বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রশ্নবিদ্ধ সঠিক সময়ে চালু

তহবিল সঙ্কটে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প : চায়না রেলওয়ে গ্রুপের অভিযোগ অস্বীকার রেলমন্ত্রীর

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে (পিবিআরএলপি) তহবিল সংকট দেখা দিয়েছে বলে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে। গত বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি এ তথ্য জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার একই দিনে পদ্মা সেতু এবং এর রেলপথ উদ্বোধন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তহবিল সংকট গোটা প্রকল্পটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থের অপর্যাপ্ততাকে কেন্দ্র করে প্রকল্পটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) এখন সঠিক সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে বিপর্যয়ের সম্মুখীন। এতে করে প্রশ্ন উঠেছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প সময়মতো শেষ হবে কি না? ২০১৮ সালে শুরু হয় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। ২০২৪ সালে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তহবিল সঙ্কটে প্রকল্পের কাজ থামকে যাওয়ায় তা ২০২৫ সালেও শেষ হয় কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

এদিকে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তহবিল সঙ্কটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। গতকাল বৃহস্পতিবার রেলভবনে এক অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যে সোর্স থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে এই ধরনের কোন চিঠি তারা পাঠায়নি বলে আমাকে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। রেলমন্ত্রী বলেন, পদ্মা রেল লিংক প্রকল্প ২০১৮ সালে শুরু হয়। এখানে আমাদের কনসালটেন্ট, আমাদের প্রকল্প পরিচালক তারা এই বিষয়গুলো দেখেন। এখানে প্রত্যেকটি কাজের জন্য আলাদাভাবে ঠিকাদারকে টাকা দেওয়া হয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল দিয়েছে। যারা বিল পান নাই, তারা পেয়ে যাবেন। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রকল্পটি আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত চলবে। সুতরাং যে কথাগুলো তারা বলছে যুক্তিসঙ্গতভাবে সেগুলো ঠিক না। আর এই সব পত্র পত্রিকাতেও বলার কিছু নেই। এই বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, এই বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টরা জবাব দিতে পারবেন। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বলেছে এই ধরনের চিঠি তারা পাঠায়নি।

চায়রা রেলওয়ে গ্রæপ লিমিটেড (সিআরইসি) প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালের জুন মাসের শেষ দিকে তারা কাজ শুরুর ক্ষেত্রে প্রাথমিক পেমেন্ট (মোবিলাইজেশন পেমেন্ট) পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে গত সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত তারা আর কোনো অর্থছাড় পায়নি। এ দীর্ঘ সময়ে প্রকল্পের গতি সচল রাখার জন্য সিআরইসি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বৃহৎ অঙ্কের ঋণ নেয়।
সিআরইসি জানিয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক প্রতিটি অর্ন্তবর্তীকালীন পেমেন্ট (আইপি) সম্পন্ন করতে তাদের প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি সময় লেগেছে। উদাহরণস্বরূপ তারা জানায়, সিআরইসি ২০২০ সালের জুন-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের প্রকল্প ব্যয়ের জন্য আইপি সেভেন জমা দেয় ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্যয়ের বৈদেশিক অংশের নিষ্পত্তি প্রসঙ্গে চীন এক্সিম ব্যাংককে নির্দেশনা দিতে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কালক্ষেপণ করে। অন্যদিকে প্রকল্পের দেশীয় ব্যয়ের অংশটুকুও বাংলাদেশ রেলওয়ের যথাযথ পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে আটকে রয়েছে। স্থানীয় ব্যয়ের নিষ্পত্তির পূর্বে চীন এক্সিম ব্যাংক যেহেতু বৈদেশিক অংশের নিষ্পত্তির করবে না, তাই ১১৫ দিনেরও বেশি অতিবাহিত হওয়া সত্তে¡ও সিআরইসি আইপিসেভেনের জন্য কোনো অর্থ পায়নি। সিআরইসি দাবি করেছে যে, তারা শুধু ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সম্পাদিত কাজের জন্য টাকা পেয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে ব্যয়িত অর্থের জোগান প্রসঙ্গে এখনও অত্যন্ত ঢিমেতালে কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বকেয়া মোট অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি মার্কিন ডলারে ঠেকেছে। এমতাবস্থায়, প্রকল্পের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী কেনা এবং সাবকন্ট্রাক্টর ও সাপ্লায়ারদের সময়মতো তাদের পাওনা পরিশোধ করা সিআরইসি’র জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলস্বরূপ, প্রকল্প বাস্তবায়নের গতিও কমে এসেছে এবং ব্যয়ের পরিমাণও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সিআরইসির মতে, গত বছরের জুলাইয়ের মধ্যে তাদের ১০০ কোচ সরবরাহের কথা থাকলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে এখনও পর্যন্ত কোচগুলো নির্মাণের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। সিআরইসির পক্ষ থেকে একাধিকবার বাংলাদেশ রেলওয়েকে জানানো হয়েছে যে, এই কোচগুলো নির্মিত ও হস্তান্তর হতে দুই বছর সময় লাগবে। কোভিড-১৯ মহামারির কঠিন সময়ের মধ্য দিয়েও সিআরইসি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ যথাসম্ভব নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু এ জন্য সম্পৃক্ত প্রতিটি অংশীদারের পক্ষ থেকে যথাযথ সহযোগিতা কাম্য।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
রোদেলা ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:১৮ এএম says : 0
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ না করে দ্রুত কাজ শেষ করার ব্যবস্থা করুন।
Total Reply(0)
মমতাজ আহমেদ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:১৮ এএম says : 0
আবারও প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর পায়তারা
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন