শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করার সুদুরপ্রসারী চক্রান্তেরই অংশ ছিল পিলখানা হত্যাকান্ড : রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৫৭ পিএম

ছবি: মতিউর সেন্টু।


পিলখানা হত্যাকাণ্ড দেশের গৌরব ও মর্যাদার প্রতীক সেনাবাহিনীর জন্য একটি বিপর্যয়ের দিনই নয়, বরং তাদের জন্য ছিল এটি একটি অশুভ বার্তাও বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার অপরাজেয় জীবনীশক্তির আধার সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করার এক সুদুরপ্রসারী চক্রান্তেরই অংশ ছিল পিলখানা হত্যাকান্ড।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ পিলখানা হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহতম একটি কালো দিন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী খোদ রাজধানী ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত হয় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ। পৈশাচিক পিলখানা হত্যাযজ্ঞে শোচনীয় অসহায়ভাবে জীবনদানকারী ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকষ সামরিক অফিসারসহ ৭৪ জন নিরপরাধ মানুষের নির্মম হত্যার দিন। তাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের ওপর বর্বর অত্যাচারের দিন। এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য এক ঘন অন্ধকারতম অধ্যায়। এই বেদনাদায়ক ঘটনায় আমরা সকলেই মুহ্যমান ও শোকে ভারাক্রান্ত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে পঙ্গু করতেই পিলখানায় সুক্ষ্ম কৌশলে বেছে বেছে দক্ষ ও দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের এক সাথে করে হত্যাকান্ড চালানো হয়। দুনিয়ার কোনো যুদ্ধে এক সাথে এতো সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার নজির নেই। ২৫ ফেব্রুয়ারির সেনা হত্যাযজ্ঞ ছিল আমাদের সেনাবাহিনীর শৌর্য, শক্তি ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার একটি ভিনদেশী মাষ্টারপ্ল্যান। এই ঘটনায় দেশীয় তাবেদার’রা মীর জাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল।
তবে এটাই প্রথম নয়, সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৫ থেকেই। সেই সময় ক্যান্টনমেন্টে সুপরিকল্পিতভাবেই বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়া হয়েছিল। ৭৫ সালের ৬ নভেম্বর দিনে ও রাতে বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সেই সময় রুখে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। ৭ নভেম্বর, সিপাহী জনতা সম্মিলিত বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে উল্টো পথে নেয়ার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছিলো। জিয়াউর রহমান সেই বিপ্লবের মহানায়ক হিসেবে ইতিহাসের উজ্জল আলোয় আপন স্থান করে নিয়েছেন। ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত সেই অপশক্তি সেদিন ব্যর্থ হলেও পুনরায় চক্রান্তের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে তারা ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সফল হয়। এরপরই ২০০৯ সালের ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারী ঘটে চক্রান্তকারীদের চূড়ান্ত পরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ। নিহত হন অসংখ্য সেনা সদস্য।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও জবাব মেলেনি এ হত্যাকান্ড সম্পর্কিত অনেক প্রশ্নের। গত ১২ বছর যাবত প্রতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারী সেনা হত্যাযজ্ঞের দিনটি কিছু সাধারণ কর্মসূচির মাধ্যমে পার হয়ে যায়। এই হত্যাকাণ্ডের যে তদন্তগুলো হয়েছিল, এর পূর্ণাঙ্গ কোনো তদন্ত এখনো জাতির সামনে প্রকাশ করা হয়নি। বিশেষ করে সেনাবাহিনী যে তদন্ত করেছিল, সেই তদন্ত এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ফলে, স্বাভাবিকভাবে জাতির সামনে প্রশ্ন থেকেই গেছে এই ভয়াবহ রক্তাক্ত ঘটনার পেছনে মূল কারা ছিল, পরিকল্পনাকারী কারা ছিল, কারা লাভবান হয়েছে ? এগুলো রহস্যজনকভাবেই উদঘাটন করা হয়নি। পূর্ব পরিকল্পিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেকের সাজা হয়েছে, আবার অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের অনেকের জড়িত থাকার কথা শোনা গেলেও সেগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি এখনও রহস্যের কুয়াশায় ঢাকা। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে-এই মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের ঘটনার পর্দার পেছনের কুচক্রীরা অধরাই থেকে গেছে।
পিলখানা সেনা হত্যাকান্ডে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন অপরাধপ্রবণ একটি দল আওয়ামী লীগ। এরা মসনদ আঁকড়ে রাখার জন্য প্রয়োজনে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে দ্বিধা করে না। এদের একমাত্র সাধনা ক্ষমতা লাভের আগে অথবা পরে কোন সময়েই তারা ন্যায়নীতির নির্দেশ গ্রাহ্য করে না। পিলখানার রক্তক্ষয়ী ঘটনার পর থেকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব খর্ব হয়ে এসেছে। উদ্দেশ্য-সচেতনভাবেই পিলখানার সেনা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। আঁটঘাট বেঁধেই ষড়যন্ত্রকারীরা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত করে পুনর্বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলেও জানান দলটির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা। তিনি বলেন, তখন ঘটনার নেপথ্যের নায়করা রেহায় পাবেন না। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখান সদর দফতরে সেনা হত্যা দিবসটিকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষনার দাবি করছে। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হলে ২৫ ফেব্রুয়ারীকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষনা করবে।
খুলনায় বিএনপি নেতাদের হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য খুলনায় বিএনপি’র মেয়র প্রার্থীদের সমাবেশের প্রস্তুতির প্রাক্কালে ব্যাপকভাবে খুলনা মহানগরীতে পুলিশী হামলা ও হয়রানী শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে যুবদল নেতা সুমন, সিরাজুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, খায়রুজ্জামান টুকু, হারুন মোল্লা, বিএনপি নেতা শাহজাহান শেখ, জাহিদুল ইসলাম, তাঁতী দল নেতা মাসুম, ছাত্রদল নেতা শামীম আশরাফ, আসাদুজ্জামান আসাদ, বাবুলসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি পুলিশী হামলা ও নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পটুয়াখালী জেলাধীন দশমিনায় স্থানীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো শেষে ফেরার পথে বানোয়াট অভিযোগে বিএনপি নেতা মোঃ আলীম তালুকদার এবং মোঃ ফখরুজ্জামান ওরফে বাদলসহ ২০/২৫ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে আহত করেছে। মহান ২১ ফেব্রুয়ারীর পবিত্র দিনেও পুলিশ কর্তৃক বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে এই মামলা দায়ের ও হামলা চালানোর ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।
এছাড়া কক্সবাজার জেলাধীন পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইকবাল হোছাইনকে রাজাখালী ইউনিয়ন বিএনপির ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করে বাডিতে ফেরার পথে রাতের অন্ধকারে অতর্কিত হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আমি এই কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। গুরুতর আহত ইকবাল হোছাইনের আশু সুস্থতা কামনা করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন