তিনশ’ আসনে গাদাগাদি করে থাকে এক হাজার ছাত্রী
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে
তীব্র মাত্রায় আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে। চাহিদার চেয়ে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় হোস্টেলের প্রতিটি কক্ষেই ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ছাত্রী অবস্থান করছে। ফলে পড়ালেখা ও থাকা নিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ছাত্রীরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের জায়গা করে দিতে হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে যে দুইটি হোস্টেল রয়েছে এগুলোর ভেতর বাইরের অবস্থা নান্দনিক হলেও আসন অপ্রতুলতার কারণে ছাত্রীদের থাকতে হচ্ছে গাদাগাদি করে। কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর এলাকায় মনোরম পরিবেশে ৫ একর জমির ওপর ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারি মহিলা কলেজ। বর্তমানে প্রায় আট হাজার ছাত্রী এ কলেজে লেখাপড়া করছে। কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে হজরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রা.) ও নওয়াব হোচ্ছাম হায়দার নামে দুটি হোস্টেল (ছাত্রীনিবাস) রয়েছে। কুমিল্লার ইতিহাস ঐতিহ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম ধারণ করে হোস্টেল দুইটির বিভিন্ন কক্ষের নামকরণের মধ্যে রয়েছে সমতট, কমলাঙ্ক, রোহিতগিরি, কোটবাড়ি, মুন্সেফবাড়ি, নবাববাড়ি, আদালতপাড়া, গোমতি, সোনাইছড়ি, রোহিতা, কোদালিয়া, কাকড়ি, ডাকাতিয়া, আর্যভাটিয়া, মেরিকোরি, তেরেশকোভা ও তথ্য প্রযুক্তিতে ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করতে ডব্লিও ডব্লিও ডব্লিও ডট কম এবং নবাব ফয়েজুন্নেসার রচিত গ্রন্থ রূপজালালের নামেও কক্ষ রয়েছে। আবার টিনসেড হোস্টেল ভবনের সাতটি কক্ষের নাম রাখা হয়েছে তোমার আমার, ঠিকানা, পদ্মা, মেঘনা, যুমনা, জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। হোস্টেল দুইটির এসব কক্ষে নির্ধারিত আসন রয়েছে ৩০০টি। কিন্তু থাকতে হচ্ছে এক হাজার মেয়েকে। গাদাগাদি করে ঘুমানো, লেখাপড়া করা সবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সীমিত আসনের কারণে। একটি কক্ষে কোনরকমে ৬জন থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বাধ্য হয়ে কমপক্ষে ১২জন থাকতে হচ্ছে। আবার যারা হোস্টেলে আসন পায় না এরকম আরও এক/দেড় হাজার ছাত্রীকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে বাসা নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হচ্ছে। হোস্টেল দুইটির সুপারের দায়িত্বে রয়েছেন কলেজ শিক্ষক মো. আজহারুল হক ও মো. আবদুল মালেক এবং হোস্টেল ছাত্রীদের কাউন্সিলিং ও গাইডিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন শিক্ষক তাওহিদা আক্তার। আবাসন সমস্যা বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষের সাজেদা আক্তার, ডিগ্রি পাসের তাসলিমা আক্তার, একাদশ শ্রেণির সাবিনা আক্তার ও সালমা আক্তার জানায়, ‘একটি কক্ষে খুব কষ্ট করে ১০/১২জন একসাথে থাকতে হয়। ফ্লোরে ঘুমোতে হয়। পড়তে হয়। বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকাটা যেমন ব্যয়বহুল তেমনি নিরাপত্তাহীনতাও জড়িয়ে রয়েছে। তাই কষ্ট করে হোস্টেলে থাকতে হচ্ছে। নতুন হোস্টেল ভবন খুব বেশি প্রয়োজন।’ কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর এএসএম আবদুল ওহাব বলেন, ‘আবাসন সমস্যার মধ্যেও আমাদের মেয়েরা পড়ালেখায় অনেক মনোযোগী। তারা সংস্কৃতিমনা। হোস্টেলের কোন মেয়েই জঙ্গি বা সন্দেহজনক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নয়। ক্লাশে এবং কলেজের সকল অনুষ্ঠানে তাদের সরব উপস্থিতি রয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের তীক্ষè নজরদারি রয়েছে হোস্টেলের মেয়েরদের উপর। নিরাপদ ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় দূর-দূরান্তের অভিভাবকরা তাদের মেয়েকে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তির জন্য বেশি আগ্রহী থাকেন। প্রতিবছর দূর-দূরান্তের ছাত্রী সংখ্যা বাড়লেও দুইটি হোস্টেলে চাহিদা অনুযায়ি আসন দেয়া সম্ভব হয় না। কুমিল্লা সদর আসনের এমপি হাজী আকম বাহাউদ্দিন বাহারের আন্তরিকতায় কলেজের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ছাত্রীদের আবাসন সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এ অবস্থায় কমপক্ষে আরও দুইটি হোস্টেল অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।’ কলেজ উপাধ্যক্ষ প্রফেসর সৈয়দা বিলকিস আরা বলেন, ‘হোস্টেলের প্রতিটি কক্ষেই ধারণ ক্ষমতার তিন/চারগুণ বেশি ছাত্রী থাকছে। তাদের নানা সমস্যা হয়ে থাকে। নতুন হোস্টেল ভবন করা যেতে পারলে আবাসন সমস্যার অনেকটা সমাধান হতো।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন