শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

রাশিয়া-তুরস্ক ভ্রাতৃত্ব: বৈশ্বিক রাজনীতির নয়া মেরুকরণ

ডানা ইশরাত | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

ক্রেমলিন উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের ৩০ টি দেশ নিয়ে গঠিত সামরিক সংস্থা ন্যাটোর বিরুদ্ধে ভ্লাদিমির পুতিনকে উৎখাত চেষ্টার অভিযোগ এনেছে। তবে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত এবং ইইউ’র সদস্যপদ প্রার্থী একমাত্র তুস্কের ক্ষেত্রে ক্রেমলিনের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং সহিংস সংঘর্ষ ঘটলেও দেশ দু’টি পরস্পরের সাথে অপ্রতাশ্যিতভাবে একটি গভীর সম্পর্ক স্থাপন করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের মধ্যকার ভাতৃত্বের নয়া বন্ধন বৈশ্বিক রাজনীতিকে পুনর্র্নিমাণ করছে এবং বর্তমানে তুরস্কের পশ্চিমা মিত্রদের জন্য কঠিন সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।
পুতিন গত অক্টোবরে ভালদাই ডিসকাশন ক্লাবে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের বলেছেন, ‘এমন অংশীদারের সাথে কাজ করা কেবল আনন্দদায়কই নয়, নিরাপদও বটে।’ এরদোগান পুতিনের প্রশংসার প্রত্যুত্তরে রাশিয়া থেকে যে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কিনেছিলেন, তার পরীক্ষামূলক নিক্ষেপ করে পুতিনকে সালাম জানান। গত নভেম্বরে তারা দক্ষিণ ককেশাসে তুরস্ককে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক সুবিধা প্রণয়ন করে ও নাগর্নো-কারাবাখে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি জোরদার করে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে মুখোমুখি যুদ্ধের অবসান ঘটান। এটি শীতল যুদ্ধের পর থেকে এপর্যন্ত সবচেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক আলোড়ন তোলা চুক্তি।
তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যকার এই চুক্তি শক্ত শক্তির কৌশলগত ব্যবহার এবং একটি বহুমাত্রিক বিশ্বের বাস্তবতা সম্পর্কে বার্তা বহন করে। আমেরিকা একটি অত্যাধুনিক সামরিক বাহিনী থাকা সত্ত্বেও সিরিয়ার যুদ্ধে তার জড়িত হওয়ার অনীহা রাশিয়া এবং তুরস্ককে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটির দায়িত্বে আবদ্ধ করে। রাশিয়ান ইন্টরন্যাশনাল এফেয়ার্স কাউন্সিলের প্রধান আন্দ্রে কর্তুনভ বলেছেন, ‘তারা উভয়ই বোঝেন যে এখানে শক্তির ভারসাম্য নয়, বরং তা ব্যবহারের প্রস্তুতিটি গুরুত্বপূর্ণ।’
কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে বৈরি এই দুই দেশের সম্পর্কটি কিভাবে বদলে গেল? এর উত্তর খুঁজতে ফিরে যেতে হবে ২০১৬ সালের গ্রীষ্মে। সেবছর তুরস্কে এরদোগানের বিরুদ্ধে এক অবৈধ অভ্যুত্থানে প্রায় ২ শ’ জন নিহত হয়। সেমসয় বেশিরভাগ পশ্চিমা নেতারা প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় নিলেও হয়েছিলেন পুতিন তাৎক্ষণিকভাবে ফোন করেন এবং তুর্কি প্রেসিডেন্টকে সমবেদনা জানান। তুরস্কের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘লোকটিকে পছন্দ হোক বা না হোক, তিনি সংহতি জানানোর মতো যথেষ্ট বিচক্ষণ ছিলেন।’
এরপর এরদোগান রাশিয়া ভ্রমণ করেছেন, সেখানে তিনি গ্যাস-পাইপলাইন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং দক্ষিণ তুরস্কে রাশিয়ার পারমাণবিক কেন্দ্রের কাজ পুনরায় শুরু করতে সম্মত হয়েছেন। ইস্তাম্বুলের মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাশিয়া বিশেষজ্ঞ এমের এরসেন বলেছেন, ‘ন্যাটো তুরস্কের পাশে না দাড়ানোয় তুরস্ক বুঝতে পেরেছিল যে, সিরিয়ার তার স্বার্থ নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় রাশিয়ার সাথে চুক্তি। সেই চুক্তি এখনও বহাল রয়েছে।’


২০১৬ সাল থেকে এরদোগান পুতিনের সাথে অন্য নেতাদের থেকে বেশি মুখোমুখি বৈঠক করেছেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তুরস্কের প্রতিপক্ষ রাশিয়া হয়ে উঠেছে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তুরস্ক কেবলমাত্র রাশিয়ার সম্মতিতে উত্তর সিরিয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে, রাশিয়ান বার্তাসংস্থাগুলি তুরস্কে জায়গা করে নিয়েছে। এরদোগানের অভ্যন্তরীণ গন্ডিতে এখন ‘ইউরেশিয়াবাদী’ একটি দল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যারা রাশিয়া এবং চীনকে সহযোগিতা করার জন্য উন্মুক্ত এবং ইউরোপ এবং ন্যাটোর বিষয়ে বৈরী।
পুতিন অঞ্চলটিতে মধ্যস্থতাকারী ও শান্তিরক্ষীর ভূমিকায় আবির্ভূত হতে সক্ষম হয়েছেন। তুরস্ক এঅঞ্চলে প্রতিপত্তি অর্জন করেছে এবং আর্মেনিয়া হয়ে বাকুতে পরিবহণ করিডোরের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, যা চীনের বেল্ট এবং রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ হতে পারে। এখানে পশ্চিমাদের কিছুই অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তুরস্ককে রাশিয়ার সাথে আবদ্ধ করার ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও বিনিয়োগও ভূমিকা রেখেছে। রাশিয়ার সাথে তুরস্কের ১৩.৪ বিলিয়ন ডলার বানিজ্য ঘাটতি রয়েছে। তবে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের সমাপ্ত প্রকল্পগুলি নিয়ে তুরস্কের ঠিকাদারদের জন্য রাশিয়া ছিল শীর্ষস্থানীয় বাজার। পুতিনের জন্য এটি একটি নতুন বহুমাত্রিক আধিপত্যের প্রদর্শনী এবং আমেরিকার আধিপত্যকে সীমাবদ্ধ করার প্রয়াস।
তুরস্ক এবং রাশিয়া ইউরোপ থেকে বাদ পড়ার কারণে একই ধরনের তিক্ততা পোষণ করে। তুরস্ক-ইউক্রেনের অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও জোরদার হওয়ার এটি অন্যতম কারণ। ২০১৯ সালে তুরস্ক ইউক্রেনকে তার আধ ডজন যুদ্ধবিমান বিক্রি করেছে, যা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য এই প্রথম ক্রয়। বর্তমানে তুরস্ক ক্রমশ পশ্চিমা জোট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া একটি দেশ। তবে রাশিয়ার সাথে এর অংশীদারিত্ব একই সাথে ভাতৃত্বপূর্ণ এবং বিপরীতমুখী। এরসেন বলেছেন, ‘রাশিয়া এবং তুরস্ক যেখানে সম্ভব সেখানে ঐকমত্যের জায়গা খুঁজবে, তবে বিশেষত কৃষ্ণসাগর এবং ককেশাস, যেখানে রাশিয়ার চেয়ে তুরস্কের অবস্থান পশ্চিমা দেশগুলির আরও নিকটবর্তী, সেখানে তাদের স্বার্থের ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা হবে।
তবে বিশ^ রাজনীতির রূপরেখা পরিবর্তনকারী তুরস্ক ও রাশিয়ার জোট ঠেকাতে পশ্চিমাদের সাথে তুরস্ককের দূরত্ব নিরসন এবং দেশটিকে পুতিনের বাহুমুক্ত করাকে অগ্রাধিকারে রেখেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সূত্র: দ্য ইকোনোমিস্ট, ইন্টারনেট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Ahsanul Moyeen ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৪৬ এএম says : 0
Right.
Total Reply(0)
Oliul Haque Oli ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫৩ এএম says : 0
Very good.
Total Reply(0)
বুলবুল আহমেদ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫৫ এএম says : 0
নিজেদের প্রয়োজনে এটা এখন উভয়েরই দরকার
Total Reply(0)
হাবীব ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫৫ এএম says : 0
দুই দেশের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো
Total Reply(0)
জুয়েল ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫৭ এএম says : 0
পাশাপাশি এরদোগানের উচিত মুসলিম বিশ্বকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া
Total Reply(0)
Mehedi Hasan Munna ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:৩৭ এএম says : 0
সমসাময়িক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই মেরুকরণ প্রয়োজন আছে।
Total Reply(0)
Shafiqul+Islam ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:৫৮ এএম says : 0
জনাব জুয়েল ও মেহেদি হাসান মুন্না’র মতামতের সাথে সহমত পোষণ করছি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন