধতিগুলো চালু থাকলেও ‘মাসহাফ’ আকারে কোরআন একত্রে বাঁধাই করা ছিল না। বিভিন্ন লোকের নিকট আংশিক বা খন্ড খন্ড আকারে বিভিন্ন বস্তুতে লিখিত ছিল, তবে ক্বারী ও হাফেজদের বক্ষে পূর্ণভাবে সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল না, যার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা যায়। কেননা বিভিন্ন রণাঙ্গণে ক্বারী ও হাফেজদের উল্লেখযোগ্য অংশ শাহাদতবরণ করার ফলে এই আশংকা হতে থাকে যে, এমন সময় উপস্থিত হতে পারে যে, যখন হাফেজদের সংখ্যা শূন্যের ঘরে চলে যাবে। এ আশঙ্কা ‘ইয়ামামা’ যুদ্ধের পর আরো তীব্র আকার ধারণ করে। কেননা এ যুদ্ধে হাফেজ ও ক্বারীদের সিংহভাগই শাহাদতবরণ করেন, যা ছিল এ দিক থেকে ইসলামের ইতিহাসে সর্বাধিক বেদনাদায়ক ঘটনা।
বাস্তবতা ছিল এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় সূরাগুলোর বিন্যাস এবং সেগুলোর নাম নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল, কেবল বিক্ষিপ্ত ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অংশগুলোকে একত্রিত করার কাজটি সম্পন্ন করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ কাজটি খুব সহজসাধ্য ছিল না, এ জন্য উপযুক্ত সময়েরও প্রয়োজন ছিল। হজরত সিদ্দীকে আকবর (রা.)-এর দৃঢ় সংকল্পের ফলে এ সুকঠিন কাজটি সম্পন্ন হয়ে যায়। তিনি কোরআন মজিদকে রীতিমতো একটি কিতাব আকারে সঙ্কলনের কার্যকর ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। বর্ণিত আছে যে, খলিফা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ‘কাতেবে আলা’ বা প্রধান লেখক হজরত জায়দ ইবনে সাবেত (রা.)-কে কোরআন মজিদের একটি নকল (কপি) প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন, তিনি এ কাজ যথাসময়ে সুচারুরূপে আনজাম দেন। এভাবে কোরআন মজিদ প্রথম সঙ্কলন করার গৌরব লাভ করেন ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন