শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় আজিজ কো-অপারেটিভ

হাইকোর্টের সময় নষ্ট করায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

অযথা সময় নষ্ট করায় এবার ‘আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লি:’কে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ওই বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক জানান, আজিজ কো-অপারেটিভ সোসাইটি মামলা পরিচালনা করছে না। বারবার তারিখ নিয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অযথা আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। সমবায় সমিতি আইনে লাইসেন্স নিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ কার্যক্রমের কারণে সমবায় নিবন্ধন অধিদফতর আজিজ কো-অপারেটিভের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

সরকারের এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা আজিজ কো-অপারেটিভ। মামলা করেও তারিখের পর তারিখ নিয়ে মামলার নিষ্পত্তি বিলম্বিত করছে। এতে আদালতের মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে হাইকোর্ট আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইনান্স ক্রেডিট সোসাইটি লি:কে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার এ টাকা আগামী তিন মাসের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।

এদিকে সমবায় অধিদফতর সূত্র জানায়, কো-অপারেটিভ সোসাইটি আইনে নিবন্ধন নিয়ে ব্যাংকিং আইনে কার্যক্রম চালাচ্ছে আজিজ কো-অপারেটিভ সোসাইটি। বেআইনি ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের ৩০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম হাতিয়ে নেয়া অর্থের একটি বড় অংশ (১০০ কোটি টাকার বেশি) পাচার করেছেন কানাডায়। সেখানে তার দুই ছেলে বসবাস করেন।

১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গ্রাহকদের মামলা রয়েছে তাজুল ইসলাম ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। গ্রাহককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের মামলায় ২০১৯ সালে গ্রেফতার হন আজিজ কো-অপারেটিভের তৎকালিন চেয়ারম্যান। এছাড়া মানি লন্ডারিং আইনেও একটি মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।
সিআইডি সূত্র জানায়, সমবায় সমিতি আইনে নিবন্ধন নিয়ে ‘আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড’ ১৯৮৪ সালে কার্যক্রম শুরু করে। শুরুতে সমবায় আইনে কার্যক্রম চালায় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানির মতো কার্যক্রম শুরু করে। স্বল্প বিনিয়োগে অধিক মুনাফা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে ‘ডিপোজিট’ নিতে শুরু করে। বাংলাদেশের ব্যাংকে কোনো সিকিউরিটি না রেখে গ্রাহকদের সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেনে লিপ্ত হয়। ১২ শতাংশ সুদ ও ১৮ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদানের কথা বলে ১৬০টি শাখার মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন মেয়াদী আমানত গ্রহণ করে।

মেয়াদ শেষ হলে গ্রাহক গচ্ছিত টাকা ফেরত চাইলে- আজ নয়-কাল, দেবো-দিচ্ছি করা হয়। গ্রাহক না মানলে তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। ব্যাংকের নামে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে এভাবে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় আজিজ কো-অপারেটিভ।
নিজেদের দাবি করতে থাকে ‘ব্যাংক’ হিসেবে। যদিও ব্যাংক হিসেবে এটির কোনো স্বীকৃতি নেই। কিন্তু নামের শেষে ‘ব্যাংক’ শব্দটি ব্যবহার করে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ৩০০ কোটি টাকা। এ অর্থ প্রতিষ্ঠানটির সে সময়কার চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলামের ৫০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়।

পরে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা অনলাইনে স্থানান্তর করা হয় তাজুল ইসলামের স্ত্রী আফরোজা পারভীন, কানাডা প্রবাসী ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম তানভীর, তানভীর পরিচালিত ‘সাউদি-বাংলা প্রপার্টিস লি:’ ‘তানভীর এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘তানভীর অটো ব্রিকস লিমিটেড’র অ্যাকাউন্টে। তাজুল নিজেও কানাডার গ্রিন কার্ডধারী। হাতিয়ে নেয়া অর্থের কিছু অংশ দিয়ে চেয়ারম্যান দেশের বিভিন্ন এলাকায় মার্কেট ও জমি ‘ক্রয়’ দেখান। সমিতির নামে কেনা একই সম্পত্তি ১১ হাজার ৪২৫ জন গ্রাহককে ‘তাদের সম্পত্তি’ বলে প্রবোধ দেয়া হয়।

আজিজ কো-অপারেটিভ সোসাইটির অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রমের বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে উঠে এলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠি দিয়ে সমবায় অধিদফতরকে ২০০১ সালে জানায় যে, আজিজ কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামের শেষে যেন ‘ব্যাংক’ শব্দটি ব্যবহার না করে। ওই চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে সমবায় অধিদফতর আজিজ কো-অপারেটিভকে কয়েক দফা চিঠি দেয়। কিন্তু হাইকোর্টে রিট করে সমবায় অধিদফতরের চিঠির কার্যকরিতার ওপর স্থগিতাদেশ নেয়। যথারীতি নামের শেষে ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার অব্যাহত রাখে।

সূত্রমতে, তাজুল ইসলাম ১৯৮৪ সাল থেকে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। নানা অনিয়মের দায়ের চাকরিচ্যুত হয়ে ২০০২ সালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে এমএলএম ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৫ সালে যুক্ত হন আজিজ কো-অপারেটিভ সোসাইটির সঙ্গে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পদে আসীন হয়েই সমবায় সমিতিটিকে এমএলএম কায়দায় পরিচালনা শুরু করেন। অধিক মুনাফার প্রলোভনে গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার আমানত গ্রহণ করতে থাকেন।

সমবায় অধিদফতর থেকে প্রতিষ্ঠানটির ২৬টি শাখার অনুমোদন থাকলেও সারা দেশে ১৬০টি শাখার মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ শুরু করেন। তিনি ৮০টি শাখায় ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। তারা নিজেরাও প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করেন। এ অভিযোগে ২০১৭ সালে তাজুল ইসলামসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির তৎকালিন ৩১ জন সদস্যকে সমবায় অধিদফতর ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
মমতাজ আহমেদ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:১৫ এএম says : 0
প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত
Total Reply(0)
আবুবকর ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ২:৫৬ পিএম says : 0
আমার কাচ থেকেও টাকা নিয়ে চে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন